শীতলক্ষ্যা এবং কালীগঞ্জ: প্রাচীন, মোঘল, বৃটিশ, পাকিস্তান ও বর্তমান আমল

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রাচীন কাল থেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে শীতলক্ষ্যা নদী। যতদূর জানা যায় মোগল আমলে ভাওয়াল পরগণার জমিদার ও প্রজাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল শীতলক্ষ্যা নদী। এছাড়াও সে সময়ে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে খুব সহজেই অনেক রাজা-জমিদার নৌবহর নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়েত করতেন। মোগল আমলে নৌবহর নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে বেশকিছু যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন অনেক রাজা। এমনকি জীবদ্দশায় ১৯৭০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নদী পথে শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে কালীগঞ্জ সফর করেছিলেন। সেই থেকেই তুমুলিয়া ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে একটি বাজার গড়ে উঠেছে। ওই বাজারের নামকরণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনুসারে ‘বঙ্গবন্ধু বাজার’।
শীতলক্ষ্যা দুইবার তার প্রবাহ বদলেছে বলে জানা। বর্তমানে এই নদীর প্রধান প্রবাহ আসে যমুনা চ্যানেল থেকে। এর আগে ব্রহ্মপুত্র গারো পাহার থেকে এসে দেওয়ানগঞ্জে হয়ে জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলা হয়ে কাপাসিয়ায় এসে মিলিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা প্রায় ব্রহ্মপুত্রের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। কাপাসিয়ার টোক নামক জায়গায় ব্রহ্মপুত্র দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর একটি বানর নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে। পুরোনো ব্রহ্মপুত্র থেকে বেরিয়ে আসা স্রোতোধারা কাপাসিয়ার লাখপুর পর্যন্ত বানার নামেই পরিচিত। এই বানর নদীই লাখপুর থেকে শীতলক্ষ্যা নামে প্রবাহিত হয়েছে।
কার্পাসের জন্য জগদ্বিখ্যাত কাপাসিয়ার একটু ভাটিতে রানীগঞ্জ। নদীর অপর পারে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের একটা শাখা এসে মিলেছে। জায়গাটার নাম লাখপুর।
‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব যতীন্দ্রমোহন রায় লিখেছেন লিখেছেন, ‘সম্ভবত লাখপুর গ্রামের নামের সহিত লাক্ষ্যা নদীর সম্বন্ধ বিজড়িত আছে।’
শীতলক্ষ্যার উজান ধারায় লাখপুরের একটু নিচেই তারাগঞ্জ। এখানে লম্বাটে একটা দ্বীপ গড়ে উঠেছে নদীর মাঝ বরাবর। নাম রাখা হয়েছে মাঝের চর। ওটা পেরোলেই পশ্চিম পারে একডালা।
যতীন্দ্রমোহন রায় লিখেছেন, মহারাজ বল্লাল সেন (প্রথম) একডালায় দুর্গ নির্মাণ করেন। সেন বংশীয় রাজাদের কেউ কেউ একডালাতে বাস করেই এই অঞ্চলে শাসন পরিচালনা করতেন। পরবর্তী সময়ে এখানে ছিল ঈশা খাঁর দুর্গ।
অনুবাদক, ইতিহাসবিদ ও গবেষক নুরুদ্দীন ফতেহপুরীর মতে, এখানে নদীর খাড়া পাড় অনেকটাই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা প্রাচীর হিসেবে কাজ করত।
প্রাচীরের মতো সেই খাড়া পাড় ক্ষয় হতে হতে এখনো অনেকটাই খাড়া। গাছগাছালিতে ছাওয়া। পুরো এলাকাটাই ছায়াশীতল। এখনো মাটি খুঁড়লে পুরোনো ইট পাওয়া যায় নদী পাড়ে।
একডালা ছাড়িয়ে আরও ভাটিতে নামলে পশ্চিম পারে গাজীপুরের কালীগঞ্জ, পূর্ব পারে নরসিংদীর ঘোড়াশাল। ভাটিতে রূপগঞ্জ। তার নিচে ডেমরার কাছে বালু নদীকে বুকে নিয়ে দক্ষিণে এগিয়েছে শীতলক্ষ্যা। আদমজী জুট মিলস পেরিয়ে সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করে বয়ে চলেছে। পূর্ব তীরে ঐতিহাসিক তীর্থ কদম রসুল, বন্দর থানা। পশ্চিম তীরে মোগল আমলের স্মৃতিধন্য হাজীগঞ্জ দুর্গের ভাটিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর।
জাতীয় তথ্য বাতায়নে বলা হয়েছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নামে কোনো নগরীর অস্তিত্ব প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে পাওয়া যায় না। আগে এর নাম ছিল খিজিরপুর।
‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থে নাজির হোসেন লিখেছেন, পলাশীর যুদ্ধের পর ভিকন ঠাকুর নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে এখানে কার্য পরিচালনা করতেন। তিনি এখানে নারায়ণচক্র প্রতিষ্ঠা করে একটি বাজার বসান। তাতে জায়গাটি পরিচিত হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ নামে।
যতীন্দ্রমোহন রায় লিখেছেন, মগদের মোকাবিলায় শায়েস্তা খাঁনের আমলে (১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮ সাল এবং ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮ সাল) শীতলক্ষ্যা নদীতে শতাধিক রণতরি নারায়ণগঞ্জের বন্দরে মোতায়েন থাকত। এখান থেকে ইন্ডিয়া জেনারেল স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির স্টিমার প্রতিদিন শিলশর যেত ব্রিটিশ আমলে। কলকাতা ও আসাম থেকে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরে স্টিমার ভিড়ত। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণের একমাত্র পথ ছিল নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর। এ জন্য নারায়ণগঞ্জকে বাংলা ভ্রমণের প্রবেশদ্বার বলা হতো।
একসময় প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ এখনো শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে দেশের অন্যতম নৌবন্দর। ভাটিতে টানবাজার, তারপর চাল-আটার অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ। উল্টো দিকে নবীগঞ্জ থানা, ঈশা খাঁর স্মৃতিধন্য সোনাকান্দা দুর্গের সামনে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি।
নারায়ণগঞ্জের পূর্ব দিয়ে কালাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরীর মোহনা। শীতলক্ষ্যা গিয়ে ওই ধলেশ্বরীতেই মুখ লুকিয়েছে। ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রবাহ পথের ওখানেই আত্মাহুতি।
শীতলক্ষ্যার কিছু কথা
