কালীগঞ্জে ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩: একজনের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জের নরুন এলাকায় কলেজ ছাত্র রিদুয়ান হাসান আলিফকে (১৭) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সংশ্লিষ্টতা থাকায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হলে বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে একজন। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর এবং অপরজনকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হলে জবানবন্দি গ্রহণ, রিমান্ড মঞ্জুর এবং কারাগারে পাঠানোর এ নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

এর আগে নিহতের বাবা আমান উল্লাহর বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানার হত্যা মামলা দায়ের করেন {মামলা নাম্বার ১৫(১১)২২}।।

আদালত ও থানা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিহত রিদুয়ান হাসান আলিফ শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ডুমনী এলাকার আমান উল্লাহর ছেলে। সে প্রহলাদপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো।

গ্রেপ্তার তিনজন হলো, কালীগঞ্জের নরুন মৌলভীপাড়া এলাকার শাহ আলম হোসেনের ছেলে জিহাদ (২১), কাপাসিয়ার কাজাহাজী ভাদিয়াবাড়ী এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শাকিব হোসেন (১৯) এবং কালীগঞ্জের নূরুন পলোইহাটি এলাকার ফাইজুর রহমান ফয়সাল খান (১৮)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান। পরে গ্রেপ্তার জিহাদ ঘটনার সময়কার বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এর বিচারক রাগীব নূরের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও শাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। অপর আসামি ফয়সাল খানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, রিদুয়ান হাসান আলিফ প্রহলাদপুর স্কুল এন্ড কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। সোমবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টার দিকে তার বন্ধু শ্রাবন (১৯), নাজমুল হক নাদিম (১৯), কাউসার (১৮), অর্নব (১৯) ও সিফাত (১৯) নরুন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইসলামী ওয়াজ মাহফিলে যায়। পরে তারা মাহফিলে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত প্যান্ডেলে পেছনে অবস্থান নেয়। সে সময় অজ্ঞাত ৫/৬ জন এসে তাদের জিজ্ঞাসা করে কেন তারা মহিলা প্যান্ডেলের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে? এই কথা বলে আলিফসহ সবাইকে গালাগালি করে এবং মারধর করে তারা। স্থানীয়রা তাদের বাঁধা দেয় এবং উভয় পক্ষকে ওই স্থান থেকে সরিয়ে দেন। পরবর্তীতে আলিফসহ তার বন্ধুরা নরুন বাজারে থাকি অলি উল্লাহর পেট্রোল পাম্পের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পরে আনুমানিক রাত সাড়ে ৭টার দিকে অজ্ঞাত ২৫/৩০ জন এসে আলিফসহ তার বন্ধুদের পূণরায় মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে অজ্ঞাতদের মধ্যে একজন আলিফের বুকের বাম পাশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাত আসামীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলিফকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াজ মাহফিলে নরুন এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল আলিফসহ তার বন্ধুরা। এমন সন্দেহ থেকেই অভিযুক্তরা তাকে ধরে নিয়ে মারধর করে ছুরিকাঘাত করলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত আলিফের বন্ধুরা হত্যায় জড়িত রয়েছে এমন তিনজনকে শনাক্ত করার পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেছে।‌

মামলার বাদী আমান উল্লাহ বলেন, আলিফকে যে কোন আক্রোশ থেকে অজ্ঞাত আসামীরা পরিকল্পিত ভাবে মারধর ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান বলেন, নিহতের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে গ্রেপ্তার জিহাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তার শাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদলত। অপর আসামি ফয়সাল খানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

 

আরো জানতে…………..

কালীগঞ্জে কলেজ ছাত্র হত্যায় অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, পুলিশী হেফাজতে ৩ কিশোর

কালীগঞ্জে ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্রকে হত্যা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button