একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি: ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি। এই দিনটিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ পালন করছে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে। আর বিএনপি পালন করছে গণতন্ত্র হত্যার কালো দিন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মেনে নেয়নি বিএনপি। নির্বাচনের পরপরই ‘ভোটের আগের রাতে ভোট’ হয়েছে বলে প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন দাবি করে দলটি। তাদের মতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় তাই তারা চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। তারা সংসদে না যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলো। কিন্তু একমাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সবাই শপথ নেন এবং সংসদে যোগ দেন। এই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পায়।

নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিএনপি এখনো অনঢ়৷ কিন্তু তারা এরপর উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এখনো অনঢ় আছি। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখনকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি৷ আর বার বার প্রমাণ হচ্ছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’’

৩০ ডিসেম্বরকে গণতন্ত্র হত্যা এবং কালো দিবস ঘোষণা করে সারাদেশে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। সকাল ১১ টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয়ভাবে আর একই সময়ে দেশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি পালিত হবে।

আওয়ামী লীগ মনে করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা হরয়েছে। এই দিনটিকে তাই তারা ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস হিসেবে পালন করছে। সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা আর বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দেশের জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় সমাবেশ করতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে। সংবিধান সমুন্নত থেকেছে৷ তাই আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করছে।’’

নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়া নিয়ে বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি সবসময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা হারলেই নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল।’’

বিএনপি আশা করে তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে। সরকার নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হবে।

সেটা কবে হবে জানাতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তার আলামত দেখা যাচ্ছে। ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছেন। এর আগে চারটি এনজিও নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলেছে।

কিন্তু বিএনপি কি সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে এনে চুপসে গেল? বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘প্রশ্নই ওঠে না। ঠান্ডা না গরম সময়মত সব দেখতে পাবেন। আন্দোলন বলে কয়ে হয় না৷ জনগণ ফুঁসে উঠছে।’’

আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি একটি দুর্বল দলে পরিণত হয়েছে। তাদের ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত ও ‘বিদেশ নির্ভরতার কারণেই’ এই পরিণতি।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘নির্বাচনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে হয়ত। কিন্তু সংবিধান সমুন্নত রাখায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে ভবিষ্যতে আরো ভালো নির্বাচন হবে। এখন নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’’

তার মতে, ওই ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নিরপেক্ষ নন। তারা বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button