মাইজভাণ্ডারী সোহেলকে জবাই করে হত্যায় জড়িত আইএসের সুমনসহ ৪ জঙ্গির ফের রিমান্ড
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীর পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার নব্য জেএমবির স্লিপার সেলের চার সদস্যের ফের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেপ্তারের পর চার জঙ্গি পল্টনে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার পাশাপাশি শ্রীপুরের বরমী এলাকায় জাদুবিদ্যার চর্চাকারী (মাইজভাণ্ডারী) সোহেল রানাকে জবাই করে হত্যার কথাও স্বীকার করে।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের রিমান্ড শেষে চার আসামিকে আদালতে হাজির করে ফের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউিনট (সিটিটিসি) এর পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল নজরুল।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডল রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- শ্রীপুর উপজেলার মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন (২৪), আল আমীন ওরফে আবু জিয়াদ (২৬), মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে রোকন ওরফে আবু তারিক (২৪) ও সারোয়ার হোসেন রাহাত (২৩)।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা গাজীপুর কেন্দ্রীক সেলটির সদস্যদের শনাক্তের চেষ্টা করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরা আজিমপুর থেকে মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রহমান, আল আমীন ওরফে আবু জিয়াদ, মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে রোকন ওরফে আবু তারিক ও সারোয়ার রহমান রাহাতকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালত তাদের প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তারের পর চার জঙ্গি পল্টনে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার পাশাপাশি শ্রীপুরের বরমী এলাকায় জাদুবিদ্যার চর্চাকারী (মাইজভাণ্ডারী) সোহেল রানাকে জবাই করে হত্যার কথাও স্বীকার করে।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া চার জঙ্গি পল্টনের বোমা বিস্ফোরণ ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’ আইএসের দায় স্বীকার করা জাদুবিদ্যার চর্চাকারী (মাইজভাণ্ডারী) সোহেল হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাদুবিদ্যার চর্চাকারী (মাইজভাণ্ডারী) সোহেল রানাকে হত্যার বিষয়েও জঙ্গিরা কিছু তথ্য দিয়েছে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন জানান, আল-আমীন, রোকন ও রাহাত তার মাধ্যমেই নব্য জেএমবিতে সম্পৃক্ত হয়। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাদের কোনও একটি ‘কাজ’ করে দেখানোর দায়িত্ব ছিল। নাইমুজ্জামানের নির্দেশনা মতে তারা টার্গেট ফিক্সড করতে গিয়ে বরমী বাজারের মাইজভাণ্ডারী সোহেল রানাকে টার্গেট করে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে (৩১ শে জুলাই, ২০২০) সন্ধ্যায় তারা বরমী বাজার থেকে সোহেল রানাকে কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে পাশের একটি ইটভাটায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সোহেল রানাকে আটকে রেখে বিষয়টি সামরিক শাখার প্রধান নাইমুজ্জামানকে জানায়। নাইমুজ্জামান তাকে দ্রুত ‘কাজ’ অর্থাৎ জবাই করে হত্যা করতে বলে।
মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা প্রথমে হত্যার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। এদিকে নির্দেশনা মতো জিলহজ মাসের ১০ তারিখও অতিক্রম হয়ে যাচ্ছিল। রাতে তারা একবার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে চেয়েছিল সোহেলকে। কিন্তু সোহেল শরবত খেতে না চাওয়ায় তার হাত-পা বেঁধে কিছুক্ষণ ফেলে রাখা হয়। পরে মামুন নিজ হাতে সোহেলকে জবাই করে হত্যা করে। পুরো বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করে নাইমুজ্জামানের কাছে পাঠায়। লাশটির পেট কেটে নাড়ি-ভুরি বের করে শরীরের সঙ্গে ইট বেঁধে বস্তায় ভরে। সকালে একটি নৌকায় করে কাপাসিয়া ব্রিজের কাছে নদীতে ফেলে দেয়।
পল্টনে বোমা বিস্ফোরণ ও মাইজভাণ্ডারী সোহেল হত্যার সঙ্গে জড়িত মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলার সন্ধান পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটতরাজ ও অস্ত্র মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শ্রীপুরের বরমী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করে মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে হঠাৎ একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বিস্ফোরণ স্থল থেকে ২০০ গজ দূরে পল্টন থানা পুলিশের একটি চেকপোস্ট ছিলো। ওই ঘটনায় পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
আরো জানতে…….
শ্রীপুরের বরমীতে মাইজভাণ্ডারী সোহেলকে জবাই করে আইএসের জঙ্গি নেতা সুমন!