সৈনিক থেকে ফিরে কালীগঞ্জে বাড়ি বাড়ি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে মাহমুদুল হাসান
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সকলেই যখন ঘর বন্দি ঠিক সেই সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি ঔষধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘কালীগঞ্জ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি সেবামূলক উদ্যোগ নিয়েছে কালীগঞ্জের স্থানীয় যুবক মাহমুদুল হাসান।
চলতি মসের প্রথম দিন থেকে চলছে এই সেবা কার্যক্রম। এরই মধ্যে ‘কালীগঞ্জ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় বিশ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
আপনাদের সেবায় আমরা নিয়োজিত, বাজার নিয়ে ঝামেলা আর নয় এসে গেছে ‘কালিগঞ্জ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’। যে কোন ধরনের পণ্য আপনার বাসায় পৌঁছে দিতে প্রস্তুত আমরা। পণ্যের বাজার মূল্যের সঙ্গে শুধু রিক্সা ভাড়া ডেলিভারি চার্জ হিসেবে যুক্ত হবে। যোগাযোগ ০১৯২৪ ৯০৩ ০৪৯ ও ০১৮১৭ ৯৮৭ ৩২৫। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে এমন প্রচারের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করে মানুষের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে উদ্যোক্তারা।

‘কালীগঞ্জ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ এর উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১১ সালে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার পায়ে কিছু সমস্যা থাকায় ২০২০ সালের ২৮ মার্চ সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বাড়ি চলে আসি। সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে বর্তমানে অনেকেরই বাড়ি থেকে বাজারে এসে ঔষধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিভাবে মানুষকে সেবা প্রদান করা যায় এই চিন্তা থেকেই সম্পূর্ণ সেবামূলকভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমারা ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করে মানুষের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেই। ঔষধ থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, মসলা, কসমেটিক্স, কাঁচা বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যই আমরা সংগ্রহ করে তা বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনায় রেখেছি।
মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পণ্যের বাজার মূল্যের সঙ্গে শুধু রিক্সা ভাড়া ডেলিভারি চার্জ হিসেবে যুক্ত করে এই সেবা দিচ্ছি আমারা। এ কাজে আমার সঙ্গে আরো দু’জন সহযোগীতা করছে। তাদের মধ্যে একজন জহিরুল ইসলাম সে মুদি মনোহারী দোকান করে অপরজন দ্বীন ইসলাম শাওন সে হা-মীম গ্রুপে ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত’।

মাহমুদুল হাসান আরো বলেন, আমরা বর্তমানে কালীগঞ্জ পৌরসভা এবং তুমুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আমাদের এই সেবা দিচ্ছি। প্রয়োজনে পরবর্তীতে পুরো কালিগঞ্জ উপজেলায় এই সেবা প্রসারিত করার ইচ্ছে আছে। দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে মানুষের সেবা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা বর্তমানে বাইসাইকেল আবার কখনো (পণ্য বেশী হলে) রিক্সাযোগে ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টার মধ্যেই প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি।
মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘অবরুদ্ধ এই সময়ে গরীব অসহায় মানুষের জন্য প্রশাসনসহ সকলের দেওয়া সহায়তা আমরা বিনা চার্জে গরীব অসহায় মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে প্রসতু আছি’।
‘কালীগঞ্জ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ থেকে সম্প্রতি সেবা নিয়েছেন এমন কয়েকজন নারী বলেন, ঘরে বসে ফোন করে প্রয়োজনীয় সকল পণ্য পেয়ে আমরা দারুণ খুশি। এই সময়ে আমরা নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছি। প্রয়োজনেও বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে যেতে পারছি না। এই সময়ে ফোন করলেই ঘরে বসে বাজার মূল্যেই পণ্য পাচ্ছি। অতিরিক্ত দাম না দিয়ে শুধুমাত্র রিক্সা ভাড়া যুক্ত করলেই হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক বলেন, এই সময়ে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে সকল নিয়ম মেনেই যেন এই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।