সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্রলীগের সকল কমিটি পরিপূর্ণ করার নির্দেশ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্রলীগের সকল কমিটি পরিপূর্ণ করার নিদেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে যে কমিটিগুলো হয়নি সেগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পরিপূর্ণ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার ( ২৭ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

এতে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ অনেকে। মহানগর ছাত্রলীগ দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ সভা পরিচালনা করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জিয়াউর রহমানের বিতর্কিত ভূমিকার কথা তুলে ধরে নানক বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছিলেন জেনারেল বেগ। এই বেগ মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল ছিলেন। সেই কর্নেল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।

চিঠির বিষয়বস্তুর কথা তুলে নানক বলেন, কর্নেল বেগ যে চিঠিটি দিয়েছিলেন এই চিঠিটা প্রমাণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর জিয়াকে চোর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আমার মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারে নাই। জিয়াউর রহমান, খুনি মোশতাক যেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিল ঠিক তেমনি খালেদা, তারেক, মুজাহিদ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

৭৫ পরবর্তী সময়ে লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে নানক বলেন, একদিকে আমরা লড়াই শুরু করলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের জন্য। আরেকদিকে দেখেছি, এই জিয়াউর রহমান হত্যার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত সেই ডালিম শাহরিয়ার, নূরদের আস্ফালন দেখেছি। সেই আস্ফালনের মধ্যেই ওই বাংলাদেশে ২২ এপ্রিল মেজর জিয়া অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে। ১৯৯৭৭ সালে মেজর জিয়া হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জালিয়াতি করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। ৭ মে ১৯৭৭ মেজর জিয়া খুনিদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও পদোন্নতি দেয়। ৫ এপ্রিল ১৯৭৮ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ঘাতক দাদালদেরও নাগরিকত্ব প্রদানের নির্দেশ দেন মেজর জিয়া। ৩ জুন ১৯৭৮ অবৈধভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে খুনি জিয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে মেজর জিয়া রাজাকারদের নিয়ে বিএনপি নামক একটি অবৈধ রাজনৈতিক দল গঠন করে। ৫ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৭৯ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

কাজেই মেজর জিয়া ছিলেন পাকিস্তানি অনুচর। মেজর জিয়া ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবশেকারী একজন পাকিস্তানি অনুচর। মেজর জিয়া ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত নিজামী গোলাম আযমদের এক প্রতীক বলে দাবি করেন নানক।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানক বলেন, যে কঠিন কাজটি করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদ এবং এদেশীয় অনুচরদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে শেখ হাসিনা যখন সেই বাংলাদেশে অন্যের, বস্ত্রের, শিক্ষার, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এই বাংলাদেশ যখন পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে তখনই তার জীবনের ঝুঁকি বাড়াটাই স্বাভাবিক! আর সেই জীবনের ঝুঁকি যখন বেড়ে যায়, ষড়যন্ত্রকারীরা অতি তৎপর হয়। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একমাত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ই তার সম্মিলিত শক্তি দিয়ে সকল ষড়যন্ত্রের ধারাকে ভেঙে তছনছ করে দিতে পারে। তাই ছাত্রলীগকে শক্তিশালী হতে হবে। ছাত্রলীগকে সময় পরিস্থিতি মোতাবেক নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখার আহ্বান জানান নানক।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি- ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে নানক বলেন, এই ছাত্রলীগকে তেমন একটি ছাত্রলীগ প্রস্তুত করো। এই ছাত্রলীগের মধ্য দিয়েই সাচ্চা বঙ্গবন্ধুর কর্মী সৃষ্টি হবে। এরা সবাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হবে না। এর মধ্যে দিয়ে কেউ সিভিল প্রশাসনে যাবে, কেউ অন্যান্য শ্রেণি পেশায় যাবেন। সেই পেশায় গিয়ে যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে যেন শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। ছাত্রলীগ তেমন কর্মীদেরকে উপহার দেবে, যে কর্মীরা একদিন এই রাষ্ট্র এবং সমাজকে পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো, অনতিবিলম্বে যে কমিটিগুলো হয়নি, সে কমিটিগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেই কমিটিগুলো পরিপূর্ণ করতে হবে। সে কমিটিগুলি যেমনি মহানগর, তেমনি থানা কমিটি, তেমনি ওয়ার্ড কমিটি, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, তেমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, সমস্ত কমিটিগুলির স্ট্রাকচার দাঁড় করাতে হবে’।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button