ঈদের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রাজধানীর গুলশানে একজন, নরসিংদীতে দুইজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় তিনজন, পঞ্চগড়ে দুইজন, এবং খাগড়াছড়ির গুইমারায় দুইজন।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পৃথক পৃথক সময়ে এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মারা যান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মমতা শিকদার (২৭) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় শেখ জাহিদ কামাল (৩০) নামে চালক গুরুতর আহত হয়েছে। তারা দুইজন ইউনাইটেড হাসপাতালের অফিসার পদে কর্মরত।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশান ৫৫ নম্বর সড়কের মুখে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুমুর্ষ অবস্থায় ওই নারীকে এক সিএনজিচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে নিয়ে আসা সিএনজিচালক সবুজ মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে সিএনজিযোগে বিমানবন্দর এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছিলাম। পথে গুলশান দুই নম্বর সড়কে দেখতে পাই একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। পরে ওই নারীকে আহত অবস্থায় সিএনজিতে উঠিয়ে হাসপাতালে পাঠাই। স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিকেলে নিলে ওই নারীর মারা যায়।
গুলশান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশান ৫৫ নম্বর সড়কের মুখে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন। মোটরসাইকেলচালক গুরুতর আহত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তিনি আরও জানান, মৃত ওই নারীর নাম মমতা শিকদার (২৭) তার বাসা গুলশান কালাচাঁদপুর এলাকায়। আহত জাহিদ কামালের বাসা পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায়। তারা দুজনই ইউনাইটেড হাসপাতালের চাকরি করেন। ডিউটি শেষ করে মোটরসাইকেলে করে ওই নারীকে কালাচাঁদপুরের বাসায় নামাতে যাচ্ছিলেন জাহিদ।
নরসিংদী: নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর দগরিয়া নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার গাউছিয়া শাওগাট এলাকা শাহিন (২৩) ও সানি (২২)।
নিহতের স্বজনরা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলার গাউছিয়া শাওগাট এলাকা থেকে ৩ বন্ধু শাহিন, সানি ও সায়েম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ভৈরব বেড়াতে যায়। বেড়ানো শেষে তারা গাউছিয়া বাড়ি ফিরছিল। মোটরসাইকেলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর দগরিয়া এলাকায় একটি বাসকে ওভারটেক করছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি যাত্রীবাহী বাস ওই মোটরসাইকেলটিতে ধাক্কা দেয়। ওই সময় মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সানি ও শাহিন মারা যায়। গুরুতর আহত হয় সায়েম নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহী। তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালে পাঠানো চিকিৎসক সায়েমকে ঢাকায় পাঠান।
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ইলিয়াস সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন মারা গেছেন। তাদের মরদেহ জেলা হাসপাতালে রয়েছে।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ঈদে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে উপজেলার সীমান্ত এলাকার সড়কের লেংগুড়া ইউনিয়নের চিংন্নী বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকরা হলেন, উপজেলা নাজিরপুর ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৪), আমতলা গ্রামের মো. জয়নাল মিয়ার ছেলে হালিম মিয়া (২২) ও হাটশিরা শিবনগর গ্রামের মজিবুর মিয়ার ছেলে নবী হোসেন (৩৫)।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক সংবাদ মাধ্যমকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পঞ্চগড়: ঈদ আনন্দে ঘুরতে বের হয়ে পঞ্চগড়ে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় আহত হয়ে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও চারজন।
দুপুরে উপজেলার পৌরসভার নতুনবন্দর এলাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কালিগঞ্জ ইউনিয়নের লোহাগারা শুপারিতোলা গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন (১৬) , একই এলাকার বাসেত আলীর ছেলে কাউছার আলী (১৫), দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের খাঁ পাড়া এলাকার মজনুর ছেলে সাব্বির (১৭), একই এলাকার হযরত আলীর ছেলে বরকত (১৬)।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম সংবাদ মাধ্যমকে দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির গুইমারায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, মেহেদী হাসান পায়েল (২০) ও আলী হোসেন (১৭)। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) গুইমারার বটতলী ও বড়পিলাক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন।
জানা যায়, সকালে গুইমারার বটতলী এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে শান্তি পরিবহনের বাস ধাক্কা দিলে আলী হোসেন নামের মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হয়। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সময় সড়কে তার মৃত্যু হয়। তিনি গুইমারা মুসলিম পাড়ার মো. হারুনের ছেলে। অপর ঘটনায় উপজেলার বড়পিলাক এলাকায় মেহেদী হাসান পায়েল মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। এ সময় অপরদিক থেকে আসা আরেকটা মোটরসাইকেলের আঘাতে গুরুতর আহত হন। তাকেও চট্টগ্রাম নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। তিনি বড়পিলাক এলাকায় মৃত জামাল হোসেনের ছেলে।
গুইমারা থানার ওসি আরিফুল আমিন সংবাদ মাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।