মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানিতে বড় বাধা চাহিদাপত্রের সত্যায়ন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে শ্রমিকের চাহিদাপত্রের সত্যায়নের জটিলতা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদাপত্রের সত্যায়নের আবেদন দূতাবাসে জমা পড়ে আছে। অনেক শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার পরও সত্যায়ন হচ্ছে না। কলিং ভিসার সবধরনের অনুমতির পরও সত্যায়নের দীর্ঘসূত্রতায় যথাসময়ে মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না শ্রমিকরা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। ধীরে ধীরে এ শ্রম বাজার অন্য দেশের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে প্রচলিত নিয়মের সর্বশেষ ধাপ—যে দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেবে, সেই দেশে অবস্থিত হাইকমিশন কর্তৃক চাহিদাপত্রের সত্যায়ন। কিন্তু শ্রমিকের চাহিদা পাঠানো প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মপরিবেশ ঠিক নেই, শ্রমিক খাটানোর সক্ষমতা নেই, বাসস্থান ঠিক নেই ইত্যাদি অভিযোগে চাহিদাপত্রের সত্যায়ন না করে দূতাবাসে ফাইল আটকে রাখা হচ্ছে। যদিও অভিবাসী কর্মসংস্থান চুক্তিতে এ সত্যায়নের কোনো নিয়ম নেই। শ্রমিক নিয়োগের আগেই কোম্পানি পরিদর্শনেরও কোনো সুযোগ নেই।

ভুক্তভোগী নরসিংদীর আসলাম, রাকিব ও সুজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কলিং ভিসার মেয়াদ বাকি আর সাত দিন।

এর মধ্যে না যেতে পারলে আমি তখন ভিসা নিয়ে কী করব? সুদে ধারদেনা করে ভিসার টাকা পরিশোধ করেছি। যদি সময়মতো মালয়েশিয়ায় যেতে না পারি, তখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব?

গোপালগঞ্জের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ছোট-বড় কোম্পানিভেদে লাখ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ও দামি উপহারের বিনিময়ে সহজে পাওয়া যায় চাহিদাপত্রের সত্যায়ন। অথচ অনলাইনের মাধ্যমে এ সত্যায়ন খুব সহজে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেই করা সম্ভব। সত্যায়ন খুব দ্রুত করতে পারলে শ্রমিক পাঠানো দ্রুত হবে, খরচ কমবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলোর তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে। শ্রমিকের চাহিদা পাঠানো কোম্পানিগুলো সে দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে অভিযোগও দাখিল করেছে। পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে শ্রমিক নিয়োগের আগেই কোম্পানি পরিদর্শন না করতে লিখিত নির্দেশ দিতে বাধ্য হয় মালয়েশিয়ান সরকার। ফলে দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়ন বিড়ম্বনার অভিযোগে একদিকে যেমন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে নেপাল, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ থেকে সহজ প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শ্রমিক দেশটিতে ঢুকে পড়ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুনামের কারণে চাহিদা থাকলেও মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কোম্পানির মালিকরা। এতে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স হারানোর শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের দাবি, হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন দিতে যেহেতু দীর্ঘসময় লাগছে, তাই মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করার ব্যবস্থা করলে কর্মী পাঠানোয় গতি আসত। না হলে এখনকার এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংকটে পড়বে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক শিমুল আবেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাসের পর মাস, ৫-৬ মাস হয়ে যাচ্ছে সত্যায়ন দিচ্ছে না। দূতাবাসে যাওয়ারও কোনো সিস্টেম নেই। এটা অনলাইনে সাবমিট করা হয়।

ভিসা সত্যায়নের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দূতাবাসের লেবার মিনিস্টার নাজমুস সাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দূতাবাসের স্বল্প জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অপেক্ষায় থাকা নতুন কর্মীদের কোম্পানির সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সত্যায়ন দেওয়ার কার্যক্রম খুব দ্রুত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে অপেক্ষামাণ কর্মীরা সত্যায়ন পেয়ে যাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button