শীতলক্ষ্যা নদীর নাব্যতা সারাবছর সমান থাকে। তাই এই নদীতে সারাবছর নৌযান চলাচল করে। বলা হয়ে থাকে টেমস নদীর পরে শীতলক্ষ্যা নদী হল হারাবার বেষ্টিত পৃথিবীর দ্বিতীয় শান্ত নদী। এই নদীর দুই পাশে অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শীতলক্ষ্যা নদীর জোয়ার ভাটা নিয়ম অনুসারে হয়। নিরবে এই নদী প্রবাহিত হয়। তাই নদীর ভাঙ্গন প্রবনতা অনেক কম।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, শুর, পাল, সেন ও দেব রাজাদের আমলে গোড়াপত্তন হলেও সোনারগাঁয়ের সমৃদ্ধ এবং গৌরব উজ্জ্বল যুগের শুরু হয় ১৩৩৮ খৃষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমল থেকে। ১৩৩৮ খৃষ্টাব্দে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সোনারগাঁ স্বাধীন বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়। পরে গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ্, শের শাহ, ঈশাখাঁ পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁয় রাজত্ব করেন। সেই সময় থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর নাম পাওয়া যায়। ইংরেজ আমলেও এই নদীর খুব কদর ছিল। এই নদীর পাশেই অনেক বসতি স্থাপন হয়। অনেক কলকারখানা স্থাপনের ফলে নদীর তীর এলাকা জমজমাট হয়ে উঠে। এই নদী তখন যোগাযোগের জন্য খুব ভাল মাধ্যম ছিল।
এছড়াও স্বচ্ছ সলিলা এই স্রোতস্বিনীর পানি অতি নির্মল ও সুস্বাদু হওয়ায় শীতলক্ষ্যা নামে অভিহিত বলেও মনে করেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব যতীন্দ্রমোহন রায়। আর স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে, যে নদীর পানি শীতল ও লক্ষ্মী, তারই নাম শীতলক্ষ্যা। এই লক্ষ্মী নদীর বিশুদ্ধ পানির খ্যাতি একদা ছড়িয়ে পড়েছিল জগৎজুড়ে। জাহাজে জাহাজে যেত ‘পিওর শীতলক্ষ্যা ওয়াটার’–এর চালান। একসময় ইংল্যান্ডের কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরির কাজে এই নদীর স্বচ্ছ সুশীতল পানি ব্যবহার করত বলে বলা আছে জাতীয় তথ্য বাতায়নে।
নদী পারের অনেক বাসিন্দার ঘর-গৃহস্থালির অন্যতম পানির উৎস শীতলক্ষ্যা। এই শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্রের সম্পর্ক নিয়ে পৌরাণিক আখ্যান আছে। তাতে, মহামুনি জমদগ্নির আদেশে পুত্র পরশুরাম কুঠারের আঘাতে বধ্ করেন নিজের মাকে। মাতৃহত্যার পাপে তাঁর হাতেই আটকে যায় সেই কুঠার। শত চেষ্টাতেও তা ছাড়াতে না পেরে হতাশ পরশুরাম বেরিয়ে পড়েন ব্রহ্মপুত্রের খোঁজে। একসময় পর্বতের নিম্নদেশে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের সন্ধান পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর হাত থেকে ছুটে যায় কুঠার।
তারপর পরশুরাম মহাপবিত্র সেই হ্রদের পানি মর্ত্যে পৌঁছে দেওয়ার মানসে কুঠারটি লাঙলাবদ্ধ করেন। চালিত করেন পর্বতের মধ্য দিয়ে। সেই লাঙল পর্বত ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। ব্রহ্মপুত্রকে চালিত করে সমভূমিতে। লাঙলের গমন পথে তৈরি হয় নদী। লাঙল এসে যেখানে আটকে যায়, তার নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। যেখানে লাঙল থেমে যায়, তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন চঞ্চলা, যৌবনগর্বিতা, অনিন্দ্যসুন্দরী শীতলক্ষ্যা। তাঁকে দেখতে দুকূল ভেঙে ধাবিত হন ব্রহ্মপুত্র।
প্রবল পরাক্রমশালী ব্রহ্মপুত্রকে দেখে ভীত শীতলক্ষ্যা নিজের রূপ লুকিয়ে বৃদ্ধার বেশ নেন। নিজেকে উপস্থাপন করেন বুড়িগঙ্গারূপে। ব্রহ্মপুত্র তাঁকে বলেন, ‘মাতঃ, শীতলক্ষ্যা কত দূরে?’ জবাবে বৃদ্ধাবেশী বলেন, ‘আমারই নাম শীতলক্ষ্যা। আমি আপনার ভীষণ রবে ভীত হয়ে বৃদ্ধার বেশ ধারণ করেছি।’ এ কথা শুনে দ্রুত ধাবিত হয়ে শীতলক্ষ্যার অবগুণ্ঠন ছিঁড়ে ফেলেন ব্রহ্মপুত্র। তাঁদের মিলন হয়। এক স্রোতে মিশে যায় দুই নদী।
অপর এক আখ্যানে, জমদগ্নিরই অভিলাষ ছিল শীতলক্ষ্যার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগ সাধনের। তীর্থরাজরূপে জগতে শ্রেষ্ঠ করার। কিন্তু অজ্ঞাতসারে শীতলক্ষ্যার দর্শনাভিলাষে গমন করেন ব্রহ্মপুত্র। তারপর বৃদ্ধাবেশী শীতলক্ষ্যার প্রকৃত পরিচয় পেয়ে আগন্তুক হয়ে লাঙ্গলবন্দে প্রত্যাগমন করেন। ওদিকে ব্রহ্মপুত্রের এমন কাণ্ডে অসন্তুষ্ট হন পরশুরাম। তিনি অভিশাপ দেন। শুরু হয় ব্রহ্মপুত্রের অনুনয়। একসময় প্রসন্ন হন জমদগ্নি। বলে দেন, প্রত্যহ তীর্থরাজ না হয়ে বছরের এক অশোকাষ্টমীতে তীর্থরাজ হবে। গঙ্গায় অবগাহন করলে যে পুণ্যসঞ্চার বা পাপক্ষয় হয়, ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম কূলে স্নান করলেও তা হবে।
সেই থেকে প্রতি অশোকাষ্টমীতে ব্রহ্মপুত্র যখন তীর্থরাজ হন, তখন পৃথিবীর সব তীর্থ, নদী বা সাগর তার কাছে আসে। লাঙ্গলবন্দে তখন পুণ্যস্নানের ঢল নামে।
নদীকে ঘিরেই বিশ্বের প্রতিটি শহর, বন্দর, গঞ্জ, বাজার প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। মালামাল পরিবহন ও যোগাযোগের সহজ উপায় হলো নৌকা। মালামাল পরিবহনে খুবই স্বল্প খরচে নৌকার জুড়ি মেলা ভার। যিনি নৌকা চালান তিনি মাঝি হিসেবে চিহ্নিত। একসময় নৌকায় পাল তোলা থাকত। সময়ের বিবর্তনে এর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। মাঝ নদীতে জেলেরা উত্তাল তরঙ্গের সাথে যুদ্ধ করে মাছ আহরণ করে। নদী পাড়াপাড়ে খেয়াঘাট ইজারা দিয়ে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারে রাজস্ব বৃদ্ধি হয়।
শীতলক্ষ্যা বা লক্ষ্ম্যা নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর এবং নরসিংদী জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২৮ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক শীতলক্ষ্যা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ৫৫। এই নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। শীতলক্ষ্যার খ্যাতি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানির জন্য।
শীতলক্ষ্যা সঙ্গে জড়িয়ে কালীগঞ্জ
কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী। স্থানীয়দের জীবনধারণসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শীতলক্ষ্যা। আজো শুধু শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করেই অসংখ্য পরিবারের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। মানবদেহে যেমন শিরা-ধমনির গুরুত্ব অসীম তেমনি জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতেও নদীর গুরুত্ব অত্যধিক।
যদিও শীতলক্ষ্যা সম্পর্কে ‘রূপার মত স্বচ্ছ জলরাশিকে যে নদী ধারণ করে আছে তাই শীতলক্ষা। উৎসমুখ ব্রক্ষ্মপুত্র নদের দক্ষিন তীরস্থ কাপাসিয়া উপজেলার টোক নয়ন বাজারের নিকট খারসাদী (গার নদী) নামক স্থান এরপর একডালা হয়ে কালীগঞ্জের সীমানায় পড়েছে। কালীগঞ্জের পূর্ব দক্ষিণ সীমাত্ম শেষ করে মোক্তারপুর, জামালপুর, বাহাদুরসাদী, কালীগঞ্জ পৌরসভা, তুমুলিয়া ইউনিয়নের পার্শ্ব দিয়ে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়েছে। সূতী, বালু, চিলাই ইত্যাদি শীতলক্ষ্যার উপনদী। কালীগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ স্থাপনাই গড়ে উঠেছে শীতলক্ষ্যার নদী ঘেঁসে।
মোগল শাসন আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার নদী ঘেঁসে কালীগঞ্জ অংশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-ঘাট বাজার। এ সবই গড়ে উঠেছে শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করে। কারণ নদী ব্যবহারের ফলে সহজেই মালামাল পরিবহণ এবং যাতায়েত ব্যবস্থার সহজলভ্যই প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমানে শীতলক্ষ্যার অনেক অংশই রয়েছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। দূষণ হচ্ছে শীতলক্ষ্যা।
মোগল আমলে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে অনেক সম্রাট এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নৌবহর নিয়ে সহজে যাতায়েত করতেন। নৌবহর নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে বেশকিছু যুদ্ধে অংশ নিতে নিয়েছেন অনেক রাজা-জমিদার। এমনকি জীবদ্দশায় ১৯৭০ সালের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নদী পথে শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে কালীগঞ্জ সফর করেছিলেন।
শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁসে কালীগঞ্জের অবস্থান
মোঘল আমল
১৩৩৮ খৃষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সোনারগাঁ স্বাধীন বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়। জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর-এর আমলে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল শাসনকারী কতিপয় জমিদার বা ভূস্বামী বারোজন এমন শাসক ছিলেন যাঁদেরকে বোঝানো হতো ‘বারো ভূঁইয়া’ বলে। আবার অনেকের অনুমান যে অতি প্রাচীনকালে হয়তো বাংলায় বারো সংখ্যক শক্তিশালী সামন্তরাজা ছিলেন যার ফলে ‘বারোভুঁইয়া’ শব্দটি জনশ্রুতিতে পরিণত হয়| ‘বারো ভুঁইয়া’দের সংখ্যা ১৩ জন ছিল।
এছাড়া এদের কিছু বিবরণ অসমের ইতিহাসেও দ্রষ্টব্য, কামরূপের এক অধিপতি গৌড়রাজের ভুঁইয়া ছিলেন বলেও জানা যায়।
মধ্যযুগের উত্তর ভারতের শাসকরাও অনেক সময় বাংলাকে ” বারোভুইয়ার মুল্ক” বলে উল্লেখ করতেন (এদের অনেক বিবরণ আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি ও মির্জা নাথানের বহরিস্তান-ই-ঘইবিতে পাওয়া যায়)। এর কারণ হল যে বাংলার অধিপতি যেই হোক না কেন, পরম্পরা গত ভাবে মূল শাসক এই ভুঁইয়ারাই ছিলেন। এর কিছু উদাহরণ আরও প্রাচীনকালে পাল,সেন ও গুপ্তদের আমলেও দেখা যায়। রামপাল যখন বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি করছিলেন তখন তাকে বিপুল সংখ্যক সামন্তকে ভূমিদানসহ বিভিন্ন উপঢৌকনের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের পক্ষে টানতে হয়েছিল। সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত “রামচরিতম্” কাব্যে এ বিষয়ের বিবরণ দ্রষ্টব্য। বলাবাহুল্য, মূল রাজার অনুপস্থিতিতে বা অরাজক অবস্থায় এরাই হয়ে উঠতেন রাজ্যের প্রধান হর্তা-কর্তা। বাংলায় পাঠান কর্রানী বংশের রাজত্ব দূর্বল হয়ে পড়লে বাংলাদেশের সোনারগাঁও, খুলনা, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলে কিছু সংখ্যক জমিদার স্বাধীন রাজার মতো রাজত্ব করতে থাকেন। সম্রাট আকবর ১৫৭৫ সালে বাংলা দখল করার পর এসকল জমিদার ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোগল সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) তার জীবদ্দশায় সমগ্র বাংলার উপর মুঘল অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হননি। কারণ বাংলার বড় বড় জমিদারেরা স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে মুঘলদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তারা বারভূঁইয়া নামে পরিচিত। এখানে ‘বারো’ বলতে অনির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝায়। তারা কখনো দিল্লীতে কর দিতেন,কখনো বা দিতেন না এবং অনেকবার কেন্দ্রীয় শক্তিকে পরাস্ত করে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করতেন। বলা হয় সম্রাট বাবরের সময় থেকেই বাংলায় মোগল আক্রমণ শুরু হলেও মোগল শাসনের সমগ্র বাংলা থেকে পরিপূর্ণ খাজনা আদায় একমাত্র শাহজাহানের সময় সম্ভব হয়েছিল। মুঘল সেনাপতি মানসিংহ জীবনে কখোনো পরাজিত করতে পারেননি ঈসা খাঁ’কে।
সে সময় ফজলউদদ্বীন মুহাম্মাদ গাজী (ফজল গাজী, ১৫৩০-১৬১০) ভাওয়াল রাজ্যের প্রধান এবং গাজী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। তিনি ঈসা খাঁর একজন অনুসারী ছিলেন। তিনি শেরশাহ এবং সম্রাট আকবরের সমসাময়িক। কালীগঞ্জের দুই কিলোমিটার উত্তরে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ফজল গাজীর পরিবার প্রথম বসতি স্থাপন করে। তিনি বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও যাতায়েত করতেন শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে।
ভাওয়ালের জমিদার এবং বাংলার বিখ্যাত বারো ভূইয়াদের একজন ছিলেন ফজল গাজী। তিনি গাজী বংশোদ্ভূত। এ বংশের আদি পুরুষ পাহলোয়ান শাহ ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভাওয়াল এলাকায় আসেন এবং চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিকে এখানে বসতি স্থাপন করেন। পাহলোয়ান শাহের পুত্র কারফর্মা ছিলেন একজন দরবেশ প্রকৃতির লোক। তিনি দিল্লির সুলতানের নিকট থেকে এক সনদের মাধ্যমে ভাওয়াল পরগনার জায়গির লাভ করেন। ফজল গাজী ছিলেন পাহলোয়ান শাহের অধস্তন অষ্টম পুরুষ।
ফজল গাজী ছিলেন খুবই প্রতাবশালী এবং গাজী বংশের জমিদারদের মধ্যে সর্বাধিক সুবিদিত। তাঁর একটি স্থায়ী স্থল বাহিনী এবং বিপুল সংখ্যক রণতরী সম্বলিত শক্তিশালী নৌবহর ছিল। ফজল গাজী দিল্লির সম্রাট শেরশাহের (১৫৪০-১৫৪৫) সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে (৯৪৫ হি.) শেরশাহের নিকট বহুমূল্য উপঢৌকন পাঠান। সেই উপঢৌকনের অন্তর্ভুক্ত একটি কামান এখন ঢাকা জাদুঘরে রক্ষিত আছে। সোনারগাঁয়ের দেওয়ানবাগে মাটির তলা থেকে উদ্ধারকৃত সাতটি কামানের অন্যতম এটি। কামানটির গায়ে শেরশাহের নামের সঙ্গে খোদিত আছে : ‘আয্ ফজল গাজী’ (ফজল গাজী থেকে প্রাপ্ত)। ভাটির শাসক ঈসা খান মসনদ-ই-আলার সঙ্গে ফজল গাজীর প্রগাঢ় মিত্রতা ছিল। বাংলায় আগত আফগানদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল বলেও শোনা যায়। সম্রাট আকবরের বাহিনীর বাংলায় প্রথম অভিযানকালে (১৫৭৪) ফজল গাজী ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন। তিনি মুগল বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন কিনা তা জানা যায় নি, তবে তাঁর পুত্র বাহাদুর গাজী ভাটির শাসক মুসা খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে স্বীয় নৌবহর নিয়ে শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে মুগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
তাঁর রাজ্য চাঁদ প্রতাপ (চাঁদ গাজী), তালিপাবাদ (তালা গাজী) ও ভাওয়াল (বড় গাজী) এ তিনটি পরগনায় বিস্তৃত ছিল। তাঁর জমিদারিতে অনেক অধীনস্থ তালুকদার ছিলেন যারা তাঁর কোষাগারে রাজস্ব জমা দিতেন। ফজল গাজী দীর্ঘকাল শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে ধারনা করা হয়। সম্ভবত ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে ফজল গাজীর মৃত্যু হয়।
বাহাদুর গাজী
বাহাদুর গাজী ছিলেন বিখ্যাত ভূঁইয়া ফজল গাজীর পুত্র ও উত্তরাধিকারী। বাহাদুর গাজী ছিলেন পাহলোয়ান শাহের অধস্তন নবম পুরুষ।
বাহাদুর গাজী সম্রাট আকবরের সময় দিল্লির রাজদরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রক্ষা করতেন। বাহাদুর গাজী সম্রাটের প্রতি তাঁর আনুগত্যের স্মারক হিসেবে ৪৮,৩৭৯ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৫টি রণতরী উপঢৌকন হিসেবে দিল্লিতে প্রেরণ করেন। একটি রাজকীয় সনদের সাক্ষ্যমতে, সম্রাট আকবর বাহাদুর গাজীকে ভাওয়ালের জমিদারীতে বহাল রাখেন।
বাহাদুর গাজী ছিলেন মুসা খান মসনদ-ই-আলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মুসা খান ছিলেন ঈসা খাঁর পুত্র। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-২৭) বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সর্বাপাক্ষা শক্তিশালী ছিলেন মুসা খা। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁয়ের মসনদের অধিকারী হন মুসা খাঁ। তিনি মুঘল আনগত্য অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন যুদ্ধ করেন। বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলার অধিকাংশ স্থান নিয়ে তার রাজত্ব গঠিত হয়েছিল। সোনারগাঁ ছিল তাঁর রাজধানী।
বাহাদুর গাজী তাঁর বিপুলসংখ্যক রণতরী নিয়ে মুগলদের বিরুদ্ধে মুসা খানের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুসা খানের চূড়ান্ত পরাজয়ের (১৬১১ খ্রি.) পরেই কেবল মুগলের বশ্যতা স্বীকার করেন। মুগলদের বিরুদ্ধে মুসা খানের শেষ যুদ্ধে বাহাদুর গাজীকে ২০০ রণতরীসহ শীতলক্ষ্যায় (চৌরায়) মোতায়েন করা হয়েছিল। মুগল সেনাপতি আবদুল ওয়াহিদের নিকট পরাজয়ের পর বাহাদুর গাজী মুগল সেনাপতির সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর গিয়ে সুবাহদার ইসলাম খানের নিকট আনুগত্য প্রকাশ করেন। সুবাহদার বাহাদুর গাজীকে সসম্মানে গ্রহণ করেন, তাঁকে তাঁর জমিদারিতে বহাল রাখেন। কিন্তু তাঁর সব রণতরী বাজেয়াপ্ত করে রাজকীয় নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সামন্ত জমিদার হিসেবে তিনি মুগলদের বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশ নেন এবং যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে (১৬১১-১২) ও মুগলদের কামরূপ অভিযানে (১৬১৩) সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
আফগান নেতা খাজা উসমানের সহযোগিতায় হাসানপুরের মুগল সেনা-ছাউনিতে নেতৃস্থানীয় মনসবদারদের বন্দি বা হত্যা করা এবং ঢাকায় সুবাহদার ইসলাম খানকে বন্দি করার এক গভীর ষড়যন্ত্র করেছিলেন বানিয়াচঙ্গের জমিদার আনোয়ার খান। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বাহাদুর গাজী এবং মুসা খানের ভ্রাতা মাহমুদ খান সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। অচিরেই বাহাদুর গাজীর গোপন কার্যকলাপ প্রকাশ পায় এবং গোটা ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যায়। বাহাদুর গাজীকে শৃঙ্খলিত করে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়।
জানা গেছে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে দৌলত গাজী ভাওয়ালের গাজী এস্টেটের জমিদার ছিলেন। বালা রাম ছিলেন দৌলত গাজীর দিওয়ান। ১৭৩৬ সালে গাজী বংশের শেষ শাসক দৌলত গাজী পদব্রজে হজব্রত পালন করতে গিয়ে মারা যান। এরপর তার দেওয়ান বলরাম রায় জমিদারী নিলামে তোলেন। রাজস্ব আদায়নীতি পরিবর্তনের ফলে ১৭০৪ সালে বালা রামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ মুর্শিদ কুলি খানের ভাওয়ালের জমিদার হিসেবে স্থাপিত হন। অবসান ঘটে গাজীবংশের জমিদারীর এবং শুরু হয় হিন্দু রাজাদের শাসনামল। তারপর থেকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে জমিদারি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। ৪,৪৬,০০০ টাকায় ইন্ডিগোর উৎপাদনকারী জে ওয়াইজের জমিদারি কেনার পর পরিবারটি সমগ্র ভাওয়াল পরগনার মালিক হয়ে ওঠে। তখন থেকে বলরাম রায়ের পরিবারের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই জমিদারির অধিকারী ছিলেন। বলরাম রায়ের শেষ উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ভাওয়াল এস্টেটের জমিদার ছিলেন।
বৃটিশ শাসন আমল
ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালকে বৃটিশ শাসন আমল বোঝায়। এই শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ব্রিটিশ রাজ বা রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। যাঁকে ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘এমপ্রেস অফ ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতের সম্রাজ্ঞী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই শাসন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল যখন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ প্রদেশগুলিকে ভাগ করে দুটি অধিরাজ্য বা ডমিনিয়ন সৃষ্টি করা হয়। এই দুটি ছিল যথাক্রমে ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্য। দেশীয় রাজ্যগুলিকে এই দুটি দেশের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই অধিরাজ্য দুটি পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান-এ পরিণত হয়। পাকিস্তানের পূর্ব অংশ বা পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এ পরিণত হয়।
বৃটিশ শাসন আমলে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে ঘেঁসে কালীগঞ্জে নির্মিত স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে:
এক,
বৃটিশ শাসন আমলের ১৮৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে তৎকালীন ঢাকা জিলার অন্তর্গত বৃহত্তর কাপাসিয়া থানাধীন কালীগঞ্জ নামক স্থানে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে ঘেঁসে “কালীগঞ্জ হাই ইংলিশ স্কুল” নামে একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সমগ্র পূর্ব বাংলায় তথা তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা জিলার বিশেষ যুগ সন্দিক্ষনে কালীগঞ্জের মতো একটি প্রত্যন্ত গ্রামে আধুনিক শিক্ষার আলোকবর্তীকাসম ‘কালীগঞ্জ হাই ইংলিশ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ অনেক গৌরবের কথা। বর্তমানে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে স্কুলটি। এর পাশেই অবস্থিত কালীগঞ্জের হাট, ঘাট ও বাজার। ঢাকা থেকে বিভিন্ন মালামাল এখনো শীতলক্ষ্যা নদী দিয়েই আনা হয়ে থাকে।
দুই,
১৮৩২ সালে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে রেলপথ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে বাংলায় সর্বপ্রথম রেলওয়ে এসেছে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির হাত ধরে। ১৮৯২ সালের ১৮ই মার্চ ইংল্যান্ডে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে (এবিআর) কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশন হয়। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর স্থাপিত হয় চট্রগ্রামে। এই কোম্পানিই পূূর্ববাংলার পূর্বাঞ্চলীয় রেলরুট ও আসামে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা করে। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। ১৯০৩ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের পরিচালনায় বেসরকারি লাকসাম-নোয়াখালী রেল শাখা চালু হয়। ১৯০৫ সালে এই লাইনটি সরকার কিনে নেয়, এবং ১৯০৬ সালে ১ জানুয়ারি আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে একীভূত করে দেয়। টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়ার মধ্যে রেললাইন স্থাপিত হয় ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে। সে সময় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ঘোড়াশাল রেল ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ওই রেল ব্রিজ নির্মাণের ফলেই ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরা হয়। টঙ্গী-আখাউড়া রেল লাইনের স্টেশন হিসেবে আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনটি তৈরি করা হয়। যা চালু হয়েছিলো ১৯১৫ সালে।
তিন,
বর্তমান কালীগঞ্জ থানার প্রশাসনিক এলাকা পূর্বে কাপাসিয়া থানার অধীনস্থ থাকলেও ১৯২৪ সালে চরসিন্দুর, গজারিয়া, ঘোড়াশাল, জিনারদী, জামালপুর, কালীগঞ্জ, জাঙ্গালিয়া, মোক্তারপুর, বক্তারপুর এবং বাড়িয়া এই ইউনিয়নগুলি নিয়ে কালীগঞ্জ থানা গঠিত হয়। যার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শীতলক্ষ্যার নদী ঘেঁসে কালীগঞ্জ থানা ভবন গড়ে উঠে। এর পূর্বে কাপাসিয়া থানার অধীনস্থ কালীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। সে সময় কালীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি থেকেই কার্যক্রম পরিচালনার করতো। এর আরো অনেক পূর্বে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে ভাদার্ত্তী গ্রামে স্থাপন করা হয়েছিল কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সে সময় নদী পথই চলাচলের একমাত্র সহজলভ্য মাধ্যম ছিল।
চার,
১৯৩৩ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠাতা করা হয়েছে জামালপুর আর এম বিদ্যাপীঠ।
পাকিস্তান শাসনামল
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে। তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বঙ্গ নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৪৭-১৯৭১ এই সময়কে পাকিস্তান আমল হিসাবে উল্লেখ করে থাকে।
পাকিস্তান শাসনামল আমলে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে ঘেঁসে কালীগঞ্জে নির্মিত স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে:
এক,
১৯৫২ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার ভাদার্ত্তী গ্রামে স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নয়নাভিরাম স্থানে ১০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপড় কল ‘মসলিন কটন মিল’ পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (ইপিআইডিসি)। ১৯৫৪ সালে উৎপাদন শুরু হলে স্পিনিং বা সুতা বিভাগে টাকুর সংখ্যা ৪৮ হাজার, বয়ন বিভাগে লুম সংখ্যা ৪৯৬ এবং ডাইং ও ফিনিশিং বিভাগ ছিল। ২ হাজার ৮ শ’জন শ্রমিক, ২৭০ জন কর্মচারী এবং ৩৫ জন কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টন পর্যমত্ম সুতা এবং সোয়ালক্ষ মিটার কাপড় উৎপাদিত হত ‘মসলিন কটন মিলে। এ মিলের বেশিরভাগ মালামাল আনা নেওয়া হতো শীতলক্ষ্যা নদী দিয়েই। ঐতিহ্যবাহী মসলিন কটন মিলে বর্তমানে হা-মীম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রূপান্তরিত হয়ে রিফাত গার্মেন্টস পোশাক উৎপাদন করছে।
দুই,
পাট শিল্পের বিকাশে পাকিস্তান আমলে ব্যক্তি মালিকানাধীয় ১৯৬৩ সালে কালীগঞ্জের মূলগাঁও মৌজায় প্রায় ৬.১৭ একর জমির ওপর ‘পূর্বপাক জুট মিল’ নামে একটি মিল স্থাপন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর মিলটি জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় পূর্বপাক জুট মিলের নাম পরিবর্তন করে সোনার বাংলা জুট মিল নামকরণ করা হয়। মিলটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজিএমসি)। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের ৩০ জানুয়ারি মিলটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। সে সময় সোনার বাংলা জুট মিলের নাম পরিবর্তন করে ‘আর কে জুট মিল’ নামে মিলটি ভরসা গ্রুপ পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও ভরসা গ্রুপের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে ‘আর কে জুট মিল’ সংলগ্ন। বেশিরভাগ মালামাল আনা নেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে।
তিন,
শীতলক্ষ্যার দুই তীরে পাট শিল্পকে কেন্দ্র করে অনেক পাটকল গড়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে কালীগঞ্জের বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যার নদীর পশ্চিম তীরে ৬৫ একর জমির উপর দুই ইউনিট বিশিষ্ট ন্যাশনাল জুট মিলস লিমিটেড পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (ইপিআইডিসি) এর পৃষ্ঠপোষকতায় সহযোগী জুট মিল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সরকার ও ব্যক্তিমালাকানায় যথাক্রমে ৪৯ঃ ৫১ শেয়ার ভিত্তিতে মিলটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ১৯৭৪ সালে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়।
চার
বঙ্গবন্ধু বাজার
তুমুলিয়া ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধু বাজারের নামকরনের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবিএম মফিজুর রহমান খান বলেন, জীবদ্দশায় ১৯৭০ সালের ১৮ অক্টোবর (রোববার) দুপুরে কালীগঞ্জ আর.আর.এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় এসেছিেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী পথে স্পিড বোটে চড়ে ঢাকার ডেমরা ঘাট থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে কালীগঞ্জ সফর করেছিলেন। নদী পথে ফেরার সময় সন্ধ্যায় সোম এলাকায় শীতলক্ষ্যার তীরে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু বাজার) যাত্রাবিরতি করেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবহার ছিলো না। হ্যাজাক লাইটের আলোতে বক্তব্য দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।যাওয়ার সময় ওই এলাকাকে বঙ্গবন্ধু বাজার নামকরনের জন্য বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকেই মূলত বঙ্গবন্ধু বাজার নামে পরিচিতি পায়।
হ্যাজাক লাইট: বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সারা বিশ্বে প্রখর আলোক বাতি হিসাবে ব্যবহৃত। যা সংযুক্ত বাল্প-আকৃতির জালের মতো আবরণ (ম্যান্টেল) উত্তপ্ত হয়ে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। এর ইংরেজি নাম পেট্রোম্যাক্স। কেউ কেউ এটাকে প্যারাফিন প্রেসার লন্ঠন বলে। বর্তমানে এ বাতিটি লুপ্ত প্রায়।
দেশ স্বাধীনের পর শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে নির্মিত স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে:
এক,
আশির দশকেও বর্তমান কালীগঞ্জ উপজেলার দুই ইউনিয়ন এবং রূপগঞ্জের এক ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি বছরের পর বছর অনাবাদি পড়ে থাকতো। বর্ষা মৌসুম এলেই গোটা এলাকা পানিতে তলিয়ে যেত। পানিবন্দি হয়ে পরতো হাজার হাজার পরিবার। আর এ কারণেই এক প্রকার বসবাসের অনুপযোগী ছিল বেশির ভাগ অঞ্চল। নিরাপদ যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ছিল না উপযোগী কোন সড়ক।
তৎকালীন সরকার ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে বর্তমান কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ও নাগরী ইউনিয়ন এবং রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার ৭’শ হেক্টর এলাকা নিয়ে “উত্তর রুপগঞ্জ পানি সংরক্ষণ প্রকল্প” বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। যা ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে আলোর মুখ দেখে। আর এই একটি মাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলেই বদলে যায় গোটা এলাকার দৃশ্যপট। শুরু হয় নতুন দিগন্ত। এরপর থেকেই ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয় এবং জীবনযাত্রায় আমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সড়ক বাঁধ এখন সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে ওই অঞ্চলেই প্রতি বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন আমন এবং বোর ধান। এছাড়াও সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই বাণিজ্যকভাবে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিশ্চিতে এবং নির্বিঘ্নে বসবাসের উপযোগী হয়েছে গোটা অঞ্চল। বসতি হয়েছে হাজার হাজার পরিবারের। আর এসবকিছুই সম্ভব হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন এবং শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে সেচ প্রদানের কারণে।
প্রকল্পের মূল অবকাঠামোটি গড়ে উঠেছে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের বর্তুল এলাকায়। যা বিনোদন প্রেমিদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত।
দুই,
কালীগঞ্জে পৌরসভার চরমিরপুর এলাকায় ১৯৯৯ সালে স্থানীয়দের কাছ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী প্রায় ২৫০ বিঘা জমি ক্রয় করে কারখানা স্থাপন করে সেভেন সার্কেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সেভেন রিংস সিমেন্ট লিমিটেড। ২০০১ সালে ওই কারখানায় সিমেন্ট উৎপাদন শুরু হয়। এই কারখানার অধিকাংশ মালামাল এখনো শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে পরিবহন করা হয়।
তিন,
কালীগঞ্জ পৌরসভার বালিগাঁও এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অনুমানিক প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে ২০০২ সালের ২৫ শে মার্চ ফাহিম মার্বেল কর্পোরেশন লিঃ একটি কারখানার উদ্বোধন করে। পরবর্তীতে ফাহিম মার্বেল কর্পোরেশনের কাছ থেকে কারখানাটি কিনে নেন আবুল খায়ের গ্রুপ লিমিটেড। বর্তমানে অনুমানিক প্রায় ৮০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপ লিমিটেড এর কয়েকটি কারখানা। তাদের অধিকাংশ মালামাল শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে পরিবহন করা হয়।
চার,
সাদা সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য ২০০৩ সালে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে শীতলক্ষ্যার পাড় ঘেষে ব্যক্তিমালিকানায় ৩.৭৩ একর জমিতে একটি কারখানা গড়ে তুলেছে সিয়াম বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের নাম‘‘হোয়াইট এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড হোয়াইট সিমেন্ট”। নদী কেন্দ্রীয় পরিবহন ব্যবস্থার ফলেই অধিকাংশ মালামাল শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে।
পাঁচ,
২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) টঙ্গী-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক মহাসড়কে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত ‘শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু’ উদ্বোধন করা হয়। আর এই সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ৯ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর টঙ্গী-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক মহাসড়কে সেতু নির্মানের জন্য শহীদ ময়েজউদ্দিনের নামে ‘শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু’ নামকরণ করে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘ঘোড়াশাল সেতু’ নাম দেয়। এরপর ওই সময় টঙ্গী ও কালীগঞ্জ এবং পলাশের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুর নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেন। এসব আন্দোলনের মধ্যে ছিল মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ, হরতাল এবং সংবাদ সম্মেলন। আন্দোলনের মুখে গণদাবী মেনে নিয়ে নাম অপরিবর্তিত রেখে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত ‘শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু’ উদ্বোধন করা হয় ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিকেলে।
ছয়,
২০০৯ সালে মূলগাঁওয়ে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে প্রাণ-আরএফএল কারখানায় যাত্রা শুরু হয়। ১০ বছরে কারখানার পরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। ২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কারখানায় বর্তমানে নয় হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ৯০ ভাগ শ্রমিকই নারী। এর মধ্যে ৮০ ভাগ শ্রমিক মূলগাঁও এবং এর আশপাশের গ্রামের। যাদের অধিকাংশই অষ্টম শ্রেণির সনদ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন।
সাত,
২০১৮ সালের প্রহেলা নভেম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয় পলাশের চরসিন্দুরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ৬২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত চরসিন্দুর সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২ বছর ৪ মাস। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫১০ দশমিক ৪০২ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য পূর্ব প্রান্তে ৫৮৭ মিটার ও পশ্চিম প্রান্তে এক কিলোমিটার।
আট,
২০১৯ সালে শীতলক্ষ্যার নদীর পাড়ে বাহাদুরসাদি ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমিগো বাংলাদেশ লিমিটেডে (এবিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু, সোম, কালীগঞ্জ, জামালপুর, নারগানা এবং সাওরাইদ বাজার। বঙ্গবন্ধু, কালীগঞ্জ, মূলগাঁও, ফুলেশ্বরী, ঘোড়াশাল (দেওপাড়া), খলাপাড়া, জামালপুর, নারগানা এবং সাওরাইদ ঘাট।
শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দিয়ে ইংরেজ আমলে ওষুধ তৈরি হত। এছাড়া বিখ্যাত মসলিন কাপড় ও জামদানি শাড়িও এই শীতলক্ষ্যার পাড়েই তৈরি হত। এই নদীর পানি খুব পরিষ্কার আর স্বচ্ছ ছিল। তাই এই নদীর পানি মানুষ অনেক ব্যবহার করত। নারায়ণগঞ্জ পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানে এই শীতলক্ষ্যা নদীর পাশেই গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিল। এই মিল এখন বন্ধ। এছাড়া নরসিংদীর ঘোড়াশালের উত্তর পলাশে যে তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত তা এই শীতলক্ষ্যার পাড়ে। নারায়ণগঞ্জ বন্দর এই নদীর তীরে অবস্থিত।
নদী
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের অধিকাংশ ভূমি গঠিতই হয়েছে পলি মাটি দিয়ে। এরপর এই ভূমির উর্বরাশক্তি ধরে রাখতেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ভূমিকা রেখেছে সেই পলি মাটিই।
নদী ভূমি গঠনের এই পলি বহন করে এনেছে, এখনো আনছে। এই ভূমি গঠনের হাজার হাজার বছর পর এখনো সেই নদী মানুষের জীবনে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রধানতম ভূমিকা রেখে চলেছে।
আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। সেখানেও মূল ভূমিকায় নদী। সাম্প্রতিক সময়ে এই কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে। ব্যবস্থা হয়েছে আধুনিক সেচের। এজন্য বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর সবগুলোই নদীকে কেন্দ্র করে।
নদী এই দেশে জালের মতো ছড়ানো, এই নদীকে কেন্দ্র করেই মানুষের জীবন গড়ে উঠেছে। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা, প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওসহ সকল শহর-নগর। যাতায়াত মানেই ছিল নদীপথে যাতায়াত। সওদাগরী নৌকা পাল তুলে ছুটে যেতো দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
বিভিন্ন নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় গত কয়েক দশকে নদীপথে যাতায়াত কমলেও এরই মধ্যে এর গুরুত্ব বুঝেছে সরকারও৷ এ কারণে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
নদীতে নৌকা চালিয়েও বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশে এখনো শিল্প কারখানা স্থাপনেও গুরুত্ব দেওয়া হয় নদীপথের যোগাযোগকে। মালামাল পরিবহনে
নদীকে ব্যবহার করা গেলে খরচ কম পড়ে।
নদীর জন্ম ও তাত্ত্বিক ধারণা
সাধারণত উঁচু ভূমি বা পাহাড় গিরিখাত থেকে সৃষ্ট ঝরণাধারা, বরফগলিত স্রোত কিংবা প্রাকৃতিক পরিবর্তন থেকে নদীর জন্ম। হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে তীব্র বেগে ধেয়ে আসা জলরাশিতে এক ধরনের প্রচন্ড গতি সঞ্চারিত হয়। ছুটে আসা এই দ্রুত গতিসম্পন্ন জলস্রোত স্থলভাগ অতিক্রম করার সময় নদী নামে পরিচিত হয়। নদী যখন পাহাড়ি এলাকায় প্রবাহিত হয় তখন তার যৌবনাবস্থা। এ সময় নদী ব্যাপক খননকাজ চালায় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি আহরণ করে অতি সহজে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। নদী এভাবেই আবহমানকাল ধরে পৃথিবীপৃষ্ঠকে ক্ষয় করে চলেছে। তার এ কাজ শেষ হয় তখন, যখন সমস্ত নদী-অববাহিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমভূমি বা প্রায় সমভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়। উৎস থেকে মোহানা অবধি নদীর এই কাজকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ঃ নদীর যৌবন অবস্থা, নদীর পরিপক্ব অবস্থা এবং নদীর বৃদ্ধাবস্থা।
বলা হয়ে থাকে হাজার নদীর দেশ বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশে ঠিক কত নদী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে নেই। কোন নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হয়ে কোথায় শেষ হয়েছে কিংবা একটি নদী আরেকটি নদীকে কোথায় অতিক্রম করেছে এসব যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ এখনো মানুষের অজানা। অনেক গবেষকদের মতে বাংলাদেশে উপনদী ও শাখানদীর মোট সংখ্যা ২২৫। তবে নদী, উপনদী ও শাখানদীর সর্বমোট সংখ্যা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট মতদ্বৈততা আছে। একটি নদী থেকে অসংখ্য নদী সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোন কোন নদী থেকে খাল বা ছড়া উৎপন্ন হয়েছে। তবে অনুমান ও হিসাব কষে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭০০ নদী আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তন্মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পদ্মা নদীর মাঝি অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুজন-সখী’র গান হিসেবে ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী’ – প্রেমের গানটি তৎকালীন সময়ে সকলের মুখে মুখে ছিল। সঙ্গীত জগতে ‘নদী’ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। মান্নাদে’র এ নদী এমন নদী; জগজিৎ সিং এর ‘নদীতে তুফান এলে কুল ভেঙ্গে যায়, সহজেই তাকে দেখা যায়। মনেতে তুফান এলে বুক ভেঙ্গে যায় দেখানোর নেইজে উপায়!’পথিক নবীর আমার একটা নদী ছিল। কিংবা আরতী মুখোপাধ্যায়ের ‘নদীর যেমন ঝরনা আছে, ঝরনারও নদী আছে’ ইত্যাদি অমর সঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবে আজীবন। এছাড়াও, মোহনায় এসে নদী পিছনের পথটাকি ভুলতে পারে – গানটি বেশ জনপ্রিয়। এই যে নদী যায় সাগরে, কত কথা সুধাই তারে, ও নদী রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ,তমার নেইকো চলার শেষ , নদী যদি বলে সাগরের কাছে আসব না তা কী হয় ইত্যাদি।
বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তন্মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পদ্মা নদীর মাঝি অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুজন-সখী’র গান হিসেবে ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী’ – প্রেমের গানটি তৎকালীন সময়ে সকলের মুখে মুখে ছিল। সঙ্গীত জগতে ‘নদী’ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। মান্নাদে’র এ নদী এমন নদী; জগজিৎ সিং এর ‘নদীতে তুফান এলে কুল ভেঙ্গে যায়, সহজেই তাকে দেখা যায়। মনেতে তুফান এলে বুক ভেঙ্গে যায় দেখানোর নেইজে উপায়!’পথিক নবীর আমার একটা নদী ছিল। কিংবা আরতী মুখোপাধ্যায়ের ‘নদীর যেমন ঝরনা আছে, ঝরনারও নদী আছে’ ইত্যাদি অমর সঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবে আজীবন। এছাড়াও, মোহনায় এসে নদী পিছনের পথটাকি ভুলতে পারে – গানটি বেশ জনপ্রিয়। এই যে নদী যায় সাগরে, কত কথা সুধাই তারে, ও নদী রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ,তমার নেইকো চলার শেষ , নদী যদি বলে সাগরের কাছে আসব না তা কী হয় ইত্যাদি।বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তন্মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পদ্মা নদীর মাঝি অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুজন-সখী’র গান হিসেবে ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী’ – প্রেমের গানটি তৎকালীন সময়ে সকলের মুখে মুখে ছিল। সঙ্গীত জগতে ‘নদী’ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। মান্নাদে’র এ নদী এমন নদী; জগজিৎ সিং এর ‘নদীতে তুফান এলে কুল ভেঙ্গে যায়, সহজেই তাকে দেখা যায়। মনেতে তুফান এলে বুক ভেঙ্গে যায় দেখানোর নেইজে উপায়!’পথিক নবীর আমার একটা নদী ছিল। কিংবা আরতী মুখোপাধ্যায়ের ‘নদীর যেমন ঝরনা আছে, ঝরনারও নদী আছে’ ইত্যাদি অমর সঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবে আজীবন। এছাড়াও, মোহনায় এসে নদী পিছনের পথটাকি ভুলতে পারে – গানটি বেশ জনপ্রিয়। এই যে নদী যায় সাগরে, কত কথা সুধাই তারে, ও নদী রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ,তমার নেইকো চলার শেষ, নদী যদি বলে সাগরের কাছে আসব না তা কী হয় ইত্যাদি।
তথ্য: সংগৃহীত
আরো জানতে…………..
কালীগঞ্জে ইউএনও’র উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ‘ঈশা খাঁ’র আধুনিক সমাধিস্থ
কালীগঞ্জে এক প্রকল্পেই বদলে দিলো ইতিহাস, জীবনযাত্রায় এসেছে আমুল পরিবর্তন
শত বছরেরও বেশি সময় যাবৎ বিরামহীন সেবা দিয়ে যাচ্ছে আড়িখোলা রেলস্টেশন
কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন
তৎকালীন ‘কালীগঞ্জ হাই ইংলিশ স্কুল’ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
বস্ত্র শিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মসলিন কটন মিল’
শীতলক্ষ্যা দখল
শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী জমি দখল: ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’কে ২ লাখ টাকা জরিমানা
দিনে দুপুরে নদী দখলের অভিযোগ ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’র বিরুদ্ধে
কালীগঞ্জে চার কোম্পানির দখলে ‘শীতলক্ষ্যার ১৫ একর জমি’, উদ্ধারের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ!
সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ফসলি জমিতে, নদীর পাড় দখল করে সম্প্রসারণ
কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যার ৩ একর জমি ভরসা গ্রুপের দখলে
কালীগঞ্জে ‘ইকো পার্কের’ নির্ধারিত সরকারি জমি অবৈধ দখলে, পাহারায় আনসার নিযুক্ত!