রোহিঙ্গারা বলছে, ‘ঘর ছোট, ভাসানচরে থাকবো কিভাবে?’

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভাসানচর দেখে ফিরে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী দলের সদস্যরা সেখানকার সার্বিক অবকাঠামোকে ভালো বললেও থাকার ঘরের আকার নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন। তাদের মতে, ওই ঘরে দুই-তিন জনের বেশি থাকা সম্ভব নয়।

তাদের কথা, ‘‘আমরা সাত-আট জনের একটি পরিবার সেখানে গিয়ে কিভাবে থাকবো? আর সেখানে গিয়ে থাকলেই বোঝা যাবে বাস্তব পরিস্থিতি কী।’’ তাদের কেউই এখনো ভাসানচরে গিয়ে থাকার পক্ষে মত দেননি। তারা বলছেন, ‘‘পরিবারসহ সবার সঙ্গে কথা বলে তারপর দেখা যাবে। এই নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে নানা মত আছে। নানামুখী চাপও আছে।’’

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেছেন, ‘‘যারা ভাসানচর দেখে এসেছেন, তাদের কেউ কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের মধ্যে ভিন্নমতও আছে।’’

রোহিঙ্গাদের দুই নারীসহ ৪০ সদস্যের একটি দলকে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর। ৮ সেপ্টেম্বর তারা ফিরে আসেন। নৌবাহিনী ও শরণার্থী কমিশনের তত্ত্বাবধানে সেখানকার অবস্থা দেখাতে তাদের সেখানে নেয়া হয়।

ভাসানচর ঘুরে আসা মোহাম্মদ নূর বলেন, ‘‘সেখানে অনেক কিছুই আছে। স্কুল, সাইক্লোন সেন্টার, অফিস। কিন্তু আটটি পরিবারের জন্য একসাথে যে থাকার ঘর করা হয়েছে তা অনেক ছোট। প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি রুম। আট ফুট বাই নয় ফুট। তাতে দুই-তিন জনের বেশি থাকা সম্ভব নয়। আমরা কী করে ছয়-সাত সদস্যের একটি পরিবার ওই একটি রুমে থাকবো?’’ তার দাবি, ‘‘ভাসানচরের চেয়ে কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে থাকার ঘর বড়। এখানে সুবিধা বেশি।’’

ভাসানচরে যাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি তিনি। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জনাবেন। কবে আলাপ-আলোচনা করবেন তারও ঠিক নেই। আরো দু-একটি ক্যাম্পের যারা ভাসানচরে গিয়েছেন, তাদের ফোন করে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। তাদের কথা বলতে নিষেধ করা হচ্ছে৷ তবে নিজে কোনো হুমকি পাননি বলে জানান মোহাম্মদ নূর।

ভাসানচর ঘুরে আসা মোহাম্মদ মোস্তফাও একই কথা বলেন, ‘‘থাকার ঘর ছোট। তবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভালোই আছে।’’ কিন্তু ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে তিনিও কোনো মতামত জানাননি। তারও একই কথা, ‘‘সবার সঙ্গে কথা বলি। দেখি তারা কী বলেন।’’

ভাসানচর ঘুরে আসা হাফিজুর রহমান সেখানকার রাস্তাঘাট, স্থাপনা, পুকুর এগুলোর বর্ণনা দেন। কিন্তু সেখানে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘যা দেখেছি তাতে ভালোই মনে হয়ছে। কিন্তু সবাই সেটা বুঝতে চায় না। তাই এখন সবার সাথে বসে যে সিদ্ধান্ত হয় তা-ই হবে।’’

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভাসানচরের অবস্থান। সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে৷ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে সেখানে।

শরণার্থী কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা নিজ চোখে দেখে আসুক সরকার তাদের যেখানে থাকতে দিতে চায় সেই জায়গাটি কেমন। তারাই নিজ চোখে দেখে সিদ্ধান্ত নিক। আমাদের কাছে ভাসানচর দেখে তাদের কেউ কেউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ নেগেটিভও আছেন। এখন তারা তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলুক। তারপর সিদ্ধান্ত নিক। আমরা তো কাউকে জোর করে পাঠাবো না।’’

‘‘তবে তাদের কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছে বলে শুনেছি। এটা হতে পারে। কারণ, তাদের মধ্যে নানা মত ও নানা গ্রুপ আছে,’’ বলেন শরণার্থী কমিশনার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো, রোহিঙ্গাদের যত জন ভাসানচরে যেতে চায়, তাদের সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা করা। যে দলটি ভাসানচরে গিয়েছিল, তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এখন তাদের সঙ্গে বসা হবে। বিস্তারিত কথা হবে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (ট্রিপল আরসি), পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button