মুখ সামলে কথা বলুন, জনাব স্বাস্থ্যমন্ত্রী

খালেদ মুহিউদ্দীন : আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষিত। অবশ্যই ভালো ছাত্র। আগেরবার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, প্রমোশন পেয়ে ফুল৷ কিন্তু এই ফুলমন্ত্রী যে আমাদের foo। বানিয়ে ছাড়বেন তা ভাবতে পেরেছিল কে?

এমনিতেই ডেঙ্গু নিয়ে আমরা জেরবার। একদিকে ডাক্তাররা বলছেন, অবহেলা না করে তাদের কাছে যেতে। এবারের ডেঙ্গু মারাত্মক! কিন্তু হাসপাতালে আমাদের থাকার জায়গা নেই। তাই চরম আতঙ্কে সময় কাটছে আমাদের। গতবার পর্যন্ত আমরা জেনেছিলাম, ডেঙ্গুতে ভয়ের কিছু নেই। ডেঙ্গুর কোনো ওষুধও যেহেতু নেই তাই ঘরে থেকে প্রচুর তরল খেয়ে ভালো হয়ে উঠার একটা চেষ্টা দিয়েছি আমরা। এবার মনে হচ্ছে, আমরা তো বটেই ডাক্তাররাও ঘাবড়ে গেছেন।

নইলে ভাবতে পারেন, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে হঠাৎ করে কেন এত ডেঙ্গু রোগী? একটি সিম্পল উত্তর আমার পক্ষ থেকে, সেটা হলো মশা বেশি, এডিস মশা বেশি৷ সে মশাগুলি অনেক হেলদি মশা এবং সে মশাগুলি অনেক সফিস্টিকেটেড মশা। তারা শহরে, বাড়িতে থাকে- এটিই উত্তর৷ যেহেতু প্রডাকশন বেশি… মশা বাড়তেছে।

সামহাউ উই কুড নট ম্যানেজ কন্ট্রোল দা মসকুইটো পপুলেশন। যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন বাড়ে.. আমাদের দেশে এসে সেভাবে মসকিটু পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে। .. প্রডাকশন যদি কম হতো, এডিস মশা কম হতো৷ মানুষ আক্রান্ত মশার কামড় কম খেত, ডেঙ্গু কম হতো।’’

বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম থেকে পুরো অনুচ্ছেদটিই তুলে দিলাম। পাঠক আসুন আবার পড়ি।

মশা বেশি, এডিস মশা বেশি, তাই ডেঙ্গু বেশি৷ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই সিম্পল উত্তর আমরা পেলাম। মাননীয় মন্ত্রী আপনার এই সিম্পল উত্তর আমাদের জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়েছে। আমরা এতোদিন এই ভ্রান্তির বেড়াজালে ছিলাম যে, মশা বেশি আমরা জানতাম না, এটাও জানতাম না যে, বেশি মশা থাকলে এডিস মশা থাকে। আর এটা জানার কোনো উপায় আমাদের ছিল না যে, হেলদি এডিস মশার প্রডাকশন বেশি।

মাননীয় মন্ত্রী তাঁর এই সিম্পল উত্তরে আরও জানালেন, মশা বাড়ছে আমাদের দেশে আসা রোহিঙ্গা পপুলেশনের মতো। সিরিয়াসলি মাননীয় মন্ত্রী! প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা আশ্রিত এইসব মানুষের জন্ম আপনার কাছে ‘সামহাউ উই কুড নট ম্যানেজ’?

আমার মনে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভেবেছেন, রোহিঙ্গাদের মর্যাদা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ডেঙ্গু মশার থেকেও কম। আমার কিন্তু মনে হয় মানুষ অন্য মানুষের কাছে সব সময় মানবিক অন্তত তাঁর কাছে যতদূর মানবিক মনে হয় ততদূর মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে। তা সে অন্য দলের, ভিন্ন মতের বা আরেক দেশের মানুষ হোন না কেন?

অবশ্য এটিও অসম্ভব নয় যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথাটি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। তিনি এভাবে তা বলতে চাননি। এটিও যদি সত্যি হয় তবে বলতেই হয়, জনাব স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপনার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান আর ভবিষ্যতে মুখ সামলে কথা বলবেন।

 

 

লেখকঃ খালেদ মুহিউদ্দীন

প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button