ইউরোপীয়দের চেয়ে অটোমান, সাফাভিদের নিয়ে আগ্রহী ছিলেন জাহাঙ্গীর
সাবিদিন ইব্রাহিম : সতেরো শতকের ভারতবর্ষকে যদি বর্তমান সময়ের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। এখন যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবন-জীবিকা ও মধু-মক্ষীর সন্ধানে মানুষের ভিড় জমে ইউরোপ-আমেরিকায়, জাহাঙ্গীরের ভারতও ছিল তত্কালে এমন একটি কেন্দ্র। মোগল সালতানাতের রাজধানী দিল্লি ছিল যেন এখনকার নিউইয়র্ক, লন্ডন কিংবা প্যারিসের মতো কসমোপলিটান শহর। অটোমান তুরস্ক, সাফাভিদ ইরান, ইথিওপিয়া, আরব উপত্যকা, বাগদাদ, খোরাসান, বুখারা ও বালখের মতো জায়গা থেকে আসত পর্যটক, অভিযাত্রী, দাস, ভাগ্যের অন্বেষণে আসা যোদ্ধা, সওদাগর ও ধর্মপ্রচারকরা। বহির্বিশ্ব থেকে আসা সবাই যে মোগল দরবারে প্রবেশ করতে পারত এমন নয়। তবে তাদের আগমনে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ ও সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য যুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন সমাজতাত্ত্বিকরা।
যে ইংরেজ সওদাগর জাহাঙ্গীরের দরবারে পা দিয়েছেন তিনি ছিলেন উইলিয়াম হকিংস। সদ্য গঠিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে তিনি মোগল দরবারে প্রবেশ করেছিলেন। হকিংসের জাহাজ থেমেছিল সুরাটে। ওখানে মোগল সম্রাটের জন্য আনা উপহারাদি জব্দ করেছিলেন মুকাব্বার খান নামে এক কর্মকর্তা। আসলে তার উপহারের দারিদ্র্যে তাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অতিথি মনে করেননি সম্রাটের ওই প্রতিনিধি। শুরুর ধাক্কা পেরিয়ে হকিংস অবশ্য আগ্রায় পৌঁছতে পেরেছিলেন। তার সঙ্গে ছিল সম্রাট আকবরের জন্য লেখা একটি চিঠি। ভারতে পৌঁছার আগে হয়তো তিনি জানতে পারেননি আকবর মারা গিয়েছেন এবং তার ছেলে জাহাঙ্গীর এখন দিল্লির মসনদে। তবে জাহাঙ্গীরের দরবারে বেশ ভালোভাবেই স্বাগত হন উইলিয়াম হকিংস। অন্য একটি কারণও অবশ্য সেখানে কাজ করেছিল। ইংরেজ ভদ্রলোক তুর্কি ভাষা জানতেন এবং মোগল সম্রাটেরও দখল ছিল ওই ভাষায়। এতে দুজনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের সেতু তৈরি হয়। স্বভাবতই দরবারে এক ইংরেজ দূতের কাছ থেকে দূর বিশ্ব নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে কৌতূহল বোধ করেছিলেন তিনি।
এদিকে মোগল দরবারে আগে থেকেই নিয়মিত যাওয়া জেসুইটরা এতে কিছুটা ঈর্ষান্বিত হন বৈকি। আগে যেখানে তারা ইউরোপীয় প্রতিনিধি হিসেবে সম্রাটের আকর্ষণের অখণ্ড দাবিদার ছিলেন, সেখানে ইংরেজ প্রতিনিধির আগমন আনন্দের ছিল না। শুরু থেকেই হকিংসকে হেয় করতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল তারা। পুরো ইংরেজ জাতিই ছিল তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের লক্ষ্যবস্তু। রাজা প্রথম জেমসকে ধীবরদের রাজা ও ইংল্যান্ডকে ফকির-মিসকিনদের দেশ হিসেবে জাহাঙ্গীরের সামনে পরিচিত করিয়ে দেন তারা। অবশ্য জেসুইটদের ওই কথা যে একেবারে ডাহা মিথ্যা ছিল এমনও না। তত্কালীন মোগল কিংবা তুর্কি সালতানাতের তুলনায় ইংল্যান্ড প্রকৃত অর্থেই অনেক তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র দেশ ছিল। উল্লেখ্য, হকিংস ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের চিঠি নিয়ে মোগল দরবারে এলেও সৌজন্যতাবশত পাল্টা চিঠি দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি সম্রাট জাহাঙ্গীর। এ ব্যাপারে এক মোগল কর্মকর্তা লেখেন, ‘এ ধরনের ছোটখাটো রাজা কিংবা শাসকের কাছে মোগলরা চিঠি লেখে না।’
