আন্তর্জাতিকআলোচিত

যুদ্ধের ঘোষণা নরেন্দ্র মোদির, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হলো সেনাবাহিনীকে

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধের দামামা বেজেই গেল। কাশ্মীরের পাহালগামে হামলার জবাব দিতে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন শাখাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা (কমপ্লিট অপারেশনাল ফ্রিডম) দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জরুরি বৈঠক ডেকে ওই ঘোষণা দেন তিনি।

কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে সামরিক পদক্ষেপের ধরন, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ পেয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারত যে জবাব দেবে তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ ভারতের শীর্ষ নেতারা। সেই অঙ্গীকার কার্যকর করতে এবার সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হলো।

নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ, বিশেষ করে পাহালগামে জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দেবে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগগুলো।

এদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে জম্মু-কাশ্মীরের মোট ৮৭টি ট্যুরিস্ট স্পটের মধ্যে (দর্শনীয় স্থান) ৪৮টি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

দুই দেশের উত্তেজনামূলক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার তিনি আলাদাভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক জানান, এই ফোনালাপে গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তাই এমন পরিস্থিতি এড়াতে হবে। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করতে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

দিল্লির সচিবালয় সাউথ ব্লকের একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার সময়, ক্ষণ এবং কীভাবে জবাব দেওয়া হবে তা স্থির করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তিন বাহিনীকে। পাকিস্তানের ওপর হামলার টার্গেটও স্থির করবে প্রতিরক্ষা বাহিনী।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণ যায়। এরপর থেকেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার কথা সরকারিভাবেই বলা হয়েছিল। সেই জবাব কী হতে পারে, তা ঠিক করতে গতকাল মোদির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ বৈঠক হয়েছে।

বড় কিছু যে ঘটতে চলেছে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল গতকাল বিকেল থেকে। হঠাৎই শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির সরকারি বাসভবনে ডাকা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান। এ ছাড়া ছিলেন সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী ও বিমানবাহিনী প্রধান অমরপ্রিত সিং। অন্যদিকে, এ দিন প্রায় একই সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরও একটি গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সচিবসহ বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

জম্মু-কাশ্মীরে বন্ধ অর্ধশত ট্যুরিস্ট স্পট

নিরাপত্তাজনিত কারণে জম্মু-কাশ্মীরের ৪৮টি ট্যুরিস্ট স্পট বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার এসব স্থানে এখন দর্শণার্থীরা যেতে পারবেন না। বন্ধ ঘোষণা করা এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ও পর্যটকদের পছন্দের দুদপাঠরী, কোকেরনাগ, দাকসুম, সিনথান টপ, আচাবল, বাঙ্গুস ভ্যালি, মারগান টপ ও তোসাময়দান। পাশাপাশি দক্ষিণ কাশ্মীরের মোগল গার্ডেনও বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভারত সরকার ঘোষণা না দিলেও এসব দর্শনীয় স্থান মাঠপর্যায়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভারতে বন্ধ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এক্স অ্যাকাউন্ট

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স অ্যাকাউন্ট ভারতে বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে ভারত থেকে ব্যবহারকারীরা তার অ্যাকাউন্টের পোস্ট দেখতে পাবেন না। পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে গতকাল এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। খাজা আসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি সন্ত্রাসবাদকে লালন করছেন। এর আগে পাকিস্তান সরকারের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয় প্ল্যাটফর্মটির কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় তারা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।

এর আগে জনপ্রিয় ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে ভারত সরকার। এসব ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। ‘উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।

ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী গতকাল আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে। পাহালগামে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।

স্থানটি নির্দিষ্ট করে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান তার আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে নিয়ন্ত্রণ রেখায় একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার (চারপাখা-বিশিষ্ট ড্রোন) সফলভাবে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। আজাদ কাশ্মীরের ভিম্বের জেলার মানাওয়ার সেক্টরে একটি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে নজরদারির চেষ্টা করা হচ্ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সময়মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শত্রুর এই নিকৃষ্ট প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।’

নিরাপত্তা সূত্র এই ঘটনাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সতর্কতা, পেশাদার দক্ষতা এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে অভিহিত করেছে। এক সামরিক সূত্র বলেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বদা শত্রুর যেকোনো আগ্রাসনের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর জবাব দিতে প্রস্তুত। সমগ্র জাতি প্রতিটি ফ্রন্টে শত্রুকে যথাযথ জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।

২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। সূত্রমতে, নরেন্দ্র মোদির এই বার্তা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পথ প্রশস্ত করেছে। ২০১৯ সালে বালাকোটে ভারত বিমান হামলা চালিয়েছিল। এবারও নিষিদ্ধ পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার নাম উঠে এসেছে।

ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুরু করেছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে (হিন্দু ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারী বাদে)। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত, যা পাকিস্তানের ৮৫ শতাংশ পানির যোগান দেয়। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধের শামিল কাজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

মোদি এর আগে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, সন্ত্রাসের অভিশাপ মিটিয়ে দেব। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসের মদদদাতাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।

সূত্র: ডন, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button