‘অফিসের কর্মচারীই’ ইউএনও’র উপর হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী ওপর তার অফিসের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই কর্মচারীর নাম মো. রবিউল ইসলাম। তিনি ইউএনও অফিসে মালির কাজ করতেন।
রবিউল ইসলাম জেলার বিরল উপজেলার ধামাহার গ্রামের বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হামলার দায় স্বীকার করেছেন তিনি। ১২ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকেলে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য এই তথ্য জানান।
এ বিষয়ে দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, রবিউল ইউএনওর অফিসের কর্মচারী ছিলেন। তিনি সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত আছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তার দেয়া তথ্য মতে কিছু আলামতও জব্দ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে সেগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কী কারণে রবিউল এ হামলা চালিয়েছেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাকে রিমান্ডে নিয়ে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছেন কিনা, তা খুঁজে বের করা হবে।
এরপর রবিউলকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে পুলিশ। তবে দিনাজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাইল হোসেনের আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, প্রায় চার মাস আগে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়। সেই সময় উপজেলা কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রবিউলকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ওই সময় চুরির কথা স্বীকার করেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকেই টাকা চুরিতে শনাক্ত করা হয়। শাস্তি হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনার প্রায় আট মাস আগে তিনি জেলা প্রশাসকের বাংলোতে ফরাশ (গৃহস্থালির কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি) পদে কাজ করতেন। সেখানে তার কাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় ঘোড়াঘাট উপজেলায় বদলি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টার দিকে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীকেও আহত করে দুর্বৃত্তরা।
দুর্বৃত্তরা সরকারি বাসভনের ভেন্টিলেটর ভেঙে ঘরে ঢুকে প্রথমে ওমর আলীকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে তারা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়িভাবে তাকেও হাতুরি দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রংপুরে পাঠানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ইউএনওকে রংপুরে ডক্টরস হাসপাতালের আইসিইউতে এবং তার বাবাকে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর থেকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেয়া হয়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। প্রেসার চেক করে অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার শেষে ওই রাতেই জ্ঞান ফেরে ওয়াহিদা খানমের।