টঙ্গীতে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির নামে ছয় সহস্রাধিক নারীকে সর্বস্বান্ত করে প্রতারক চক্র উধাও!

বিশেষ প্রতিনিধি : টঙ্গীতে অ্যাকস লিঃ নামের একটি ভূয়া মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানী নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির নামে ছয় সহস্রাধিক নারীকে সর্বস্বান্ত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে এখন লাপাত্তা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কয়েকজন নারী নেত্রীও প্রতিষ্ঠানটিতে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারীরা।

টাকা উদ্ধার ও প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবীতে গত শনিবার সড়ক অবরোধ ও রোববার টঙ্গী পশ্চিম থানা ঘেরাও করে অবস্থান নেয় অসহায় নারীরা।

এ ঘটনায় রোববার থানায় দায়ের মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ  (ওসি) মো. এমদাদুল হক।

ভুক্তভোগী নারীরা জানান, গত ১ জুলাই নগরির বড় বাড়ি এলাকায় ‘আইন ও অধিকার সংস্থা’ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার নামে কার্যক্রম শুরু করে প্রতারক চক্রটি। দশ হাজার ৫০০ টাকার মাসিক বেতন ও মোটা অংকের কমিশনের প্রলোভনে প্রথমে ২৯৯০ টাকার জামানতে নারী উদ্যোক্তা বানানো হয়। পরে ব্যবসায় ধারণার নামে বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে সামর্থ অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যার কাছ থেকে মোটা অংকের পূঁজি হাতিয়ে নেয়। মোটা অংকের মুনাফার লোভে এবং এলাকার প্রভাবশালী মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রীদের সুপারিশে সাধারণ নারীরা প্রতিষ্ঠানটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

টাকা উদ্ধার ও প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবীতে গত শনিবার সড়ক অবরোধ করা অবস্থান অসহায় নারীরা।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থার নামে এমএলএম পদ্ধতির আদলে তাদের এই ব্যবসা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। মানবাধিকার সংস্থার নামে এধরণের ব্যবসার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। যে ভবনটি ভাড়া নিয়ে চক্রটি ব্যবসা শুরু করেছিল স্থানীয়দের আপত্তির মুখে ভবন মালিক অফিস ছাড়ার মৌখিক নোটিশ দেন। এর পর প্রতারক চক্রটি চলতি সেপ্টেম্বর মাসে টঙ্গীর হোসেন মার্কেটে একটি নতুন ভাড়া ভবনে তাদের অফিস স্থানান্তর করে। নতুন অফিসেও অধিক মুনাফার লোভে শত শত নারী হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এই নতুন ঠিকানায় এক মাস না যেতেই গত শুক্রবার প্রতারক চক্রটি অফিস বন্ধ করে উধাও হয়ে যায়। শনিবার সকালে কথিত নারী উদ্যোক্তারা অফিসে এসে এ খবর পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রোববার ভুক্তভোগী শত শত নারী জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানা ঘেরাও করে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় থানায় অতিরিক্ত মহিলা পুলিশ মোতায়েন ও থানার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রোববার রাতে রাত ৮ পর্যন্ত বিক্ষুব্দ নারীরা থানার সামনে অবস্থান করছিলেন। টঙ্গীর বড় দেওড়ার জনৈক দুলাল উক্ত ভূয়া কোম্পানীর মূল হোতা বলে তারা জানান। দুলালের সহযোগী শেখ ফরিদ শামসু, মাহবুবুর রহমান, শাকিল ও মহিলা আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট নেত্রীদেরকেও খোঁজছেন নারী উদ্যোক্তারা। একই সাথে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করছেন। রোববার দুপুর পর্যন্ত প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী তিন কোটি টাকার একটি হিসাব তারা বের করেছেন। এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ হবে এবং প্রায় ৫০ কোটি টাকা তসরুফ হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

মামলার বাদী নিশি আক্তার জানান, বাড়ি করার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তিনি এই কোম্পানীতে পূঁজি বিনিয়োগ করে উদ্যোক্তা হন। তার মত আরো অনেকেই সরল বিশ্বাসে তার চেয়ে কম-বেশি টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করেন। অনেকে স্বামীর অনুমতি ছাড়া আবার কেউ স্বামীর বাধা উপেক্ষা করে টাকা বিনিয়োগ করায় প্রায় সবার সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। অনেকের সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে বলেও ভুক্তভোগী নারীরা থানার গেটে বিলাপ করছিলেন।

এদিকে থানা ঘেরাও হয়নি, বরং ভুক্তভোগী নারীদের ডেকে এনে জবানবন্ধী ও তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে দাবী করে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার অপরাধ (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, আলোচিত এ ঘটনায় থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button