যানজটের ঢাকায় বৃষ্টি আতঙ্ক

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভাদ্রের একেবারে বিদায়লগ্নে শুক্রবার সারাদিনে মাত্র ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। এতেই কাঁদাপানির সঙ্গে যানজট মিলে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

ঢাকায় কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এ প্রশ্নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক ম. ইনামুল হক বলেন, ‘‘মেট্রোরেলের কারণে খোড়াখুড়ি হচ্ছে. এতে তো দুর্ভোগ বাড়ছে, কিন্তু ড্রেনগুলো যাদের পরিস্কার রাখার কথা তারা কি সেটা করছেন? আমার জবাব না। কারণ এখানে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণহীন। যাদের কাজ করার কথা, তারা সেটা না করেই বিল তুলে নিচ্ছেন। এগুলো দেখভালেরও যেন কেউ নেই।”

তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিন এ খান এমন ঢালাও মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, ‘‘রাজধানী কেন্দ্রিক মাত্র ৪০০ কিলোমিটার খালের দেখাশোনা করে ওয়াসা। আর তিন হাজার কিলোমিটার খালের দেখাশোনার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। ওয়াসা নিজের কাজটি ঠিকভাবেই করছে।”

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। আর শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৮ মিলিমিটার। অল্প বৃষ্টিতেই দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি। যদিও ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় বের হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তারপরেও অনেক জায়গায় জলজট আর যানজট মিলে একাকার হয়ে গেছে।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে এখন দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার থেকে বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ি, মৌসুমি বায়ু ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পেরিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এই বায়ুর একটি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘‘চাইলেই এই দুর্ভোগ কমানো সম্ভব কিন্তু সেই কাজটি করবে কে? মেট্রোরেল হচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তি আছে, সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, মেট্রোরেলের পাশের রাস্তাটি সব সময় সংস্কার করে ভালো রাখতে হবে। প্রয়োজনে পাশ দিয়ে বিকল্প ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। রাস্তা সংকুচিত হওয়ার কারণে যে দুর্ভোগ হওয়ার কথা সেটা মানুষ মেনে নেবে। কিন্তু ওই সংকুচিত রাস্তা কেন ভাঙাচোড়া থাকবে? সেটা তো এমন থাকার কথা না। আমি বহুবার দুই মেয়রের কাছে দৌঁড়েছি, শেষ পর্যন্ত উত্তরের মেয়রকে দিয়ে একটি কমিটি করাতে সমর্থ হয়েছি। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সেই কমিটির কথাও শোনে না। তাহলে তাদের বিল কেন দেওয়া হচ্ছে? এমনকি শীতকালে রাস্তায় পানি দেওয়ার জন্য আমাদের উচ্চ আদালতে যেতে হয়েছে।”

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ কি, সেই প্রশ্নে মোবাশ্বের বলেন, ‘‘অবশ্যই পথ আছে৷ আমাদের সরকার তো তাদের টাকা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সেবা পাচ্ছি না। আমি বলব, বিল আটকে দিন, মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। যে কাজগুলো তাদের করার কথা, সেগুলো তারা করবেন। না হলে আমাদের এর মধ্যেই চলতে হবে৷ আমাদের পাশের দেশ ভারতে যান, সেখানে পাতাল রেল, মেট্রোরেল একসঙ্গে হচ্ছে, কিন্তু সেখানকার মানুষ কি আমাদের মতো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে? একেবারেই না। তাহলে আমরা পারব না কেন?”

ম. ইনামুল হক বলেন, ‘‘মেট্রোরেল হবে, একটা না, প্রয়োজনে তিনটা হবে কিন্তু মানুষ এত দুর্ভোগে পড়বে কেন? সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সেটা পারছি না৷ এর প্রধান কারণ দুর্নীতি৷ এটা এতই নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়েছে যে, আমরা সবাই অসহায় হয়ে গেছি।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button