ইন্টারনেট ডেটার দাম ও মেয়াদে সন্তুষ্ট নন গ্রাহকরা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ইন্টারনেট ডেটার দাম ও মেয়াদ কেমন হওয়া উচিৎ এমন প্রশ্নে জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গ্রাহকই সিম অপারেটরদের বর্তমান নিয়মে সন্তুষ্ট নন।
এমনকি গ্রাহকরা সিম অপারেটরদের চলমান নিয়মে পরিবর্তন চান বলেও উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) ঢাকার রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে “মোবাইল অপারেটরসমূহের সেবা (প্যাকেজ এবং ডেটার মূল্য) সংক্রান্ত” এক মতবিনিময় সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।
বিটিআরসি জানিয়েছে, মোবাইল ডেটার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি খসড়া পরিকল্পনা করেছে তারা। এজন্য অনলাইনে জরিপটি করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫৪৯ গ্রাহক অংশ নেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী।
তথ্য বলছে, দেশে মোবাইল অপারেটরগুলো এখন ৩,৭, ১৫ ও ৩০ দিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে পারে। এর বাইরে ‘আনলিমিডেট’ বা নির্দিষ্ট মেয়াদহীন কিছু প্যাকেজ রয়েছে, যার জনপ্রিয়তা কম এবং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে শুধু সে ক্ষেত্রে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যুক্ত হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যারি ফরোয়ার্ড’। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই নিয়মের পরিবর্তন চান গ্রাহকেরা।
জরিপের তথ্য বলছে, দেশের প্রায় ৮৮% মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক চান, তাদের কেনা প্যাকেজের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী যেকোনো প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক।
গ্রাহকরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ কিনলে অনেক সময় দেখা যায়, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ডেটা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ যদি আগের কেনা প্যাকেজটি আবার কেনেন, তাহলে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের মেয়াদ শেষের আগে প্যাকেজ কিনতে মনে থাকে না। আবার অনেক গ্রাহক ভিন্ন প্যাকেজ কেনেন। তখন আর অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয় না।
সিম অপারেটরদের এই বিষয়টিতে নীতি কেমন হওয়া উচিৎ এ প্রশ্নে, প্রায় ৮৮% গ্রাহক মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতি চেয়েছেন।
অন্যরা মেয়াদকালের মধ্যে একই পরিমাণের ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজ কিনলে এবং মেয়াদের মধ্যে একই প্যাকেজ কিনলে, অব্যবহৃত ডেটা যোগ হওয়ার নীতির পক্ষে।
বিটিআরসির উপস্থাপনায় এ ক্ষেত্রে আলাদা হার উল্লেখ করা হয়েছে।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, “বেশিসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে রাখার মত দিয়েছেন। বেশিরভাগ গ্রাহক চান, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ হওয়া উচিত তিনটি- ৭ দিন, ৩০ দিন ও নির্দিষ্ট মেয়াদহীন (আনলিমিটেড)।”
এতে প্রশ্ন ছিল, ডেটার দাম কেমন হওয়া উচিত? সেখানে ৫৩% গ্রাহক বলেন, “প্রতি গিগাবিট (জিবি) ইন্টারনেটের দাম যেকোনো মেয়াদের জন্য সমান হওয়া উচিত।”
তবে ২৭% গ্রাহক ভিন্ন মেয়াদের জন্য ডেটার দাম ভিন্ন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন।
আর বাকিরা স্বল্পমেয়াদি ডেটার দাম কম হওয়া উচিত বলে মত দেন।
ডেটা প্যাকেজের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা উচিৎ ও ভিন্ন মেয়াদের প্যাকেজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ২১% গ্রাহক।
আর বাকিরা অর্ধেক প্রতি জিবির জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য এবং অর্ধেক ভিন্ন মেয়াদের ডেটার জন্য একই সর্বনিম্ন ও ভিন্ন ভিন্ন সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
সভায় ডেটার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অনেকেই দাম নির্ধারণের বদলে মান উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেন।
টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়াকেও প্রাগৈতিহাসিক চিন্তা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “বাজারে অনেক প্রতিযোগিতা আছে। দাম নির্ধারণের বদলে যে অসংগতি আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জাবের বলেন, “বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে দাম বেঁধে দিতে হয় না।”
মোবাইল অপারেটরগুলোর বর্তমান প্যাকেজ–পদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সেবার মান বাড়ানোর দিকে বিটিআরসির নজর দেওয়া উচিত।”
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, “প্যাকেজ বেশি থাকলে গ্রাহকেরা বিশেষ করে তরুণেরা পছন্দেরটি বাছাই করে নিতে পারেন।”
মতবিনিময় সভায় সরাসরি ও অনলাইনে বেশ কয়েকজন গ্রাহক যুক্ত ছিলেন। তারা সেবার মান নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান। উপস্থিত বেশির ভাগ গ্রাহক ছিলেন টেলিটকের।
অপারেটরদের মধ্যে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম টেলিযোগাযোগ সেবার ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “১০০ টাকার মধ্যে নানা রকম কর ও ফি হিসেবে সরকারের কোষাগারে যায় ৫৪ টাকা।”
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ সভায় জানান, মতবিনিময় সভায় যেসব মতামত এসেছে, তা পর্যালোচনা করা হবে।
বিটিআরসির কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মাহবুব-উল-আলম, গ্রামীণফোনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।