তবে দরবারে দামি কিংবা আকর্ষণীয় উপহার নিয়ে হাজির হতে হকিংস সাহেবের ব্যর্থতা জেসুইটদের কথার সত্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিংসের ব্যর্থ চেষ্টার পর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে ব্রিটিশ দূত হিসেবে ১৬১৫ সালে আসেন স্যার থমাস রো। ঐতিহাসিক উইলিয়াম ড্যালরিম্পল তার ‘অ্যানার্কি’ বইয়ে এ পর্বটা নিয়ে সুন্দর বর্ণনা দেন। রো সাহেব সম্রাট জাহাঙ্গীরের জন্য উপঢৌকন হিসেবে এনেছিলেন ইংলিশ মাস্টিফ ও আইরিশ গ্রেহাউন্ডস প্রজাতির কয়েকটি শিকারি কুকুর, বিলাতি কোচ, কিছু ম্যানারিস্ট পেইন্টিং, ইংলিশ ভার্জিনাল নামে একটি বাদ্যযন্ত্র ও কয়েক বাক্সভর্তি রেড ওয়াইন। জাহাঙ্গীরের কাছে ইংরেজদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ছিল অগ্রাধিকারের তালিকায় সবার নিচে। মোগল সম্রাটের কাছে ভারতবর্ষই ছিল পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। এর বাইরে যা আছে তা তুচ্ছ, গুরুত্বহীন। ইংরেজ রাজা প্রথম জেমসের হয়ে মাঝখানে বেশ কয়েক দল ব্রিটিশ প্রতিনিধি এসেছিলেন। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ চেষ্টার পর অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত স্যার থমাস রোকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। অক্সফোর্ডে পড়া থমাস রো ১৬০৫ সালে নাইট উপাধি পেয়েছেন এবং কূটনীতি নিয়ে বেশ অভিজ্ঞ একজন্য ব্যক্তি। তবে ব্যক্তিচরিত্রে ভিন্ন প্রান্তের হলেও হকিংস ও রো উভয়েরই উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষে বাণিজ্য সুবিধা আদায়।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরও জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেননি রো। দরবারের অন্যান্য আমির-ওমরাহদের কাছে অনেকটা হাস্যরসের পাত্র ছিলেন তিনি। ইংরেজদের বাণিজ্য সুবিধার আরজি নিয়ে দফায় দফায় দরখাস্ত করলেও সাফল্যের মুখ দেখেনি। ক্ষুব্ধ রো অবশ্য দরবারের কিছু ইস্যুর দিকে আলোকপাত করেন। তার দৃষ্টিতে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়তেন রানী নূরজাহান, তার ভাই আসফ খান ও শাহজাদা খুররম (পরবর্তী সময়ে সম্রাট শাহজাহান)।
ইংরেজ কিংবা ইউরোপীয়দের নিয়ে যতটা না অনাগ্রহী ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর বিপরীতে ততটাই উৎসাহী ছিলেন অটোমান, উজবেক ও সাফাভিদের নিয়ে। সাদা ইউরোপীয়দের চেয়ে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সমকালীন মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মিত্রতা কিংবা সংযোগে আগ্রহী ছিলেন মোগল সম্রাট। এর মধ্যে পারস্যের সাফাভিদের ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি। জটিল এক কূটনীতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পেছনে অবশ্য ভূখণ্ডগত প্রতিযোগিতাসহ পুরনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে সমকালে তিন দাপটশালী মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর একটি অটোমানদের তেমন আগ্রহ ছিল না মোগল সালতানাত নিয়ে। তেমনি মোগল সালতানাতও অটোমানদের নিয়ে তেমনটা উৎসাহ দেখায়নি। বরং কখনো কখনো তৈমুরের কাছে অটোমানদের পরাজয়ের ইতিহাস নিয়ে টিপ্পনী কাটত তারা। ১৪০২ সালে আঙ্কারার যুদ্ধে অটোমান সুলতান বায়েজিদকে পরাজিত করেছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুরের পূর্বপুরুষ তৈমুর লং।
