সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের তথ্য বিনিময়ে ঢাকা-বার্ন আলোচনা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা‌ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনে সে দেশের রাজধানী বার্ন ও ঢাকায় এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এসব বৈঠকে তথ্য আদান-প্রদানসংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি এবং পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা (এমএলএটি) চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস বার্নে সুইজারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আর ঢাকায় গত রোববার সুইজারল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে।

পুরো টেকনিক্যাল বিষয়টি নিয়ে সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ডের হয়তো ধারণা কম ছিল। এ জন্য তিনি ঢালাও মন্তব্য করেছেন। এখানে যে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে সেটি কীভাবে কমানো যায় এবং বিষয়টিকে আমরা আর বাড়তে দিতে চাই না—এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড আমাদের যা বলেছে, সেটি আমরা এখানে সবার সঙ্গে কথা বলে করে নিব। এসব বিষয় নিয়ে যেহেতু একটি ধোঁয়াশা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসব, যাতে করে আমাদের দিক থেকে কোনো মতপার্থক্য না থাকে।’

তথ্য পেতে যা লাগবে
সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের তথ্য পেতে গেলে ওই অর্থ অসৎ উপায়ে অর্জিত হয়েছে—প্রাথমিকভাবে এমন প্রমাণ দিতে হবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সুইস ব্যাংকগুলো ঢালাও কোনো তথ্য দেবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম, যদি সম্ভব হয় ব্যাংক হিসাব নম্বর এবং ওই অর্থ যে অসৎ উপায়ে অর্জিত হয়েছে, তার প্রাথমিক প্রমাণের তথ্য সুইজারল্যান্ডের কাছে দিতে হবে।

দুই দেশের রাজনৈতিক পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে তথ্য পাওয়া সহজ, এমনটি ইঙ্গিত করে সূত্রগুলো বলছে, কারিগরি স্তরে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হওয়ায় এই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

তথ্য প্রকাশে জটিলতা
আবার সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্য ফাঁস করার ব্যাপারে কিছু আইনগত বাধা রয়েছে। এগমন্ট গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু ধারা রয়েছে, যার কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তথ্য প্রচারে বাধা রয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সাধারণভাবে বলা যায়, আমরা তথ্য চেয়েছি এবং তারা হয়তো বলবে তথ্য দিয়েছে বা দেয়নি। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে তথ্যগুলো কী, সেগুলো প্রকাশের বিষয়ে আইনি বাধা বা জটিলতা রয়েছে।’

সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি বিবেচনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুইজারল্যান্ডে যে সংস্থা তথ্য সরবরাহ করে, তা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এ কারণে মতপার্থক্য হচ্ছে।

১০ আগস্ট ডিকাব টকে সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের টাকা জমা রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি।

পরদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সুইস রাষ্ট্রদূত মিথ্যা বলেছেন। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থসচিব পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ তথ্য চেয়েছিল।

১২ আগস্ট হাইকোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল। কিন্তু সুইজারল্যান্ড মাত্র একজনের তথ্য দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button