জানুয়ারিতে হচ্ছে না বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : তাবলীগের দুইপক্ষের বিপরীতমুখী দৃঢ় অবস্থান উত্তেজনার কারণে জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মাওলানা সা’দ বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের মতামত জানতে আগামী ১৫ জানুয়ারি উভয়পক্ষের মুরব্বী ও আলেমদের একটি প্রতিনিধিদল ভারত যাবে।

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস এ বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে না। দেওবন্দ থেকে ওই প্রতিনিধি দল আসার পর ইজতেমার (ফেব্রুয়ারির সুবিধামতো সময়ে) তারিখ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে বিশ্ব ইজতেমা এ বছর হবেই।

বৈঠক সূত্র জানায়, ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলীগের দুইপক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের লক্ষ্যে তাবলীগের মুরব্বীদের বৈঠকে ঢাকা হলেও একসঙ্গে উভয়পক্ষকে বসানো সম্ভব হয়নি।

হেফাজতপন্থী মাওলানা জুবায়ের ও তার সমর্থকরা মাওলানা সা’দের অনুসারীদের সঙ্গে বসতে আপত্তি জানান। তাই আলাদাভাবেই বৈঠক করতে হয়।

বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায়,

১। জানুয়ারিতে কোনো পক্ষের কোন ইজতেমা হবে না।

২। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল দেওবন্দ গিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসার পর ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হবে।

৩। কোনো মসজিদে তাবলীগের কাজে কোন বাধা কেউ দিতে পারবে না।

৪। নতুন ইজতেমার তারিখ পর্যন্ত উভয় পক্ষ কোন জোড়, ইজতেমা, সমাবেশ, পরামর্শ সভা, অথবা ওয়াজাহাতি জোড় করতে পারবে না।

২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার পর তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষ আলাদাভাবে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নিজামুদ্দীন মার্কাজপন্থী মাওলানা সাদের অনূসারীরা ১১, ১২, ও ১৩ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন। এর বিরোধিতা করে জানুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করে হেফাজতপন্থী মাওলানা জুবায়ের অনূসারীরা।

এ নিয়ে সারা বছরই উত্তেজনা থাকে। গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে এ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। তাবলিগের নিজামুদ্দীনপন্থী শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের পর ইজতেমার মত বড় আয়োজন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খেয়ে যাবে, তাই সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমা পেছানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

দেওবন্দ থেকে প্রতিনিধি দল আসার পর ফেব্রুয়ারিতে সুবিধামত সময়ে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

ইজতেমা কি একসঙ্গে হবে না আলাদা এ প্রসঙ্গে সা’দপন্থী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ‘যদি সম্ভব হয় তাহলে একসঙ্গেই করার চেষ্টা করছে সরকার, না হলে তো আলাদাই করতে হবে। কিন্তু তারা তো আমাদের সঙ্গে বসতেই আগ্রহী নয়।’

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মারকাজের বিরোধিতা করছেন পাকিস্তানের তাবলিগি নেতারা। তাই তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শুরা গঠন করে রাইভেন্ড মার্কাজ।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রধানকেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।

১১ জন শুরা সদস্যের মাঝে ছয়জন নিজামুদ্দীনের পক্ষে থাকলেও বাকি পাঁচজন আলমি শুরার পক্ষে অবস্থান নেন।

এ অংশের বিরোধিতায় বিগত বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি।

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপে আবারও উত্তেজনা

রাজধানীতে আবারও তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

সোমবার মোহাম্মদপুর থানার সাত মসজিদ এলাকায় এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার এসআই নয়ন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে তাবলিগের নিজামুদ্দীন অনূসারী মিজানুর রহমান জামিয়া রাহমানীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন সাত মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে মাদ্রাসা ছাত্ররা। পরে শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন সা’দপন্থী মিজানুর রহমান। তিনি সাত মসজিদের নিজামুদ্দীনের জিম্মাদার (নেতা)।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তাবলিগি সাথীরা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button