কোভিড-১৯ : সংক্রমণে চীনকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মানবজাতিকে থমকে দেয়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুটা হয়েছিল মাস সাতেক আগে চীনের উহানে। পরবর্তী সময়ে চীনের ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। সর্দি-কাশি-জ্বরের লক্ষণ নিয়ে জটিল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করে মানুষ। রোগটির নাম দেয়া হয় কভিড-১৯। বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সেদিন মাত্র তিনজনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হলেও তিন মাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

চীনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ওয়ার্ল্ডোমিটার ডটকমের হিসাব বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৪ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৫২৩। শুক্রবার চীনে যেখানে মাত্র সাতজন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। সংক্রমণ যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে অলৌলিক কিছু না ঘটলে আজই চীনকে টপকে যাবে বাংলাদেশ।

করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হলেও সংক্রমিত শীর্ষ দেশগুলোর র্যাংকিংয়ে বেশ উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশের। আক্রান্তের বৈশ্বিক তালিকায় ওপরে উঠতে উঠতে বাংলাদেশ চলে এসেছে ১৯ নম্বরে। সংক্রমণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, চীনকে টপকে এই তালিকায় আজই ষষ্ঠ স্থানে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। সক্রিয় রোগীর (যাদের শরীরে এখনো ভাইরাসটি বিদ্যমান) বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

চীন থেকে শুরু হয়ে বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটিতে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৭৪ লাখ। মৃত্যু হয়েছে সোয়া চার লাখ মানুষের। বিপরীতে সুস্থও হয়েছে ৩৭ লাখের বেশি মানুষ। চীন থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ঘুরে করোনাভাইরাসের বর্তমান ভরকেন্দ্র এখন দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়া। রাশিয়ায় বাড়তির দিকেই রয়েছে সংক্রমণের হার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম রোগী ধরা পড়লেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটতে শুরু করে এপ্রিলের মধ্যভাগ থেকে। এরপর দিন যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে শনাক্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা। রাজধানী লাগোয়া বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে একে একে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সবক’টি জেলায়।

বাংলাদেশে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি। এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ হাজার রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছিল ৮২ দিন। পরের ৪০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১৫ দিনে। মোট রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার পেরোতে যেখানে ৪৬ দিন সময় লেগেছিল, সেখানে শুধু শুক্রবারই শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার (৩ হাজার ৪৭১)।

দিন দিন করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে বাংলাদেশে। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সব হাসপাতাল। চিকিৎসা পাওয়াটাই অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, খুব প্রভাবশালী কারো তদবির ছাড়া হাসপাতালগুলোতে ভর্তিই হতে পারছে না করোনা রোগীরা। আবার ভর্তি হলেও কোনো ধরনের চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। ফলে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে প্রচুর মানুষ। ফলে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হওয়া মানুষের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। এরই মধ্যে তা হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের দাবি, দেশে ভাইরাসটিতে মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম (১ দশমিক ৩৪ শতাংশ)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button