স্যাটেলাইটভিত্তিক মোবাইল ওয়াই-ফাই সেবা : লাইসেন্স ছাড়া সেবার সুযোগ না থাকলেও বিটিআরসির অনুমোদন
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় স্যাটেলাইট পাওয়ারড স্মার্ট মোবাইল ওয়াই-ফাই (এসএম-ফাই) সেবা দিতে আগ্রহী ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) প্রতিষ্ঠান মসফাইভ টেল। এ সেবা প্রদানের জন্য তরঙ্গ বরাদ্দসহ একাধিক লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসব ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটিকে পরীক্ষামূলকভাবে সেবা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
জানা গেছে, কোরীয় প্রতিষ্ঠান এসএম ওয়েভ কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগিতায় দেশে পরীক্ষামূলকভাবে এসএম-ফাই সেবা দিতে আবেদন করেছে মসফাইভ টেল। চলতি বছরের এপ্রিলে এ সেবা চালুর উদ্দেশ্যে কমিশনে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রস্তাবিত পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) ভবন ও ধানমন্ডি এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।
সেবাটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় নেটওয়ার্ক পরিকল্পনাসহ বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ ও পুনঃরফতানির ভিত্তিতে বেতারযন্ত্র আমদানির অনুমতি প্রদানের আবেদনও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যাটেলাইটের কেইউ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়েছে তারা। আবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তুলনামূলক কম ব্যয়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। পরীক্ষামূলক সেবা দিতে ব্যবহার করা হবে ইনটেলস্যাট ৩৩ই স্যাটেলাইট। এটির অরবিটাল অবস্থানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অরবিটাল অবস্থানের মধ্যে প্রায় ৬০ ডিগ্রি দূরত্ব রয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রমের সঙ্গে এটি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।
পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক কাঠামো অনুযায়ী, এর সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশ হলো একাধিক ইউজার টার্মিনাল, ওয়াই-ফাই অ্যাকসেস পয়েন্ট (এপি) এবং ওয়্যারলেস ব্যাকহল নোডের সমন্বয়ে গঠিত ক্লাস্টার। এসব ক্লাস্টার আবার ল্যান্ড অ্যাকসেস স্টেশনের (এলএএস) সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এলএএস মূলত একটি ওয়্যারলেস ব্যাকহল নোড ও একটি ভি-স্যাটের সমন্বিত অংশ। স্যাটেলাইট ব্যাকবোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এটি আবার ল্যান্ড ব্যাকবোন স্টেশনের (এলবিএস) সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এলবিএসের সঙ্গে যুক্ত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) গ্রাহক পর্যায়ে সেবাটি পৌঁছে দেবে।
জানা গেছে, ইন্টারনেট সেবা দিতে প্রয়োজনীয় আইএসপি লাইসেন্স নেই মসফাইভ টেলের। স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে ভি-স্যাট অপারেটর লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেই প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়া তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য অনুমোদন নেই তাদের। সেবাটির জন্য এখনো কোনো নীতিমালা না থাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সেবাটি দিতে কমিশনের নীতিমালা বা বিধিমালা তৈরির প্রয়োজনও রয়েছে। এত কিছু না থাকা সত্ত্বেও সেবাটির পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। পরীক্ষামূলকভাবে সেবা দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক সেবাদানের বিষয়ে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
জানা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের ছেলে জিয়াউল হক মসফাইভ টেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রুহুল হকের স্ত্রী ইলা হক প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অংশীদার বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আইজিডব্লিউর লাইসেন্স পায় মসফাইভ টেল। বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে আরো পাঁচ আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মসফাইভ টেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, একাধিকবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও সরকারের পাওনা ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় মসফাইভ টেলকে ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর ৪৬ ধারা অনুযায়ী দেয়া এ নোটিসে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না, তা ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি একই বছরের ১২ মার্চ কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দেয়।
জবাব পর্যালোচনা করে ওই বছরের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটিকে বকেয়া অর্থ এক বছরের মধ্যে সমান ১২টি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এজন্য অঙ্গীকারনামা প্রদানের বিষয়ে চিঠি দেয়া হয় মসফাইভ টেল লিমিটেডকে। চিঠির জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এক বছর ধরে অত্যন্ত আর্থিক সংকটে রয়েছে তারা। তবে এর মধ্যেও সরকারের পাওনা অর্থের ১০ শতাংশ হিসেবে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে। আর বাকি অর্থের জন্য ছয় মাসের ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়ার আবেদন করে মসফাইভ টেল। পরবর্তী সময়ে আরো ১৫ শতাংশ অর্থ জমাদানের শর্তে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সূত্র: বণিক বার্তা