‘এক্সপ্রেসওয়ে’ হচ্ছে গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়েতে পরিণত করা হচ্ছে। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের দুই পাশে দুই সার্ভিস লাইনসহ থাকছে মোট ছয় লেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই রুটে প্রতিদিন ৩০ হাজার ৮৬৭ গাড়ি চলাচল করবে। প্রল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গভর্মেন্ট-টু-গভর্মেন্ট (জি-টু-জি) ভিত্তিতে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সূত্র জানায়, গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক এন-৩-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মহাসড়কের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের ৬টি জেলার (গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ) সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও জামালপুর জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এই মহাসড়কে উল্লেখযোগ্য হারে যানবাহনের সংখ‌্যা বাড়বে।

প্রসঙ্গত, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ককে ২-লেন থেকে ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হয়। এই মহাসড়কে দ্রুতগামী যানবাহনের পাশাপাশি অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানবাহনের চলাচলের কারণে মহাসড়কে মাঝে-মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুতগামী যানবাহন কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলাচল করতে পারে না। এছাড়া, এ মহাসড়কটি প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় এর দুই পাশে গড়ে ওঠা হাট-বাজার ও পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোর যানবাহনের কারণে মূল যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৪-লেনের উভয় পাশে ২টি ইমারজেন্সি লেন এবং মহাসড়কের উভয়পাশে স্থানীয় যানবাহনের চলাচলের জন্য ২টি সার্ভিস লেন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারসেকশনে ইন্টারচেঞ্জ-ফ্লাইওভার নির্মাণ ছাড়াও সার্ভিস এরিয়া, টোল প্লাজা ও ইন্টিলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) তৈরির কথাও রয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ককে সম্পূর্ণ প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে হিসাবে উন্নীত করার পরিকল্পনা হবে।

প্রকল্পটি সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যাত্রীবাহী-পণ্য বহনকারী যানবাহনগুলোর চলাচল দ্রুত-সহজ হবে। অযান্ত্রিক ও ধীরগতির পরিবহন চলাচলের জন‌্য মূল এক্সপ্রেসওয়ের পাশে সার্ভিস লেন থাকবে। ’

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যেই প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়েছে। প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে—মহাসড়কে হেভি ট্রাফিক লোড ও ভবিষ্যৎ ট্রাফিক চাহিদা মাথায় রেখে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয় বিবেচনায় গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয় পাশে ৫.৫ মিটার থেকে ৭.৩ মিটার চওড়া সার্ভিস লেন রাখতে হবে। এছাড়া, মধ্যবর্তী অংশে ডিভাইডার রাখার পাশাপাশি দুই দুটি ইমারজেন্সি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীত করতে হবে। মহাসড়কের বেশ কিছু ইন্টারসেকশনে ওভারপাস-ফ্লাইওভার তৈরি করা হবে। স্থানীয় জনগণের চলাচলের জন‌্য মহাসড়কের উভয়পাশে সার্ভিস লেনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত আন্ডারপাস রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, মহাসড়কে ওঠা-নামার জন‌্য সীমিত পরিমাণ গ্রেড-সেপারেটেড ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। নির্ধারিত স্থানে টোল দেওয়ার মাধ্যমে যানবাহন চলার অনুমতি পাবে। জ্বালানি সরবরাহ, যাত্রীদের বিশ্রাম ও পানাহারের জন্য ১টি সার্ভিস এরিয়ার ব‌্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন‌্য এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন ও যানবাহনের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টিলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমসহ আধুনিক ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টার বসানো হবে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ২০২১ সালে শুরু হবে। আর শেষ হবে ২০২৪ সালে।

 

 

তথ্যসূত্র: রাইজিংবিডি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button