আরেক দফা বাড়িয়ে এবার ডলারের দাম ৮৮ টাকা নির্ধারণ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডলারের বাজারে ভারসাম্য রক্ষা করতে সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেক দফা কমালো টাকার মান। এতে বাড়ল মার্কিন ডলারের দাম ৪০ পয়সা।

সোমবার (২৩ মে) প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়িয়ে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হলেও আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। এর প্রভাবে আমদানিকৃত পণ্যও বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত (সোমবার) ১৬ মে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও ঠিক থাকেনি ডলারের বাজার। কোনো কোনো ব্যাংকে সেঞ্চুরি ছুয়ে গেছে। আর খোলা বাজারে ১০৫ টাকাও হয়েছে এক ডলারের দাম। সোমবারও কোনো কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা দরে রেমিটেন্স সংগ্রহ করে। একই সঙ্গে রপ্তানি বিল নগদায়নও করে। এতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি মাসের শুরুতে ডলারের বিনিময়মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছিল। গত ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় ২৫ পয়সা। তাতে ১ ডলারের বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ৯ মে ডলারের বিনিময়মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। ৫০০ কোটির বেশি ডলার বিক্রি করেছে। একই সঙ্গে ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দামও বাড়াচ্ছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, ডলারের দাম ধাপে ধাপে বাড়াতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও তেলের দাম বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর চাপ গিয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। এ কারণে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। বিভিন্ন ব্যয় মিটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এখন যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হঠাৎ করে আগের আমদানি করা বিল এবং আমদানিও বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় রপ্তানি ও প্রবাসী আয়তো বাড়েনি। এজন্য ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল করার জন্য টাকার মান সম্প্রতি কয়েকবার অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখা। এ জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বিলাসী পণ্যে ঋণ মার্জিন বাড়িয়েছে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমন বন্ধসহ আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমদানি কমাতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় আরও বেশি করে বাড়াতে হবে। এই তিনটাই একমাত্র ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার প্রধান নিয়ামক’।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button