যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন চীনের প্রেসিডেন্ট

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শুধু সীমান্তে হাতাহাতি বা আগ্রাসনের মধ্যে দিয়েই বিরোধ মিটছে না। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বললেন দেশের সেনাবাহিনীকে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ”সব চেয়ে খারাপ পরিস্থতির জন্য তৈরি হতে হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সেনার প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।” চীনের প্রেসিডেন্ট কোন দেশের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা করছেন তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি। তবে সীমান্ত বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে তাকালে দেখা যাবে ভারত ও চীনেরমধ্যে উত্তেজনা অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রবল উত্তেজনা রয়েছে। চীন এখানে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা জল ও বায়ুসীমা লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ। লাদাখ ও উত্তর সিকিমে দুই দেশই সেনা ও সমরাস্ত্রের সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়েছে।

লাদাখ সীমান্তের কাছে চীনের সামরিক ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘাঁটিতে ব্যাপকভাবে নির্মাণকার্য চলছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, চারটি যুদ্ধবিমান সেখানে রয়েছে। চীন সেখানে যুদ্ধবিমান ওঠানামার জন্য আরও একটি টারম্যাক তৈরি করেছে। এপ্রিল ও মে মাসের দুইটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন সেখানে নির্মাণকাজ কী পরিমাণে বাড়িয়েছে। আরেকটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন জে১১/জে১৬ যুদ্ধবিমান সেখানে রেখেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের সুখোই ৩০ বা রাফালের সমগোত্রীয়। ভারতের অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার সমীর জোশি এনডিটিভিকে বলেছেন, চীনের যুদ্ধবিমানগুলি ওই উচ্চতায় এক ঘণ্টার বেশি উড়তে পারবে না। সেই তুলনায় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলি সমতলের এয়ারবেস থেকে তিন থেকে চার ঘণ্টা উড়তে পারবে। অবশ্য তার জন্য এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ব্যবহার করতে হবে।

চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের আগে তিন বাহিনীর প্রধান প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সীমান্ত পরিস্থিতি ও ভারতের তরফে প্রস্তুতির কথা জানান।

নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসও একটি নোটিশ দিয়ে বলেছে, ভারত থেকে যে সব চীনারা দেশে ফিরতে চান, তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক অবশ্য একে করোনা এবং ভারতকে চাপে রাখার কৌশল হিসাবেই দেখছে।

তবে চীনেরসমস্যা শুধু ভারত নয়। তাঁদের আরও বড় সমস্যা অ্যামেরিকা ও ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। করোনার জন্য যাবতীয় দায় ট্রাম্প চীনের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া চীনকে কোণঠাসা করতেও অ্যামেরিকা ঝাঁপিয়েছে। মার্কিন কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতারা এখন হামেশাই তাইওয়ানের সংযুক্তির কথা বলছেন। হংকং-এ চীন যেভাবে গণতন্ত্রপন্থীদের মোকাবিলা করছে তা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। চীনের অন্যতম প্রধান কূটনীতিক ওয়াং-ই দুই দিন আগে বলেছেন, অ্যামেরিকা সমানে চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে ও গুজব রটাচ্ছে। আবার ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুদ্ধকালীন সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে দিতে হবে। মিলিটারি মিশন সুসম্পন্ন করার জন্য আমাদের সেনার দক্ষতা প্রচুর বাড়িয়ে নিতে হবে। চীনের প্রেসিডেন্টের কথা ভারতের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button