পৌর নির্বাচন: আতাব উদ্দীনের ‘ঋণ’ কোটি টাকা, বাদল এগিয়ে শিক্ষায়, আকরাম ব্যবসায়ী
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাপূর্ণ কালীগঞ্জ পৌরসভার মুনসুরপুর, দড়িসোম এবং টেকপাড়া এলাকা নিয়ে গঠিত ৪ নং ওয়ার্ড। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বর্তমান কাউন্সিলরসহ তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে রিটানিং কর্মকর্তা।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আতাব উদ্দীন, আকরাম হোসেন এবং মোহাম্মদ বাদল মিয়ার। এই তিন প্রার্থীই রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হলফনামায় নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সম্পদের হিসেব দিয়েছেন।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে এই তিন প্রার্থীর বা তাদের পরিবারের সদস্যদের কোন মোবাইল ফোন নেই! যদিও অন্য ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী আছে।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, এই তিন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাব উদ্দীন এক কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল প্রার্থীর চেয়ে। অপরদিকে ‘এসএসসি’ পাশ মোহাম্মদ বাদল মিয়া এই ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। আকরাম হোসেন লাইসেন্সধারী একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক।
রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিলকৃত হলফনামার তথ্যমতে, কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাব উদ্দীন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তার নামে কোন মামলা নেই। পেশা ইট-বালু সরবারাহ বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়া বাবদ আয় বছরে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়াও পৌরসভা থেকে “সম্মানীভাতা” বাবদ বছরে আয় ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে এই প্রার্থীর নগদ আছে ২ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকে কোন টাকা জমা নেই তার। এছাড়াও তার স্ত্রীর নগদ ও ব্যাংকে কোন টাকা নেই। নিজের ০১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার থাকলেও তার স্ত্রীর কোন স্বর্ণালঙ্কার নেই।
এছাড়াও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টিভি ২ টি, ফ্রিজ ২ টি এবং ফ্যান ৫ টি। আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে খাট ২টি, সোফা ২সেট, ওয়ারড্রব ২টি, স্টিলের আলমারি ১টি এবং ওয়াল কেবিনেট ১টি।
স্থাবর সম্পদ বলতে এই প্রার্থীর কৃষি জমি আছে ১১৬ শতাংশের কিছু বেশি এবং অকৃষি জমি আছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
দালান রয়েছে ৩ টি এবং টিনসেড বিল্ডিং একটি। এছাড়াও আরো দুইটি বাড়ি আছে এই প্রার্থীর।
এছাড়াও ”ইউসিবি ব্যাংকের কালীগঞ্জ শাখা থেকে এক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এই প্রার্থীর। যা সর্বোচ্চ ঋণ পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল প্রার্থীর চেয়ে।”
তিনি নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন মোট ৫০ হাজার টাকা। এই ব্যয় মেটাবেন তিনি নিজের ব্যবসা থেকে।
কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ বাদল মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ”এসএসসি” পাস। নিজের কোন পেশা নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি। তবে চাকুরি থেকে থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা! তার নামে কোন মামলা নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে এই প্রার্থীর নগদ আছে ৮০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে আরো ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নগদ ১০ হাজার টাকা থাকলেও ব্যাংকে কোন টাকা নেই।
তবে তার নিজের কোন স্বর্ণালঙ্কার না থাকলেও তার স্ত্রীর ১ ভরি ওজনের চেইন, ১০ আনার কানের দুল আছে ১ জোড়া এবং নাক ফুল আছে।
এছাড়াও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ৩টি এবং লাইট ৪ টি। আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে কাঠের সোকেস ও আলমারি।
স্থাবর সম্পদ বলতে অকৃষি জমি আছে নিজের ১০ শতাংশ এবং যৌথ মালিকানা কিছু জমি। এছাড়াও যৌথ মালিকানা ব্যবসা রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে কোন জমি নেই।
এই প্রার্থীর নিজের কোন বাড়ি নেই। তবে তার বাবার টিনসেড বাড়ি রয়েছে।
ব্যাংকে কোন দায়-দেনা নেই তার। তিনি সঞ্চিত তহবিল থেকে নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন ৫০ হাজার টাকা।
কাউন্সিলর প্রার্থী আকরাম হোসেন স্ব-শিক্ষাত। পেশায় তিনি লাইসেন্সধারী একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মামলা আছে তার নামে দুইটি। যা চলমান রয়েছে।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে এই প্রার্থীর তার স্ত্রীর নগদ এবং ব্যাংকে কোন টাকা নেই। তবে তার স্বর্ণালঙ্কার আছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের। স্ত্রীর কোন স্বর্ণালঙ্কার নেই।
এছাড়াও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টিভি,ফ্রিজ এবং এসি। আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে খাট, আলমারি এবং সোফা।
স্থাবর সম্পদ বলতে কৃষি জমি আছে নিজের প্রায় ২১ শতাংশ। স্ত্রীর নামে প্রায় ৮ শতাংশ এবং নির্ভরশীলদের নামে ৫ শতাংশের কিছু বেশি।
এই প্রার্থীর বাড়ি রয়েছে একটি। ব্যাংকে কোন দায়-দেনা নেই তার।
তিনি নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন মোট ৪৩ হাজার টাকা। এই ব্যয় মেটাবেন তিনি নিজের ব্যবসা থেকে।
খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৪ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৩৩০ জন। ভোট কেন্দ্র ১ টি। ভোট কেন্দ্র ২ টি। কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন এবং পুরাতন ভবন।
হলফনামার তথ্য দিয়ে কার কী?
নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে হলফনামার মাধ্যমে কমিশনকে সম্পদের বিবরণসহ আট ধরনের তথ্য দিতে হয়। কিন্তু এই তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন কী করে? ভুল বা অসত্য তথ্য দিলে কি কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়?
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জনা যায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন নিজে কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই করে না। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখে। নির্বাচন কমিশন তথ্য পর্যবেক্ষণ করে। প্রয়োজন হলে তদন্তও করেন।”
”হলফনামার উদ্দেশ্য হলো এলাকার ভোটাররা যেন প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে পারেন। তারা যেন ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে এসব তথ্য কাজে লাগাতে পারেন। যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারেন।”
”তবে নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগে এসব তথ্য যাচাই বা অনুসন্ধান করে দেখে না। প্রার্থীরা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আদালতের সামনে এসব তথ্য ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশন তাদের দেয়া তথ্য সত্য বলে ধরে নেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করলে আর সেটা যদি নির্বাচন সংক্রান্ত হয় তাহলে কমিশন সেটা দেখে। নির্বাচনের পরেও ইলেকশন ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ করা যায়।”
”তবে দুর্নীতি, সম্পদের বিবরণীতে অসত্য তথ্য দিলে সেটা সরকারের অন্যকোনো দায়িত্বশীল সংস্থাও যেকোনো সময় দেখতে পারে। বিশেষ করে সম্পদ, আয়, এর উৎস এগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন দেখতে পারে।
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রার্থীদের এইসব হলফনামার তথ্য পর্যবেক্ষণে করে। হলফনামা ধরে কেউ যদি কোনো অভিযোগ করে তাহলে দুদক তদন্ত করে।”
কালীগঞ্জ পৌর নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর। গত ৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়েছে। কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের জন্য মেয়র পদে চারজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে এক নরীসহ ৩৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
১১ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ এবং আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) বিরতিহীনভাবে ভোট নেওয়া হবে। পৌরসভায় নয়টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে।
ভোটার তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জ পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬৪০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮ হাজার ৩২১ জন ও মহিলা ভোটার ১৮ হাজার ৩১৯ জন। আর ১৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কালীগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ২০ জুন কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে দুজন, নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫২ জন ও তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় পৌরসভার মোট ভোটারসংখ্যা ছিলো ৩০ হাজার ৪৯৬ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ৪০১ জন ও নারী ১৫ হাজার ৯৫ জন।
আরো জানতে……..
পৌর নির্বাচন: শিক্ষা ও অর্থ-সম্পদে এগিয়ে আফসার, ‘তথ্য গোপন’ রয়েছে চান্দু মোল্লার!
পৌর নির্বাচন: হাসেম ভূইয়া এগিয়ে অর্থ-সম্পদে, মোমেন মামলায়, আরমান ‘অক্ষরজ্ঞান সম্পূর্ণ’
কালীগঞ্জ পৌর নির্বাচন: শিক্ষা ও অর্থে এগিয়ে স্বতন্ত্র, ব্যবসায়ী আ.লীগ, মামলায় এগিয়ে বিএনপি প্রার্থী
কালীগঞ্জে ৪ মেয়র প্রার্থীসহ ৪৯ জনের মনোনয়ন দাখিল
খসড়া তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জ পৌরসভার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৩৫ জন, ভোট কেন্দ্র ১৭ টি
কালীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আ.লীগের মনোনয়ন পেলেন এস এম রবীন হোসেন
কালীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন ২৮ ফেব্রুয়ারি: ভোট ইভিএমে, থাকবে না সাধারণ ছুটি