সম্রাট আকবর কিংবা তার ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে অটোমানদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ একেবারেই সীমিত ছিল। বাবুরের হিন্দুস্তান অভিযানের সময় তার বাহিনীতে আর্টিলারিতে কিছু তুর্কি সেনা ছিল। এছাড়া দুই রাজপরিবারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের কোনো চেষ্টা দেখা যায়নি। ১৫২৭ সালে মামলুকদের পরাজিত করার পর মক্কা-মদিনার নিয়ন্ত্রণ নেয় অটোমানরা। দুই পবিত্র শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে সুন্নি মুসলমানদের অঘোষিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয় তুর্কি সালতানাত। তা সত্ত্বেও অটোমানদের সঙ্গে মিত্রতা কিংবা যোগাযোগের চেষ্টা করেননি সম্রাট আকবর। ছেলে জাহাঙ্গীরও ওই নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন।
১৬০৯ সালে আগ্রায় জাহাঙ্গীরের দরবারে এক অটোমান দূতের আগমন হয়। তার দাবি তিনি তুর্কি সুলতানের প্রতিনিধি। কিন্তু ওই দূতকে ভুয়া অটোমান প্রতিনিধি হিসেবে আবিষ্কার করে মোগল দরবার। তাকে দরবার থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি সম্রাট জাহাঙ্গীরকে টিপ্পনী কাটতে শুনেছেন উপস্থিত সভাসদরা। আঙ্কারার যুদ্ধে অটোমানদের পরাজিত করার পর তাদের হাতেই আনাতোলিয়া হস্তান্তর করে এসেছিলেন তৈমুর। কিছু উপহারাদি এবং এক বছরের রাজস্ব নিয়ে ফিরে এসেছিলেন মধ্য এশিয়ার ওই বিজেতা। পূর্বপুরুষের ওই বদান্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই স্বঘোষিত অটোমান দূতের দিকে প্রশ্ন ছোড়েন, হিন্দুস্তানে তৈমুরের উত্তরসূরিদের কাছে এখনো দূত পাঠায়নি কেন অটোমানরা? ওই ঘটনা বাদে অটোমানদের নিয়ে তেমন বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায়নি জাহাঙ্গীরকে। অবশ্য উত্তরাধিকারী নির্বাচন নিয়ে সুলতানের সঙ্গে তার ছেলেদের তিক্ততার খবরাদি রেখেছেন তিনি। কারণ নিজের শাসনকালের শেষের দিকে নিজের ছেলেরাও তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল।
বিশ্বমঞ্চে ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভৌগোলিকভাবে মোগলদের কাছাকাছি হওয়ায় মধ্য এশিয়ার কয়েকটি শাসকগোষ্ঠী নিয়ে আগ্রহী ছিলেন জাহাঙ্গীর। সেগুলো হচ্ছে মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় মাওয়ারান্নাহর, বাদাখশন ও বালখ। গ্রিকদের কাছে ট্রান্সঅক্সিয়ানা হিসেবে পরিচিত মাওয়ারান্নাহর ছিল মধ্য এশিয়ার অংশবিশেষের প্রাচীন নাম। বর্তমান উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, দক্ষিণ কিরগিজস্তান ও দক্ষিণ-পশ্চিম কাজাখস্তানজুড়ে বিস্তৃত ছিল অঞ্চলটি। ভৌগোলিকভাবে এর অবস্থান আমু দরিয়া ও সির দরিয়া নদীদ্বয়ের মাঝামাঝি থাকায় আরবরা একে বলত মাওয়ারান্নহর (নদীর অববাহিকা)। ইরানিদের কাছে এ অঞ্চল তুরান বলে পরিচিত ছিল। মহাকবি ফেরদৌসির ফারসি মহাকাব্য শাহনামায় তুরান নামে যে অঞ্চলটির কথা উঠে এসেছে তা এ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। অন্যদিকে বাদাখশান ও বালখ বর্তমান আফগানিস্তানের কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত দুটি স্বাধীন ভূখণ্ড ছিল। দিল্লির মসনদে বসার পর সম্রাট জাহাঙ্গীর ‘মধ্য এশিয়াকে পূর্ব পুরুষদের ভিটা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি ওই অঞ্চল দখলের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তবে নিজ ভূখণ্ডে বিভিন্ন বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা দক্ষিণ ভারতে দৃষ্টি নিপতিত করায় মধ্য এশিয়া জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ফুরসত পাননি সম্রাট জাহাঙ্গীর।
