অল্প বৃষ্টিতেও কেন ডুবে যায় ঢাকা?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : এবছর জুন-জুলাই মাসে ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতই হয়েছে। বরং চলতি বছরের জুন মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল গত বছরের তুলনায় কম।

সাধারণভাবে ৪০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি না হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখন সাধারণ বৃষ্টিতেই ডুবে যায় দেড় কোটির বেশি মানুষের ঢাকা শহর। সৃষ্টি হয় ভোগান্তির। কী এর কারণ?

গত ১২ জুলাই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা। নিচু এলাকাতো বটেই বঙ্গবভন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকাও চলে যায় পানির নিচে।

আবাহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ওইদিন ঢাকায় ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৮১ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতের ফলে তৈরি হওয়া এ জলাবদ্ধতা ছয়-সাত ঘন্টা স্থায়ী হয়ছিল। তবে ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় নগরবাসী পানিবন্দি হয়ে ঘরে কাটিয়েছেন। কিন্তু নগরবাসী ঘরে থাকলেও পানিতো তার স্বভাব-ধর্মে ঢুকে পড়ে বাড়ি ঘরেও। বাংলামটর, শান্তিনগর, ইস্কাটন, মগবাজার, কারওয়ান বাজারের মত এলাকায় অনেক বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। আর মিরপুরেতো কথাই নেই। মোহাম্মদপুর এলাকেতেও একই অবস্থা। ঢাকা শহরের নিচু এলাকাগুলো যেমন, রামপুরা, বাড্ডার মত এলাকাতো বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার শিকার হয়। জুলাই মাসের ওই দিনই হয়েছিলো সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তার পরের দিন অর্থাৎ ১৩ জুলাই ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে জলজটে নগরবাসী দুর্ভোগে ছিলেন টানা দুই দিন।

অতীতের পর্যবেক্ষণ বলছে, সাধারণত ৪০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়না। ১২ জুলাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল তার দ্বিগুণ। আর পর পর দুই দিনে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪৭ মিলিমিটার।

তবে অতীতের এ পর্যবেক্ষণ আর মিলছে না। অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকায় এখন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

যদি শুক্রবারের (২৬ জুলাই) কথা ধরি তাহলে তার প্রমাণ মেলে। সোমবার ২৪ ঘন্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৩১ মিলিমিটার। এদিনও ছিল শুক্রবার। যে কারণে, দুর্ভোগ এড়িয়ে যেতে পেরেছেন নগরবাসীর অনেকেই। কিন্তু সাধারণ দুর্ভোগতো ছিলই। একইভাবে ৮ জুলাই, ১১ জুলাই ও ১৪ জুলাই ২০ থেকে ৩৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিতেও পানি জমে গিয়েছিল ঢাকার রাস্তায়।

ফলে একদিকে যেমন বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যায় অন্যদিকে রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। যে কারণে ঘরে-বাইরে দু’দিকেই নগরবাসীকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।

ঢাকায় এবার জুন মাসে মোট ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় কম। গতবছর জুন মাসে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০৮ মিলিমিটার। আর গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৫৭ মিলিমিটার। চলতি জুলাইয়ের ২৬ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘‘জুন-জুলাই মাসে এরমকই বৃষ্টিপাত হয়৷ আমাদের কাছে যে গড় রেকর্ড রয়েছে তাতে এটা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। তবে আমরা ঢাকায় বৃষ্টিপাতের হিসাব করি আগারগাঁও এলাকার হিসেবে। হয়তো ঢাকার অন্য এলাকায় এর চেয়ে কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।”

তাহলে প্রশ্ন হলো একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকায় কেন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়? আর এর জবাবে যা জানা গেল তার মূল কথা হলো, ঢাকার বৃষ্টির পানি সহজে সরতে পারেনা।

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘‘সামনে আরো বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ঘরে ঘরে পানি ঢুকবে৷কারণ উন্নয়নের নামে বিশেষ করে মেট্রোরেলের জন্য ঢাকা শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পানি সরতে পারছেনা। আবার ড্রেন যা আছে তাও কার্যকর নয়। বক্স কালভার্টের গভীরতা ছিলো নয় ফুট থেকে ১১ ফুট। এখন আছে দেড় ফুট থেকে দুই ফুট।”

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে ২৫ হাজার কি.মি. খোলা এবং চার হাজার কি.মি. ভূগর্ভস্থ ড্রেন আছে। ঢাকা ওয়াসার ৬৫ কিলোমিটার খোলা খাল ও বক্সকালভার্ট আছে। কিন্তু এসবের কিছুই তেমন কাজে আসেনা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাজধানীবাসীর বর্জ্য। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ছয় হাজার ১১০ টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

 

সূত্র: ডয়চে ভলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button