রোজাদারকে আল্লাহ যেসব পুরস্কার দেবেন

গাজীপুর কণ্ঠ, ধর্ম ডেস্ক : রমজান পাপ থেকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। এ মাসে আমরা অন্তরকে যতবেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব ততবেশি বাস্তব জীবন ও পরকালে উপকৃত হব।

বান্দাহ কর্তৃক আল্লাহকে খুশি করার নানান মাধ্যম রয়েছে যেমন- নামাজ, হজ ,যাকাত আদায়। এদের মধ্যে সিয়াম হল অন্যতম একটি মাধ্যম। যে মাধ্যমটির মধ্যে ধনী-গরিব কারোরই লোক দেখানোর বিন্দু মাত্র কারো আগ্রহ নেই।

সে কারণেই সিয়াম বা রোজার বিষয়ে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসীতে বলেন, ইবনে আদম (মানুষের) প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য আর সিয়াম এর ব্যতিক্রম, এটি আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৭৬০]

অত্র হাদিসের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, পৃথিবিতে যত ধরনের নেক আমল রয়েছে তার মধ্যে রোজা পালনের গুরুত্ব অশেষ।

আহলে সুফফার অন্যতম সদস্য, সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে অতি উত্তম আমলের নির্দেশ দিন, জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আলাইকা বিসসাওম অর্থাৎ তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদার আর কোন আমল নেই।

সহীহ মুসলিমের এক হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, `রোজা ঢালস্বরুপ। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে নিজেকে বিরত রাখে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায়, তবে তাকে যেন সে বলে দেয় আমি রোজাদার’। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৫৫১]

অপর হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এক্ষেত্রে সিয়ামা তথা রোজার বিষয়টা ভিন্ন। কেননা এটি শুধু আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমি নিজেই দিব।

এখন বিষয় হচ্ছে, রোজা পালনকারীকে আল্লাহ কী পরিমাণ সওয়াব দিবেন? জবাবে অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আওযায়ী (র) বলেন, রোজা পালনকারীকে আল্লাহ যে উত্তম প্রতিদান দিবেন তা ‍ওজন বা মাপা হবে না।

ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস, হাদিসের সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ সহীহ বুখারি’তে বলা হয়েছে, সিয়াম পালনকারী আমার জন্যই পানাহার ও যৌনতা পরিহার করে।

সুতরাং নামাজ, হজ, যাকাতসহ অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকলেও রোজা পালনে মোটেও এমন ভাবনা কখনই আসে না। যেকারনে সিয়াম পালনে অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী থেকে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতার বিষয়টি নির্ভেজাল থাকে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা রয়েছে। কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদার সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন বলা হবে, সিয়াম পালনকারী কোথায়? তখন তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তাদের প্রবেশের পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যে কারণে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

রোজা পরকালে এমনভাবে সুপারিশ করে বলবে, হে প্রতিপালক, আমি দিনে তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে হে প্রতিপালক, আমি তাকে রাতে নিদ্রা যেতে দেইনি তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, তখন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৬৬২৬]

সবশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আমরা যেন সুদ, ঘুষ, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা মামলা, মাতা-পিতার সাথে দুর্ব্যবহার, গিবত, চোগলখোরি, ধোঁকাবাজি ও যাবতীয় পণ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো থেকে নিজেদের বিরত রেখে রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করে রমজানের সবগুলো রোজা রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন। আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button