পূবাইলে বালু নদীতে ভাসমান ডিঙি নৌকায় গড়ে উঠেছে দেশি মদের কারখানা(ভিডিও)

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মহানগরের পূবাইলে বালু নদীর কয়েকটি স্পটে ভাসমান ডিঙি নৌকায় গড়ে উঠেছে দেশি বাংলা মদ তৈরির কারখানা।

পূবাইল থানার উজিরপুরা,ডিমাডি, ছিপলিয়া এবং কালীগঞ্জ থানার পশ্চিম সীমানার ধনুন ও পিপলিয়া গ্রামের বালু নদীতে ভাসমান অবস্থায় প্রতি রাতে তৈরি হচ্ছে দেশীয় বাংলা মদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলা মদ তৈরির ভাসমান কারখানার উৎপাদন বংশপরম্পরায় ২০-৩০ বছর ধরে চলে আসছে। যদিও এদের কয়েকজন এখন পরলোকে। তবু থেমে নেই তাদের মদ তৈরির কাজ। চলে আসছে তাদের চোলাই মদের ব্যবসা।

মদ তৈরি বন্ধে পূবাইলের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান উদ্দিন আহমেদসহ এলাকাবাসী চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারেনি।

ইদানীং মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে কিছুদিন গাঢাকা দেয়ার পর এখন পুরুদমে চলছে মদের উৎপাদন। দৈনিক ১ থেকে দেড় টন উৎপাদিত মদ বিভিন্ন স্পটে নিমিষে চলে যায়। ৬০০ টাকা লিটার হিসেবে যার বাজার পাইকারি মূল্য ৬ থেকে ৯ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। আর সূর্য উদয়ের আগেই দেশি মদ বিশেষ পলিথিন ব্যাগে চটের বস্তায় করে চলে যায় সড়ক ও নদীপথে টঙ্গী, কালীগঞ্জ, ঘোরাশাল, গাজীপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন মাদক স্পটে। মদ তৈরি করে ব্যবসায়ীরা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

এদের মধ্যে শাজাহান, মনা, দুলাল, মোশারফ ও মিন্টুর নাম উঠে এসেছে সবার আগে। এ ছাড়া নায়েব আলীর ছেলে মতি,আসমানির মেয়ের জামাই মিন্টু, জামাই হাবিব, রহিমের বাপ, রনির মা, বিল্লাল, মোল্লা, সিরাজ, রিনা ও বাবুল ফকিরসহ অনেকে।

দেশি মদ তৈরির সুখ্যাতির জন্য পূবাইলের ৪১নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া ও সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদফতরের পূবাইল ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রের পূর্ব দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মদ্যবাড়ি নামে একটি স্বতন্ত্র পাড়া গড়ে উঠেছে। যারা শুধু মদ,গাঁজা ও ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার ওপর জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। ওই মহল্লার নারী-পুরুষ অনেকের নামেই একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান- তারা নাকি ভালো হতে চায় কিন্তু প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নিয়মিত। আবার অনেক সময় লোক দেখানো আটক করা হয় কিন্তু ৩৪ ধারায় চালান দেয়া হয় যাতে একই দিনে মিলে জামিন।

মামলার ধারা কঠিন হলে জেল থেকে জামিনে ছাড়ানোর জন্য তাদের রয়েছে সদা প্রস্তত বিশেষ কিছু সংখ্যক আইনজীবী। ফলে বেশি দিন জেলে থাকতে হয় না তাদের। মদ তৈরির ব্যবসা বন্ধ করার জন্য এলাকার প্রতিবাদী অনেকেই প্রসাশনের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাননি এমনটি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই। প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে যান এ ভয়ে দেখেও না দেখার ভাণ করেন প্রতিবাদীরা।

নদীর তীরে পৌঁছতে মদ উৎপাদনকারীদের রয়েছে তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বেস্টনি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে মদ উৎপাদনকারীরা ব্যবহার করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ফলে অনেক সময় সাংবাদিক পুলিশ তাদের হাতে নাজেহাল হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। শুরুর প্রথমে নিজ নিজ বাড়িতেই দেশি মদ তৈরি হতো। কিন্ত মাঝেমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের অভিযান ও ধরপাকড়ের জন্য ডাঙা থেকে নিরাপদ দূরত্বে পানিতে গড়ে তুলেছে দেশি মদ তৈরির কারখানা।

সন্ধ্যা নামতেই বালু নদের মাঝখানে কালো পলিথিনে ঘেরা ডিঙি নৌকায় ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত চলে বিরতিহীন উৎপাদন। দৈনিক উৎপাদন হয় এক থেকে দেড় টন চোলাই মদ। পাইকারী ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয় প্রতি লিটার ৬-৭ শত টাকা। পালাক্রমে তিন চারটি ডিঙি নৌকায় চলে প্রতি রাতে উৎপাদন।

প্রায় ২০ জন স্থানীয় যুবক রাত চুক্তিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। দেশি মদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পচা আখের গুড় আর নেশাদলের মতো রাসায়নিক উপাদানসহ ঘুমের ওষুধ। জ্বাল দেয়ার জন্য কাঠের লাকড়ি। আগে পচা গুড় আসত পূবাইল বাজার থেকে এখন আসে সাভার বাজারের কতিপয় গুড়ের আড়ত থেকে নদীপথে। যা নাকি নদির তীরঘেঁষে পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয়।

আশপাশের অনেক ভদ্র পরিবার মানসম্মানের ভয়ে দূরে অন্যত্র পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছে। মদ্যপাড়ায় বসবাস করলে বিয়ের উপযুক্ত ছেলেমেয়ে ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিমাডি এলাকার স্থানীয় কয়েকজন জানান- আমরা সামাজিকভাবে অনেক চেষ্টা করেছি মদ উৎপাদন বন্ধ করতে কিন্ত তাদের হাত অনেক লম্বা তাই আমরা পারি না। নীরবে চোখ-কান বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই আমাদের।

স্থানীয় পূবাইল থানার ৪১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোমেন মিয়া বলেন, নির্বাচিত হয়েছি মাত্র দুই মাস। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি, কেউ কিছু বলেনি। তবে আমি বিষয়টি দেখব।

পূবাইল থানার ওসি নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা খুবই কঠোর অবস্থানে থেকে নির্মূলে অভিযান চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে মদসহ দুজনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। মদ তৈরির এলাকাটা বালু নদের ওপর কালীগঞ্জ ও পূবাইল থানার মাঝখানে থাকায় আমরা ঠিকমতো অভিযান চালাতে পারি না। পূবাইল থানা থেকে অভিযান চালালে কালীগঞ্জ থানার এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button