ভারতে একদিনে সংক্রমণ ৯০ হাজার পার, সুস্থ হওয়ার পরেও ফের সংক্রমণ ধরা পড়ছে

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতকে বড়সড় তিন ধাক্কা দিল কোভিড অতিমারি।

ব্রাজিলকে পেরিয়ে করোনা সংক্রমণের বিশ্ব-তালিকার দু’নম্বরে ভারতের উঠে আসার খবর আন্তর্জাতিক সমীক্ষা জানিয়ে দিয়েছিল গত রাতে। রাত পোহাতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাল, গত ২৪ ঘণ্টায় এ দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৯০ হাজার পেরিয়েছে! আর আজই বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতাল জানাল, সুস্থ হওয়ার পরেও ফের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে এক রোগিণীর শরীরে। অর্থাৎ, একই রোগীর দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হওয়ার বিক্ষিপ্ত ঘটনাও সামনে আসতে শুরু করেছে।

ভারতে দৈনিক এক লক্ষ সংক্রমণ যে হতে পারে, করোনা-পর্ব শুরুর পরে সেই আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আজকের পরিসংখ্যানের সৌজন্যে ওই ভবিষ্যদ্বাণী আর অসম্ভব ঠেকছে না। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা হাজার পেরোচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার্স’-এর হিসেবে আজ ভারতে কোভিডে মোট মৃত্যু ৭১ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৪২ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আজকের বিবৃতির শিরোনামে অবশ্য সুস্থতার রেকর্ডের কথাই রয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, পরপর দু’দিন গোটা দেশে ৭০ হাজারের বেশি কোভিড রোগী (গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ হাজারের বেশি) সেরে উঠেছেন। সুস্থতার হার পৌঁছেছে ৭৭.৩২ শতাংশে। অ্যাক্টিভ রোগী যেখানে ৮.৬২ লক্ষ, সেখানে সুস্থের সংখ্যা ৩২ লক্ষের কাছাকাছি— প্রায় চার গুণ। মৃত্যুহার ১.৭২ শতাংশে নেমেছে। মোট সংক্রমিতের মাত্র ২০.৯৬ শতাংশ এখন অ্যাক্টিভ রোগী।

গত কাল সারা দেশে ১০.৯২ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মোট পরীক্ষার সংখ্যা ৪.৮৮ কোটি। সংক্রমণের লাফিয়ে বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথাই বলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মতে, ‘আনলক-৪’ পর্বে যেখানে আগামিকাল থেকে দিল্লি মেট্রো চলবে, কলকাতা মেট্রো চালু হওয়ার মুখে, বিশেষ ট্রেন বাড়ানোর পাশাপাশি লোকাল ট্রেনও চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে এক দিনে ৯০ হাজারেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনাকে দৈনিক সুস্থতার রেকর্ডের যুক্তি দিয়ে ঢাকা যায় না। আনলকের সরকারি সিদ্ধান্তের পাশাপাশি রাজ্যের লকডাউনের আগের দিনে দোকানে-বাজারে উপচে পড়া ভিড়, মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা বা সিগারেট-বিড়িতে সুখটানের দৃশ্য আমজনতার দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলার পক্ষে যথেষ্ট।

গত কালই ভিডিও লিঙ্কে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসচিবদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড ও পুদুচেরির মোট ৩৫টি জেলা থেকে বেশি সংখ্যায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসছে। তাই কন্টেনমেন্ট ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি পরীক্ষা বাড়াতেও বলা হয়েছে, যাতে ওই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নীচে নেমে আসে। ওই ৩৫টি জেলার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা।

ইতিমধ্যেই সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় কেন্দ্র বলেছে, কেউ চাইলে নিজে থেকেই কোভিড পরীক্ষা করাতে পারেন। তবে কী ভাবে তা করা হবে, ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য। ঘুরেফিরে আসছে পুরনো প্রশ্নই— কবে আসবে প্রতিষেধক? ঘটনাচক্রে, এ দিনই ভারত বায়োটেক-সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর ছাড়পত্র তাদের দিয়েছেন ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে পারে সেই পরীক্ষা। এ ছাড়া অক্সফোর্ডের ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে সিরাম ইনস্টিটিউট। জ়াইডাস ক্যাডিলার টিকা ‘জ়াইকোভ-ডি’-র পরীক্ষা দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button