জঙ্গিরা ফের সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ৩ বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। নৃশংস সেই হামলার পর জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২২০ জঙ্গি গ্রেফতার এবং ৮৮ জন নিহত হয়েছে। মাঝপথে জঙ্গিরা অনেকটা দুর্বল হয়ে গেলেও সম্প্রতি তাদের ফের সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও র্যাব সূত্র বলছে, নতুন কেউ জঙ্গি সংগঠনের হাল ধরতে পারে। যার ফলে জঙ্গিরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তাদের হামলার সক্ষমতা নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি পুলিশকে লক্ষ্য করে রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে দুটি বোমা হামলায় জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাছাড়াও ঈদ জামাত কেন্দ্রিক জঙ্গিদের একটা হামলার আশঙ্কাও ছিল।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, দেশে বড় ধরনের নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও সারাদেশে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে জঙ্গিরা নিজেদের সংগঠিত হওয়ার খবর জানান দিচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতনের পর সিরিয়া-ইরাক থেকে ফিরতে চাওয়া জঙ্গিদেরও মাথায় রাখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।
র্যাব-পুলিশ বলছে, দেশের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের বেশ সফলতা রয়েছে। জঙ্গিরা যতই সক্রিয় হতে চেষ্টা করুক র্যাব-পুলিশ তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান দেখিয়ে জঙ্গি নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, শুধু র্যাব ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে গত ২৬ জুন পর্যন্ত ৬৮৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। এ সময়ের মধ্যে র্যাবের ২৪১টি অভিযানে নিহতও হয়েছে ২৫ জঙ্গি।
সিটিটিসির পরিসংখ্যান বলছে, হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫৩৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে ১৯টি অপারেশনে ৬৩ জঙ্গি নিহত হয়েছে। র্যাব ও সিটিটিসির অভিযানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২২০ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। নিহত হয়েছে ৮৮ জন। তাই বলাই যায় তারা আর সক্রিয় হতে পারবে না।
জঙ্গিদের বর্তমান সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, যেকোন আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক বা জাতিগত ঘটনার প্রভাব পড়ে জঙ্গিদের ওপর। নিউজিল্যান্ডে হামলার পর বাংলাদেশে ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিদের ভেতরে একটা আলোড়ন দেখেছি। এর পর পরই শ্রীলঙ্কায় হামলাও তাদের বড় অনুপ্রেরণা ছিল। তাদের ইনটেনশন থাকলেও ক্যাপাসিটি বিপর্যস্ত করে দেওয়ায় তারা কোন ধরনের নাশকতায় সক্ষম হয়নি।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, এ মুহূর্তে নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই। তবে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবং ১ জুলাইকে কেন্দ্র করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যদিও আমরা জানি বড় ঘটনা ঘটানোর মতো প্রস্তুতি ও সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই।
একই প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, জঙ্গি পরিস্থিতির ওপর সব সময় কঠোর নজরদারি চালিয়ে আসছে র্যাব। অভিযানের কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না জঙ্গিরা। তবে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। অপ্রীতিকর যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
সূত্র: বার্তা২৪.কম