সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত রাখার প্রাথমিক উদ্যোগ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার আইন ৪২ বছরেও কার্যকর হয়নি। তারপরও অবশেষে সরকারি কর্মচারিদের সম্পদের হিসেব নেয়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক চোখেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সদ্য অবসরে যাওয়া জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সম্পদের হিসাব দেয়ার নির্ধারত ফরমটি তৈরি করে যান। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখন সেই ফরম্যাটেই হিসাব দিতে হবে। তবে কতদিনের মধ্যে দিতে হবে সেই সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি৷ পরে সময় নির্ধারণ করা হবে।
১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালায়ই সম্পদের হিসাবের কথা বলা আছে। তাতে বলা হয়েছে. সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় এবং প্রতি পাঁচ বছর পর পর সবাই সম্পদের হিসাব দেবেন। ফলে চাকরি শুরুর সময় সম্পদ কেমন ছিল এবং পরে কত বাড়ল তা স্পষ্ট হবে। আর এই হিসাব দেয়ার জন্য নির্ধারিত ফরম থাকার কথাও আছে বিধিমালায়৷ অথচ গত ৪০ বছরে সেই ফরম তৈরি হয়নি।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘‘আমার জানা মতে ওয়ান ইলেভেনের সময় একবার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল। আর সর্বশেষ কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সম্পদের হিসাব নিয়ে দুদকে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে নির্যাতনের অভিযোগ আছে।’’ তবে এর বাইরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মাচারীদের একবার সম্পদের হিসাব নেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনে সম্পদের হিসাব না দিলে শান্তির বিধান থাকলেও ৪০ বছর ধরে কেউ সম্পদের হিসাব দেননি।
সাবেক জন প্রশাসন সচিব বলেন, ‘‘সম্পদের এই হিসাব দেয়া হলে কারো সম্পদে অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও ব্যবস্থা হতে পারে। আবার দুদকের কাছেও তদন্ত পাঠানো যেতে পারে। এটা হলে প্রশাসনে দুর্নীতি কমে যাবে। স্বচ্ছতা আসবে। এর প্রভাবে অন্য খাতেও দুর্নীতি কমবে। যার সুফল দেশের মানুষ পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান এই হিসাব দেয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হোক।’’
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করি না। আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিধান আগেই ছিল। এখন এটা সরকার কার্যকর করতে যাচ্ছে। তবে তারা চাইলে অভিযোগ দুদকের কাছেও পাঠাতে পারে।’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যদি সম্পদের বিবরণী নেয়া হয় তাহলে কেউ দুর্নীতি করলে তখনই ধরা পড়বে। আয়ের সাথে সম্পদ সঙ্গতিপূর্ণ না হলেই তো ধরা পড়ে যাবে। আমাদের লাগবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই ধরতে পারবে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। আর তদন্তের জন্য আমাদের কাছে পাঠাতে পারবে। আমাদের কাজ অনেক সহজ হবে।’’
টিআইবির একাধিক মতামত জরিপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের দাবি স্পষ্ট হয়েছে। সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরেই এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার আইন অনেক পুরনো। কিন্তু এতদিন তারা সেই আইন মানেননি। তারা সম্পদের হিসাব দেয়নি। তারপরও এখন যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাই। হিসাব ও তা হালনাগাদ করা জরুরি।’’
‘‘কিন্তু এটা কার্যকর ও নিয়মিত হতে হবে। এই সম্পদের শুধু হিসাব নিয়ে রেখে দিলেই চলবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুদকে পাঠাতে হবে৷ তাহলে এটা দুর্নীতি দমনে সহায়ক হবে।’’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে সব মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাবের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। জানা গেছে, লকডাউনের পর পরিস্থতি বুঝে সময়ও বেঁধে দেয়া হবে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে