২০২০ সালে বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ হয়নি: বিপুলসংখ্যক ভোটার বাদ পড়ার শঙ্কা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই ২০২০ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ জানুয়ারি সারা দেশে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই খসড়ার ওপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে আগামী ২ মার্চ।

২০১৯ সালে যেসব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে গত ১ জানুয়ারি যারা ভোটার যোগ্য হয়েছে তাদের নাম থাকছে এ ভোটার তালিকায়। ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বিধান রয়েছে। প্রসঙ্গত বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছেন কমবেশি ১১ কোটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কয়েকটি জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করায় বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে অনেক মৃত ভোটারও থেকে যাবেন ভোটার তালিকায়। তারা বলেন, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন মৃত নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।

২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকা থেকে এসব নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ১৮ বছরের কম বয়সীদের আগাম তথ্য নেওয়া হয়। কিন্তু কারা মারা যাবেন তাদের আগাম তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাবেই- এটাই স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, আইনি বিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ যোগ্য হওয়ার পরও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েন, তাহলে কীভাবে তাদের তালিকাভুক্তি করা হবে সে বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এর আগে একই সঙ্গে তিন বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওইদিনই ভোটার দিবস হিসেবে উদযাপন করে থাকে ইসি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার সীমিত আয়োজনে ভোটার দিবস আয়োজন করা হচ্ছে। দিবসটিতে মিছিল ও জনসমাগম হয় এমন কর্মসূচি রাখা হচ্ছে না। তবে উপজেলা ও থানা, জেলা, আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে আলোকসজ্জা করা হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটানো হবে।

আরও জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে ১৬ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৯৬ লাখ নাগরিকের তথ্য পেয়েছিল ইসি। এর মধ্যে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১ জনকে ভোটার তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাকি প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ নাগরিকের তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে জমা রয়েছে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন নাগরিকদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। এ তালিকা আগামী ১৭ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকার ওপর কারও আপত্তি বা সংশোধনী থাকলে তা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জানানো যাবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওইসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। ২ মার্চ ভোটার দিবসে চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিধান রয়েছে। হালনাগাদের সময়ে ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছেন এমন নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা, মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেছেন এমন নাগরিকদের তথ্য সংশোধনের বিধান রয়েছে। বিধিমালায় কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তারও বর্ণনা রয়েছে।

কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের বছর ২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। যদিও আইনের ১১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, আইনে উল্লেখিত পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা না হলে এর বৈধতা ও ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন্ন হবে না।

ইসির একজন উপসচিব নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

ওই তালিকায় থাকা যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। আর যারা বাদ পড়বেন তারা সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন।

 

সূত্র: যুগান্তর

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button