তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ পেঁয়াজে ৫০০ রোগীর রান্না: লুট ৭ কোটি টাকা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নানা কৌশলে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে গাজীপুুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে ভর্তি হওয়া এক রোগীর জন্য দৈনিক ১২০ টাকা বরাদ্দ হলেও তাদের ঠিকমতো খাবার না দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ৫০০ রোগীর জন্য মাত্র ৩ রসুন, ৫ পেঁয়াজ আর ২৫০ গ্রাম আদা দিয়ে মাংস রান্নার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রোগীদের পথ্য সরবরাহ না করেই ৭ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই অর্থবছরে সরকারি হাসপাতালটি প্রায় ১২৮ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের অধীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অডিট অধিদপ্তরের অডিট দল। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অডিটের কয়েকটি আপত্তিতে বলা হয়, ব্লাড ব্যাংকের দীর্ঘদিন আগের দাবিদারহীন ৪ কোটি ৪২ লাখ ৪১ হাজার

টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত শয্যার রোগীর পথ্য সরবরাহ দেখিয়ে ৭ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন দুর্নীতিবাজরা। বিভিন্ন বিভাগে ২৪ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরও চালু না করায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পরিশোধিত বিলের ওপর নির্ধারিত হার অপেক্ষা কম হারে আয়কর কর্তন করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩২ টাকা। বাজেট বরাদ্দ অপেক্ষা আসবাবপত্র খাতে অতিরিক্ত ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ খাতে সম্মানী বাবদ পরিশোধিত টাকার ওপর রাজস্ব স্ট্যাম্প সংযুক্ত না করায় রাজস্ব ক্ষতি ১৬ হাজার ২০০ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ উপেক্ষা করে মুদ্রণ, লেখার সামগ্রী ও প্রকাশনা অধিদপ্তর কর্তৃক নাদাবি সনদ ব্যতীত ফটোকপিয়ার কিনে ৩ লাখ টাকা অপচয় করা হয়েছে। ঠিকাদারকে অতিরিক্ত দামে পথ্য বিল দিয়ে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১১৪ টাকার দুর্নীতি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ই-টেন্ডারিং না করেই অনিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার টাকা।

রিপোর্টে বলা হয়, বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরও চালু না করায় ২৪ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ৫৮ লাখ টাকার ইকো কালার ডপলার মেশিনের ইউজার ফি আদায় না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ সাড়ে ৪৮ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই অনৈতিকভাবে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন, উৎসবভাতা ও অন্যান্য ভাতা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ২ হাজার ২৫২ টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ প্রদেয় অর্থ যাচাই করা হয়নি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যাচাই ছাড়াই মালামাল সরবরাহ করে ১ কোটি ১২ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। জরুরি বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি টিকিট সরবরাহ করায় ৯৫ লাখ ৯২০ টাকা রাজস্ব ক্ষতির কথা বলছে অডিট রিপোর্ট। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার ভারী যন্ত্রপাতি আনা হলেও ইউজার ফি আদায় না করায় হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা।

অডিট অধিদপ্তরের চৌকস কর্মকর্তাদের রিপোর্টে বলা হয়, ১ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার ৬৮৯ টাকার পথ্য বিল দেখানো হলেও রোগীদের ঠিকমতো পথ্য সরবরাহ করেনি দায়িত্বশীলরা। অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কম দেখিয়ে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বিদেশি চিকিৎসাসামগ্রী নিতে কান্ট্রি অরিজিন নিশ্চিত হওয়া ব্যতীত অনিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। হাসপাতালের অকেজো মালামাল বিক্রি না করায় ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৭৬৪ টাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৯ টাকা ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকটি সব সময়ই উপেক্ষিত থাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অডিট অধিদপ্তর পরিচালিত অডিট আপত্তির বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা।

 

 

সূত্র: আমাদের সময়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button