ইরানের সাফাভিদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের অম্ল-মধুর সম্পর্ক ছিল। বাদশাহ আকবরের মৃত্যুর পার কান্দাহার দখলের চেষ্টা চালায় সাফাভিরা। নতুন সম্রাট দুর্বল হতে পারেন এমনটা মনে করে তারা ওই অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু মোগল সেনারা তাদের হটিয়ে দেয়। ১৬০৭ সালে লাহোরে সাফাভিদের দূত হিসেবে আগমন করেন হুসাইন বেগ। কান্দাহার অভিযানের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ওই অভিযান স্থানীয় কিছু কমান্ডারের ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি হিসেবে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন। সাফাভিদের দুঃখ প্রকাশকে স্বাগত জানান সম্রাট জাহাঙ্গীর। সাফাভি বাদশাহ শাহ আব্বাসের সঙ্গে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের সম্পর্কটা বেশ জটিল ছিল। চিঠিতে তারা একে অন্যকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করলেও তুর্কি-মোঙ্গল রাজপরিবারে এটাও সামনে চলে আসে, ভাই-ই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রু। জাহাঙ্গীরের বেশ আগেই ১৫৮৭ সালে সাফাভি ইরানের তখতে বসেছিলেন শাহ আব্বাস। বেশ অভিজ্ঞ ও ক্ষমতা উপভোগ করা শাহ আব্বাসের ব্যাপারে কিছুটা ঈর্ষা থাকতে পারে মোগল সম্রাটের। তাছাড়া মোগল সম্রাট হওয়ার আগেই শাহজাদা সেলিমের (পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীর) সঙ্গে চিঠি যোগাযোগ করেছিলেন শাহ আব্বাস। জাহাঙ্গীরের মোগল মসনদে আসীনের ২০ বছর আগেই সাফাভি বাদশাহ হয়েছিলেন তিনি। ফলে আকবরের শেষ বছরগুলোয় শাহজাদার সঙ্গে বিশেষ খাতিরে বিশেষ সুবিধা আদায় করেছিলেন বৈকি। এক চিঠিতে তো বাদশাহ আকবরের সমালোচনা করে বসেন শাহ আব্বাস। উল্লেখ্য, আকবরের পছন্দের উত্তরসূরি হিসেবে জাহাঙ্গীর প্রথম বাছাই ছিলেন না। দানিয়ালের অকালমৃত্যুতে উত্তরসূরি হিসেবে জাহাঙ্গীরের অবস্থান পাকাপোক্ত হয়।
সম্রাট হওয়ার পর সাফাভি বাদশাহর সঙ্গে যোগাযোগে খুব হিসেবি ও সচেতন হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর। কান্দাহার ইস্যুতে তিনি কঠিন একটি শিক্ষা এরই মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলেন। শাসনকালের পুরো সময়ে চিঠিতে একে অন্যকে সুন্দর ভাষায় সম্বোধন করলেও সতর্কতা ছিল উভয় পক্ষের। শাহ আব্বাসের দরবার থেকে জাহাঙ্গীরের দরবারে অন্তত ১১টি কূটনীতিক প্রতিনিধি দল এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। সাফাভি বাদশাহ নিয়ে সবসময়ই উত্সুক ছিলেন জাহাঙ্গীর। শাহ আব্বাস রাজবিদ্রোহের অভিযোগে তার এক ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ খবরটা নিয়ে জাহাঙ্গীর এতটাই উৎসাহী ছিলেন যে ইরান থেকে আসা প্রত্যেকের কাছেই এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
বাংলার স্বাধীন শাসক দাউদ খান কররানিকে পরাজিত করে মোগল সুবাহ বা প্রদেশ বানালেও সেখানে পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি বাদশাহ আকবর। সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৮ সালে ঢাকাকে রাজধানী বানিয়ে বাংলার শাসক হিসেবে পাঠান ইসলাম খান চিশতিকে। বাল্যবন্ধু ইসলাম খান চিশতি সম্মানস্বরূপ ঢাকার নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীরাবাদ রেখেছিলেন।
নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জাহাঙ্গীর সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন। দক্ষিণ ভারতের কাংরা ও মেবারের মতো এলাকা আকবর যেখানে পদানত করতে পারেননি সেসব অঞ্চলেই মনোনিবেশ করেন জাহাঙ্গীর। মালিক আম্বার নামে এক সেনাপতি কয়েক দশক ধরে মোগলদের বিতাড়িত করে আসছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরও তাকে পুরোপুরি পদানত করতে পারেননি। তার শাসনকালের শেষের দিকে হতাশার নাম ছিল দক্ষিণ ভারত ও মালিক আম্বারের মতো যোদ্ধা।
লেখক: সাবিদিন ইব্রাহিম, সাংবাদিক ও লেখক