বেগমপাড়ার সাহেবদের পরিচয় জানতে হাইকোর্টের রুল
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেগমপাড়ার সাহেবদের পরিচয় কী? কানাডায় অর্থ পাচার করে অনেকে বড়িঘর করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই।
বিস্ময় প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তারাই সংখ্যায় বেশি, রাজনীতিবিদেরা কম। জানা কথা হলেও সরকারের একজন দায়িত্বশীলের মুখে একথা শুনে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকেই।’’
এই প্রেক্ষাপটে কয়েকটি সংস্থার কাছে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট। এখন প্রশ্ন হলো, হাইকোর্ট কি সেই তালিকা পাবেন? সেই তালিকা কী প্রকাশ হবে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ১৮ নভেম্বর ঢাকায় সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘কানাডার টরেন্টোতে টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছে এরকম ২৮টি ঘটনা তার জানা আছে। তবে এর মধ্যে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন। বাকিরা সরকারি কর্মকর্তা।”
গত রোববার বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জানতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে ওই তালিকা দিতে বলা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর রুলের শুনানি হবে। তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ অর্থ পাচারকারীদের দেশের শত্রু বলে অভিহিত করেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘তালিকা শব্দটি ঠিক নয়। আদালত মূলত অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন। আমি এরইমধ্যে মধ্যে দুদকে চিঠি দিয়ে এবিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছি। তথ্য পেলে আমি তা আদালতকে জানাব। আর আদালত তা প্রকাশ করলে সবাই তা জানতে পারবেন। আমরা তো প্রকাশ করতে পারি না।”
খুরশীদ আলম জানান, মানিলন্ডারিং-এর তথ্য তদন্ত পর্যায়ে প্রকাশ করা যায় না। আর্ন্তাতিক আইনে বাধা আছে৷ অনেক দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তারা তথ্য পাঠাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ট গ্রুপ-এর সদস্য। এটি বিভিন্ন দেশের ১৬৬টি ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সংগঠন। তাদের নীতিই হলো তদন্ত পর্যায়ে তথ্য প্রকাশ না করা। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত পর্যায়ে তথ্য প্রকাশের দায়ে নাইজেরিয়াকে গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা সেই ঝুঁকি নিতে পারি না। এপর্যন্ত মানি লন্ডারিং-এর ১৮টি মামলা হয়েছে। আরো বেশ কিছুর অনুসন্ধান চলছে। বিদেশ থেকে কিছু টাকা ফেরত এসেছে। আর কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।”
অবশ্য ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানান, অর্থ পাচারকারীদের তালিকা পাওয়ার পর আদালত তা অবশ্যই প্রকাশ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবেন। আদালত এব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস। আদালত বলেছেন, ‘‘যারা অর্থ পাচার করে তারা দেশের শত্রু। তারা দেশের সাথে বেইমানি করছে। এই দেশে পড়ালেখা করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।”
দুদক সূত্র জানায়, তারা এপর্যন্ত বাংলাদেশের ৬০ ব্যক্তির অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে ১৮টি দেশে চিঠি দিয়েছে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের এর নাম রয়েছে। তার মধ্যে ৩০ জনের ব্যাপারে চিঠির জবাব পাওয়া গেছে। মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স আইন ২০১২ অনুযায়ী এই সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, যেসব ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সেসব দেশেই থাকছেন, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
তবে এই সময়ে বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনায় দুদকের সাফল্য বলতে তেমন কিছু নাই। তাদের উদ্যোগের মধ্যে এখন এগিয়ে আছে মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের হংকংয়ে পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনার চেষ্টা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য হংকংয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক।
বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নয় কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আর হলমার্কের কাছ থেকে ১৩ কোটি টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক। তবে তা আইনি প্রক্রিয়ার কারণে আটকে আছে।
সর্বশেষ পিকে হালদার দেশে না ফেরায় তার কানাডায় পাচার করা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা উদ্ধারও অনিশ্চিত। তবে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দুইটি মামলা করেছে দুদক।
সূত্র: ডয়চে ভেলে