ক্যাসিনো নিয়ে কত দূর যেতে পারবে দুদক?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দুদকের মামলায় সাজার হার বেড়েছে। পাচার হওয়া কিছু টাকাও উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের কতজনকে আইনের আওতায় আনতে পারছে দুদক? বিশেষ করে ক্যাসিনোবিরোধী মামলায় দুদক কতদূর যেতে পারবে সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর দুদকও মামলা শুরু করে। এ পর্যন্ত ২২ জনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা করেছে দুদক। তাদের সম্পদেরও অনুসন্ধান করছে৷ এখন পর্যন্ত যারা দৃশ্যমান তাদের নিয়েই অনুসন্ধান চলছে৷ কিন্তু আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসছে তাদের নিয়ে দুদকের আপাতত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দুদকের সূত্র জানায়, তাদের তথ্যগুলো নথিভুক্ত করে রাখা হবে। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তখন কাজে লাগানো হবে।

ক্যাসিনো দুর্নীতির সর্বশেষ মামলাটি হয়েছে বুধবার। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমীন পারভীনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৬৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিন্তু ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় যেসব এমপি এবং যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নাম এসেছে তাদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদের আওতায়ই আনা হয়নি, মামলাতো দূরের কথা৷ যদিও দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ১৮৭ জনের নামের কথা বলেছেন৷ কিন্তু তাদের নাম বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

দুদক এপর্যন্ত জিকে শামীমের ২৪৭ কোটি টাকা, খালেদের ৭৫ কোটি টাকা এবং লোকমানের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে। আর সম্রাটের দেশে তেমন কিছু না পেলেও দেশের বাইরে ১০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। তবে সেটা উদ্ধার কি প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে সংশয়ে আছে দুদক৷ আর অন্য মামলাগুলোর সম্পদের অনুসন্ধান এখানো চলছে।

দুদক সূত্র দাবি করেছে, ক্যাসিনো বিষয়ে কমপক্ষে একশ’ মামলা হবে। কিন্তু সেই মামলাার আসামিরা কোন পর্যায়ে হবে তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না। দুদক চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় এ নিয়ে তার কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। তবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘‘এখনো অনুসন্ধান শেষ হয়নি৷ তাই ঠিক এখনই বলা যাচ্ছে না যে কত জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমরা তথ্য প্রমাণে যতজনকে পাই সবার বিরুদ্ধেই মামলা হবে৷ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। শেষ হয়েছে তা বলা যাবে না।”

আর দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মইদুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘দুদকের তদন্ত প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা আছে। নিজস্ব উপায়ে তথ্য সংগ্রহের চেয়ে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিকদের অভিযোগের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রাথমিক পর্যায়েই অনেক তথ্য বাইরে গেলে পরে তা নিয়ে কথা হয়। তাই আগে তথ্য নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।”

দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজার হার বেড়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তার দেয়া তথ্য মতে দুদকের মামলায় সাজার হার এখন ৬৮ শতাংশ। ২০১১ সালে এটা ছিলো ২০ ভাগ। চলতি বছরের ১১ মাসে ৪৩৫টি মামলা করেছে। এই সময়ে চার্জশিট দিয়েছে ৪০০ মামলায়।

দুদক জানায়, গত সাড়ে তিন বছরে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম ও মামলায় এক হাজার ২৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তারা নিজেরাই গ্রেপ্তার করেছে ৮১৬ জনকে।

এই সময়ে ব্যাংক খাতে লোপাট হওয়া প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত এসেছে বলে দুদকের দাবি। তবে ২০১১ সালের তুলনা করলে দুদকের মামলা কমছে। ওই বছর মোট মামলা হয়েছিল ৫৩৫টি।

দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘‘আমরা এখন অভিযোগ ভালেভাবে যাচাই বাছাই করছি। আদালতে যে মামলা প্রমাণ করা যাবে না সেই মামলা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি না। ফলে মামলা কমলেও সাজার হার বেড়েছে।”

কিন্তু দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘দুদকের ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে মাত্র ৩০ ভাগ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত দুদক মামলা করে। ৭০ ভাগই অনুসন্ধান পর্যায়ে শেষ হয়ে যায়৷ এটা দেখা দরকার। এটা কী অনুসন্ধানের অদক্ষতা না অন্য কোনো কারণে হয় তা দেখতে হবে। কারণ এর পিছনে জনবল ও অর্থ খরচ হয়। তাই অনুসন্ধান শুরুর আগেই অভিযোগ গুলোর ব্যাাপরে প্রাথমিক নিশ্চিত তথ্য থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় তাদের নিজস্ব তথ্য অনুসন্ধান ক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ তা করা হলে অনেক অভিযোগ আর দুই বছর ধরে তদন্ত করতে হবে না।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button