রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে হেফাজতকে দুর্বল করতে চায় সরকার?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে সরকার হেফাজতে ইসলামকে দুর্বল করতে চায়। পাশাপাশি গ্রেপ্তারসহ অন্য বিষয় নিয়ে ভাবছেন তারা। আর মামুনুল হক ইস্যুতে হেফাজতকে অনেকটাই চাপে ফেলা গেছে বলে মনে করেন সরকারের নীতি নির্ধারকের।
আওয়ামীলীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে নেতা-কর্মীদের এখন হেফাজতের ‘সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড’ নিয়ে প্রচার প্রচারণায় জোর দিতে বলা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর ও সফর পরবর্তী হেফাজতে ‘নেতিবাচক’ কার্যক্রম এবং সর্বশেষ হেফাজত নেতা মামুনুল হক ইস্যু ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়ছে।
এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যমের সহায়তার জন্যও বলা হয়েছে। সরকার মনে করে, এটা করে হেফাজতকে এবার চাপে ফেলা যাবে। চাপের মুখে ফেলে বর্তমান ও পুরনো মামলাগুলো কাজে লাগানো হবে। সব ঘটনায়ই মামলা আছে। আর তদন্ত পর্যায়ে শীর্ষ নেতাদের নাম এলে তাদের ছাড়া হবে না।
চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও গত ২৬ মার্চ ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে নাশকতার ব্যাপারেও মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় এই প্রথম ঢাকার মামলায় মামুনুল হকসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হলো। আসামিদের মধ্যে আরো আছেন হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাবিব, নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলেও মামুনুল হককে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার না করা কৌশলগত দিক দিয়ে ভালো হয়েছে বলে মনে করেন সরকারের লোকজন। কারণ গ্রেপ্তার করলে উল্টো ফল হতে পারতো। গ্রেপ্তার না করে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা তাকে ‘ছিনিয়ে নেয়ায়’ এখন হেফাজতই ঝামেলায় পড়েছে বলে তারা মনে করেন।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর নানাভাবে হেফাজতকে সরকার বাগে আনতে পারলেও এবার হেফাজতের নতুন নেতৃত্বের কারণে পুরনো কৌশল কাজে আসছে না বলে মনে করেন সরকারের লোকজন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুর পর তাদের সাথে বৈঠক করেও কাজ হয়নি। তারা মনে করেন, হেফাজত একটার পর একটা ইস্যু মাঠে আনছে। তাই এবার কৌশলও ভিন্ন।
এরই মধ্যে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে হেফাজত ও মামুনুল হককে নিয়ে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংসদে এব্যাপারে সব তথ্য তাদের কাছে থাকার কথা বলেছেন। আর সংসদেই বাবুনগরী ও মামুনুলকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘মামলা একটা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে যারা ধর্মের নামে অধর্ম এবং নাশকতা ও জ্বালাও পোড়াও করেছে, এর সাথে যারা জড়িত, যারা নির্দেশনা দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মামলাই শেষ নয়, আইনের আওতায় এনে এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘শুধু তাই নয়, এই ধরনের রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে যারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করবে তাদেরকে কঠোরভাবে দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘এখন করোনার কারণে আমরা এইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মাঠে সভা- সমাবেশ করতে পারছি না। করোনা কমলে সেটা করা হবে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে করা হচ্ছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব কাজ হয় না।”
আওয়ামী লীগের শরীক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু মনে করেন, হেফাজতের ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ ও প্রশাসন যথাযযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাই তিনি ভুল ধরিয়ে দিয়ে বাবুনগরী ও মামুনুলকে সংসদে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিস্ক্রিয়তা পালন করেছে। হুকুমদাতা বাবুনগরী ও মামুনুল হকসহ আরো যে নেতারা আছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তার মতে, ‘‘হেফাজত পাকিস্তানপন্থি এবং বিএনপির ভাড়াটে খেলোয়াড়। তারা প্রতিটি ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। শাপলা চত্বরে হেফাজত যে ভয়াবহ তাণ্ডব করেছিল সেরকমই কিছু একটা তারা করতে চাইছে। তখন যেভাবে দমন করা হয়েছিল এখনও তাদের দমন করার ক্ষমতা সরকারের আছে।”
হেফাজতে ইসলামও মনে করে, সরকার তাদের এখন চাপে ফেলতে চাইছে। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘‘সরকার হেফাজতের কর্মসূচিতে ভীত হয়ে মামলা, হামলা ও হয়রানি করে হেফাজতকে দমন করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা অভিভাবকসুলভ আচরণ আশা করি। কিন্তু তিনি সংসদে সবার প্রধানমন্ত্রী নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর মতো কথা বলেছেন। যা আমরা আশা করিনি।”
বাবুরগরী এবং মামুনুল হককে গ্রেপ্তারে হাসানুল হক ইনুর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তার মত জনবিচ্ছিন্ন লোকের কথায় কোনো ক্ষতি হবে না।”
তিনি দাবি করেন, ‘‘সরকারে সাথে হেফাজতের আগেও কোনো যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক ছিলোনা, এখনো নাই। কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়ে তারা কওমী মাদ্রাসাকে কিনতে চেয়েছিল। সরকার যদি এই হয়রানি, হামলা, মামলা বন্ধ না করে তাহলে হেফাজতকে তা মোকাবেলার চিন্তা করতে হবে/ আলেম- ওলামারা তাদের সাংবিধানিক ও ঈমানি দায়িত্ব পালন করবেন।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে