রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের ১৩৭ জন নিহত

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দ্বিতীয় দিনে পড়ল ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। রাজধানী কিয়েভের কাছে রুশ বাহিনী। একের পর এক বিস্ফোরণ।

বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে বিবৃতি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রধান এবং প্রথম টার্গেট তিনি। দ্বিতীয় টার্গেট তার পরিবার। তাকে খতম করে ভ্লাদিমির পুটিন ইউক্রেনের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছেন।

ওই বিবৃতির কিছু পরেই প্রেসিডেন্ট জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিনে ১৩৭ জন ইউক্রেনের নাগরিকের প্রাণ গেছে। তার মধ্যে সেনাও আছে, সাধারণ মানুষও আছে। সেনা এবং সাধারণ মানুষের নিহত হওয়ার হিসেব আলাদা করে তিনি দেননি।

ইউক্রেন জানিয়েছে, দেশের ভিতরে রাশিয়া একাধারে বিমান হামলা চালাচ্ছে, মিসাইল আক্রমণ করছে এবং স্থলপথে বহু সেনা ইউক্রেনের সীমান্ত পার করে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। চেরনোবিল-সহ একাধিক জায়গা তারা দখল করতে করতে এগোচ্ছে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তারা কিয়েভের আরো কাছে পৌঁছাতে পেরেছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছেন পুটিন। সে কারণেই তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে খতম করতে চাইছেন। জেলেনস্কির দাবি, তিনি কিয়েভে প্রশাসনিক ভবনেই আছেন। তার পরিবারও কিয়েভে আছে। তবে তাদের ঠিকানা তিনি জানাননি। এদিন তিনি জানিয়েছেন, হামলা শুরু হওয়ার পর তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুটিন তার সঙ্গে কথা বলেননি। দেশের মানুষকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। সেনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি ইউক্রেনকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন। একই সঙ্গে তার বক্তব্য, এই লড়াই ইউক্রেনকে এখনো পর্যন্ত একা লড়তে হচ্ছে। অ্যামেরিকার দাবি, সংকট শুরু হওয়ার পর এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় এক লাখ মানুষ অন্য দেশে পালিয়েছেন।

জেলেনস্কির অনুরোধে বৃহস্পতিবার পুটিনকে ফোন করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, পুটিন রাজতন্ত্রের সময়ে ফিরে গেছেন। যুদ্ধ করে সবকিছু দখল করে নিতে চাইছেন। ইউরোপও যে চুপ করে বসে নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মাক্রোঁ। জানিয়েছেন, ইউরোপ কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে এর জবাব দিচ্ছে। তবে ইউরোপ সরাসরি লড়াইয়ে নামবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়ারবিরুদ্ধে আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করেছেন ইইউ প্রধান। অ্যামেরিকা এবং নিউজিল্যান্ডও কড়া নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছে। নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান দেশ থেকে রাশিয়ার দূতকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিউজিল্যান্ডে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেনও একাধিক নিষেধাজ্ঞার কথা বললেও সরাসরি সেনা পাঠানোর বিষয়ে কোনো কথা তিনি বলেননি। শুক্রবার জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ হতে পারে।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিও আলাদা করে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।

ইউক্রেনেরপ্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, রাশিয়ার গুপ্তচররা কিয়েভে ঢুকে পড়েছে। তার দাবি, এই আক্রমণ কেবল ইউক্রেনের উপর আক্রমণ নয়, গোটা ইউরোপের বিরুদ্ধে আক্রমণ। শুক্রবারও কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। লাগাতার কিয়েভের মাথায় বোমারু বিমান ঘুরছে। রাশিয়ার সেনা ইউক্রেনের একটি বিমানঘাঁটিও কব্জা করেছে বলে রাশিয়ার তরফে দাবি করা হয়েছে। তবে তার সত্যতা এখনো স্পষ্ট নয়। পুটিন তার সেনাকে সরাসরি কিয়েভ দখল করার নির্দেশ দেবেন কি না, সেটাই এখন দেখার। বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button