হঠাৎ করেই ফেসবুক থেকে উধাও জনপ্রিয় বাংলাদেশি গ্রুপ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হঠাৎ করেই ফেসবুকে বাংলাদেশিদের বেশ কিছু জনপ্রিয় গ্রুপ মুছে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নানা বিষয় নিয়ে গড়ে ওঠা জনপ্রিয় এসব গ্রুপে কয়েক লাখেরও ওপরে ব্যবহারকারী রয়েছে। সম্প্রতি হুট করেই এসব গ্রুপ ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গের দায় চাপিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে এবং গ্রুপের অ্যাডমিনদের ফেসবুক আইডি ডিস্যাবল (নিষ্ক্রিয়) করে দেওয়া হচ্ছে। কাজটি করছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজেই। এ তালিকায় রয়েছে ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কমিউনিটি গ্রুপ, খাবার বিষয়ক গ্রুপ, খেলা বিষয়ক গ্রুপ, বিনোদন বিষয়ক গ্রুপ ইত্যাদি।

গতকাল ১৩ মে গভীর রাতে হঠাৎ করে ‘আপওয়ার্ক বাংলাদেশ’ নামের একটি কমিউনিটি গ্রুপের ৬ জন অ্যাডমিন এবং ৫ জন মডারেটর ফেসবুক থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই লগ-আউট হয়ে যান। বিষয়টি চেক করে পুনরায় লগ-ইন করতে গেলে বলা হয়, ফেসবুকের স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন ভঙ্গ করায় আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপটি ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। এ সময়ে এ গ্রুপটির ৬ জন অ্যাডমিনের অ্যাকাউন্টও ডিস্যাবল করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে একজন আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) নিজের তথ্যাদি দিয়ে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন এ গ্রুপের মডারেটর মোহাম্মদ আসিফ।

তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে কমিউনিটির নানা বিষয় নিয়ে চ্যাট করছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের অ্যাকাউন্ট লগ-আউট হয়ে গেলে আমরা পুনরায় লগ-ইন করতে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পাই।’

ছয় অ্যাডমিনের অ্যাকাউন্ট ডিস্যাবল হয়ে গেলেও মডারেটরদের সমস্যা হয়নি বলেও জানান তিনি। এ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ছিলেন প্রায় দেড় লাখ। গ্রুপ এবং অ্যাডমিনদের অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করার জন্য তারা ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

এ গ্রুপ ছাড়াও গতকাল রাতে একই সময়ে উধাও হয়ে যায় দেশের অন্যতম বড় গ্রুপ ‘সার্চ ইংলিশ’। এ গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ১৫ হাজার। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ও সার্চ ইংলিশের প্রধান নির্বাহী রাজীব আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত রাতে সার্চ ইংলিশ গ্রুপটি উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু কী কারণে তা হয়েছে তা এখনো জানি না। ঠিক কী কারণে এমনটি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ফেসবুকের নীতিমালা পরিপন্থী, নাকি কোনও কারিগরি ত্রুটির কারণে হয়েছে তা জানি না। বিষয়টি জানিয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুককে ইমেইল করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, এ গ্রুপটি ফেসবুক থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং রাজীব আহমেদ ফেসবুক কমিউনিটির একজন লিডার হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন।

এরইমধ্যে দেশের যেসব ফেসবুক গ্রুপ উধাও হয়ে গেছে তার মধ্যে রয়েছে আপওয়ার্ক বাংলাদেশ, সার্চ ইংলিশ, সিনেমাখোরদের আড্ডা, উই আর বাংলাদেশ, ক্রিকেটখোর, ভয়েজ অব রাইটস ইত্যাদি।

বিষয়টি নিয়ে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন অনেক গ্রুপের সক্রিয় অ্যাডমিনরা। আতঙ্কে অনেক অ্যাডমিন বাংলাদেশের অনেকগুলো ফেসবুকগ্রুপকে আর্কাইভ করে ফেলছেন।

এ বিষয়ে ‘সাইবার ৭১-উই হ্যাক টু প্রটেক্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, ‘ফেসবুকের নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যে কোনও গ্রুপ, তাদের সব অ্যাডমিনের আইডি এবং পেজসহ রিমুভ করানো যাচ্ছে। যার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু স্প্যামার বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ ফেসবুক থেকে Permanent remove (স্থায়ীভাবে মুছে ফেলা) করে দিয়েছে। তাই, সকল গ্রুপ অ্যাডমিনদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের গ্রুপকে আর্কাইভ করার জন্য বলা হলো। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই দুর্বলতা সমাধানে কাজ করছে। আমাদের কাছ থেকে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত গ্রুপ আর্কাইভ করে রাখুন।’

যাদের ফেসবুক গ্রুপ / পেজ এই সংক্রান্ত সমস্যায় ডিস্যাবল হয়েছে তাদের ‘সাইবার ৭১-উই হ্যাক টু প্রটেক্ট বাংলাদেশ’ নামের এই ফেসবুক পেজটিতে দ্রুত যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঠিক কী কারণে হঠাৎ এমন গ্রুপগুলো উধাও হয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ পরিচালনাকারী একজন সক্রিয় ব্যবহারকারী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, গ্রুপগুলোতে হঠাৎ করে ‘টেরোরিজম’ বিষয়ক উস্কানিমূলক কমেন্ট করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সে কমেন্টকে ঘিরেই আবার ফেসবুকে রিপোর্ট করা হচ্ছে। যখন ফেসবুক কোনও গ্রুপে এ ধরনের কার্যক্রম দেখছে সেটিকে নিয়ম বহির্ভূত মনে করছে এবং সংশ্লিষ্ট গ্রুপটি মুছে দিচ্ছে। একইসঙ্গে গ্রুপে অ্যাডমিনদের আইডিও ডিস্যাবল (নিষ্ক্রিয়) করে দেওয়া হচ্ছে।

ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনে বলা আছে, এ ওয়েবসাইটে কোনও প্রকার টোরোরিজম বা জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালানো যাবে না। আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত কারও সম্পর্কে কোনও পোস্ট করলে বা ছবি আপলোড করলেই তা কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গ করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর এ ধরনের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গ করার বিষয়ে রিপোর্ট করা মাত্রই গ্রুপ বা পেজ রিমুভ করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি ফেসবুক এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button