করোনাকে অবজ্ঞার পরিণাম বাংলাদেশের জন্য হবে ভয়াবহ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিশ্বের উন্নত আধুনিক দেশগুলো যখন দুই মাস পর ‘লক ডাউন’ শিথিল করার চিন্তাভাবনা করেছে, সীমিত আকার বা আস্তে আস্তে লক ডাউন শিথিল করছে, সেখানে বাংলাদেশ একমাসের মাথায় প্রায় অর্ধেক লক ডাউন তুলে নিয়েছে।
এমনিতেই সাধারণ ছুটি ছিল ঢিলেঢালা, ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছিল, সারাদিনই বিভিন্ন বাজার হাটে মানুষের জমায়েত দেখা গেছে, এক স্থান থেকে মানুষ আরেক স্থানে চলে গেছে নানা অজুহাতে, বাস, ট্রলার, ট্রেন নানা গুপ্তপথে মানুষ স্থানান্তর হয়েছে যেটা সামাজিক সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। কিন্তু তারপরও একটি ছুটি ছিল। আংশিক হলেও এই ছুটির কারণে করোনার সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানোর একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছিলেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখন ত্রিশ দিনের মাথায় সরকার প্রায় অর্ধেকটা খুলে দিয়ে করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো, অবজ্ঞা করলো করোনাকে। বাংলাদেশের সরকারী মহলের কিছু কিছু ব্যক্তির ভাবভঙ্গি এবং আলাপ আলোচনা কথাবার্তার ধরণ এরকম যে, করোনায় বাংলাদেশে কিচ্ছু হবে না। করোনায় বাংলাদেশে বড় ধরণের কোন প্রভাব ফেলবে না। বরং করোনার কারণে এরকম বন্ধ থাকাটা অনুচিত হচ্ছে।
শনিবার এফবিসিসিআই এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল, যার আলোচনায় টাকা উপার্জনে মরিয়া ব্যবসায়ীরা যে কোন মূল্যে শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত চাপে তাপে শেষ পর্যন্ত সরকার ১৮ টি মন্ত্রণালয়সহ গার্মেন্টস কারখানা খুলে দিয়েছে। শুধু গার্মেন্টস নয়, আরো কিছু রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দিয়ে করোনাকেই চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জে কি বাংলাদেশ জিততে পারবে?
আমরা যদি দেখি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় যে আক্রান্ত হয়েছে সেই আক্রান্তের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। কিন্তু যতজনের পরীক্ষা হয়েছে তা থেকে এটি বলার কারণ নেই, বাংলাদেশে করোনার মহামারি সংক্রমণের আশংকা নেই। বরং পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরী হয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেই বাস্তবতায় আরো কিছুদিন, অন্তত সরকার ঘোষিত ৫ মে পর্যন্ত যে ছুটি ছিল তা কঠোরভাবে পালন করা উচিত ছিল। অন্তত গার্মেন্টস এবং অন্যান্য শিল্প কারখানা বন্ধ করার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। আমরা এই ৪৫ দিন বা দুই মাস যদি বন্ধ রাখতাম তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে খুব মহাভারত অশুদ্ধ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু সরকারের কাছে এমন সব তথ্য দেওয়া হচ্ছে যাতে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর হলো গার্মেন্টস না খুলে দেওয়া এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট।
অন্যদিকে সরকারের কাছে এই তথ্যও দেওয়া হচ্ছে, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজারের কিছু বেশি যেটা খুব বড় বিষয় না। ইতালি, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশে পরিস্থিতি নেই। কাজেই এখনি বাংলাদেশে যদি কলকারখানা খুলে না দেওয়া হয় তাহলে করোনার জন্য নয়, অভাবের কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে ভুগবে এবং মারা যাবে। আর এই সমস্ত বুদ্ধি দিচ্ছে সরকারের ভিতরে থাকা নানা রকম সিন্ডিকেট এবং প্রেসার গ্রুপ।
আমরা দেখেছি যে, গত ১১ বছরে সরকারের কাঠামোতে গার্মেন্টস মালিকরা একটা বড় জায়গা তৈরী করে নিয়েছে। তারা একের পর এক মনোনয়ন পায় নির্বাচনে। এখান থেকে বোঝা যায় ক্ষমতার কেন্দ্রে তাদের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তারপরও যে শেখ হাসিনা তাদের একমাস গার্মেন্টস খোলা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, এটি একটি বড় বিস্ময়। আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশে অন্যান্য যে শিল্প গ্রুপ আছে তারাও কম যান না, তারা জনগনের স্বার্থে বা জনস্বার্থের চেয়ে তাদের কারখানাকে চালিয়ে রাখাটাকেই বড় করে দেখছে।
অথচ দেখুন এই সময়ে ফুল চাষীরা প্রায় নি:স্ব হয়েছে তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। এই সময় ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, পয়লা বৈশাখের ছোট ছোট কুটির শিল্পের যে ব্যবসা তা যে পথে বসে গেছে, হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিকরা নি:স্ব হয়ে গেছে- তাদের জন্যও কথা বলার কেউ নেই। শুধু মাত্র কথা বলা হচ্ছে যাদের কেন্দ্রীক ক্ষমতা আছে। আর তাদের ভুল পরামর্শ, তথ্য ও দিক নির্দেশনায় করোনাকে আমরা অবজ্ঞা করছি। যার পরিণাম বাংলাদেশের জন্য হতে পারে ভয়াবহ।



