স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আজ অনেকেরই নাগালে

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছোট আকারের স্যাটেলাইটের প্রয়োগের সম্ভাবনা বাড়তে থাকলেও সেগুলো উৎক্ষেপণের জন্য এখনো অনেক অর্থ ও সময় লাগে। কিছু কোম্পানি সস্তায় ও আরও সহজে এমন স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

‘স্মার্ট স্মল স্যাটেলাইট সিস্টেমস’ নামের স্টার্টআপ কোম্পানির নামের মধ্যেই কাজের ধরন তুলে ধরা হয়েছে। এই কোম্পানির কিউবস্যাট স্যাটেলাইটগুলিনিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যের সাহায্যে নির্ধারিত দিক চিহ্নিত করতে পারে। এক একটির দাম কিন্তু কম নয়।

ভ্যুয়র্তসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাউস শিলিং বলেন, ‘‘ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরির ক্ষেত্রে সাফল্যের দৌলতেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের আকার ছোট হতে থাকলেও সেগুলির সার্বিক গুণাগুণ মোটেই কমছে না। একটি বড় স্যাটেলাইটের মূল্যে একাধিক স্যাটেলাইট কাজে লাগানো যায়।”

এখনো পর্যন্ত এই কোম্পানি চারটি কিউব-স্যাট উৎক্ষেপণ করেছে। সেগুলির সমষ্টি বৈজ্ঞানিক পরিমাপের জন্য থ্রিটি টোপোলজি পরীক্ষা করছে। সেই কাজে স্যাটেলাইটগুলির মধ্যে স্বাধীনভাবে তথ্যের আদানপ্রদান, পরবর্তি পদক্ষেপ স্থির করা ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। ইনটেলিজেন্ট থ্রিডি স্যাটেলাইট কনফিগারেশনের লক্ষ্যে এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত ঘটলে নির্গত ছাইয়ের অবস্থান নির্ণয় করতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এমন প্রযুক্তির যথেষ্ট মূল্য রয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ যন্ত্রাংশ দিয়েই ছোট স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়৷ তাই সহজেই অনেক স্যাটেলাইট তৈরি করা সম্ভব। উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ফেলেও দেওয়া যায়। স্পেস-এক্স কোম্পানি স্টারলিংক প্রকল্পের আওতায় ১২,০০০ ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। এভাবে বিশ্বের প্রত্যন্ত প্রান্তেও ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।

এমন বড় প্রকল্পের দৌলতে স্যাটেলাইট উৎপাদনের প্রক্রিয়াও স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠছে৷ অনেকটা গাড়ি শিল্পের সঙ্গে এই প্রবণতার তুলনা করা যায়। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলি অনেক এগিয়ে রয়েছে।

ক্লাউস শিলিং বলেন, ‘‘এমন বাজারে অংশ নেবার লক্ষ্য ইউরোপের ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং তাতে অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে এর বিপুল ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো উচিত।”

জার্মানির আউগসবুর্গ শহরের রকেট ফ্যাক্টরি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আগ্রহী। সেটিছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় লঞ্চার তৈরি করছে৷ সেই লক্ষ্যে ছোট রকেট তৈরি করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আরিয়ানের মতো বড় রকেট উৎক্ষেপণের উপর ছোট স্যাটেলাইটগুলিকে নির্ভর করতে হয়৷ ব্যয় তেমন বেশি না হলেও উৎক্ষেপণের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। রকেট ফ্যাক্টরির প্রধান ইয়োর্ন স্পুয়রমান বলেন, ‘‘বড় লঞ্চার অনেকটা বাসের মতো। সবাই ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ছোট লঞ্চার ট্যাক্সির মতো৷ আরও সস্তায় ও দক্ষতার সঙ্গে আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। ছোট স্যাটেলাইটের সমষ্টি সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এটা ভালো সমাধানসূত্র।”

প্রায় একশো কোম্পানি মিনি লঞ্চার তৈরির কাজ করছে। অনেক কোম্পানিই হয়তো শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেবে। জার্মানিতে এমন তিনটি কোম্পানি রয়েছে৷ রকেট ফ্যাক্টরি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ও নমনীয় সমাধানসূত্র দিতে চায়। আরিয়ান রকেটে উৎক্ষেপণের জন্য ১৩ কোটি ইউরো মাসুলের বদলে দশ লক্ষ ইউরো গুনলেই চলবে।

ব্যয়ভার কম রাখতে কোম্পানির লঞ্চারে গাড়ি শিল্পে ব্যবহৃত অনেক উপাদান রাখা হচ্ছে। তবে প্রপালশন সিস্টেম একেবারে নতুন করে ডিজাইন করা হচ্ছে এবং অনেক যন্ত্রাংশ থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে। আরিয়ানের মতো বড় লঞ্চার অত্যন্ত জটিল এবং এর জন্য আলাদা করে অসংখ্য উপাদান তৈরি করতে হয়। সেই কাজে অনেক সময় লাগে। সেই তুলনায় রকেট ফ্যাক্টরি মাত্র তিন বছরের মধ্যেই প্রথম লঞ্চার তৈরির লক্ষ্য স্থির করেছে।

স্টেফান ব্রিশেংক বলেন, ‘‘মাসে একবার উৎক্ষেপণ করে আমারা বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষত রাখতে পারবো। কিন্তু আমরা সপ্তাহে একটি উৎক্ষেপণ করতে চাই। গোটা প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে বিষয়টি আর নজর কাড়ার মতো না থাকে৷ যেমন বিমানে ব্রেমেন থেকে মিউনিখ যাওয়া আজ আর কোনো বিশেষ ঘটনা নয়। রকেটের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা দেখতে চাই।”

ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এমন ব্যবস্থা কক্ষপথে পাঠানোর ব্যয় অনেক কমিয়ে দেবে। ফলে এ ক্ষেত্রে অসংখ্য নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button