যে কারণে নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা সম্প্রসারণ ও ভোটার সংখ্যার সুষম বন্টনের মাধ্যমে সীমানা পুনঃনির্ধারণের আবেদন করেছেন স্থানীয় তিন ওয়ার্ডের বেশকিছু ভোটার।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আর এ কারণেই আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে জয় পেয়েছিলেন আব্দুল কাদির মিয়া। পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল নির্বাচিত প্রার্থীদের নামের গেজেট প্রকাশ হলে কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এরপর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। পরে গত বছরের ২০ অক্টোবর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানিত হলে আওয়ামী লীগ মনোনীত অলিউল ইসলাম অলি নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়। ২ নভেম্বর নির্বাচিত প্রার্থীর নামের গেজেট প্রকাশ হয়।

এদিকে এর ”তিন মাস না পেরোতেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে সীমানা পুন:নির্ধারণের আবেদন করে বসেন স্থানীয় কিছু ভোটার। একসঙ্গে মিলে তিন ওয়ার্ডের ভোটারা এক কাগজে সীমানা পুন:নির্ধারণ আবেদন করে। যা থেকেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়া নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।”

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনের ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে, “স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের অন্তর্গত বিরুয়া মৌজাস্থা নলছাটা এলাকাকে নাগরী ইউনিয়নের সীমানায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নাগরীর সীমানা সম্প্রসারণ করে ও নাগরী ইউনিয়নের বিলুপ্ত প্রায় ৭ নং ওয়ার্ড এবং রাথুরা (৪ নং ওয়ার্ড), পানজোড়া (৫ নং ওয়ার্ড) এর ভোটার সংখ্যা সুষম বন্টনের জন্য সীমানা পুনঃনির্ধারণ প্রসঙ্গে।”

এক কাগজে করা আবেদনের বিবরণে বলা হয়েছে,

এক, “আমরা কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের অন্তর্গত ‘বিরুয়া’ মৌজাস্থিত নলছাটা গ্রামের বাসিন্দা হওয়া সত্বেও ৯৫% ভোট বিরুয়া কেন্দ্রে প্রধান করে এবং ৫% ভোট বাড়ীয়া ইউনিয়নের বড়কয়ের মৌজার বড়কয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রধান করতে হয়। যাহার ভোট কেন্দ্রের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার, পরিষদের দুরত্ব ৮ কিলোমিটার এবং থানার দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার। অন্যদিকে নলছাটা (বিরুয়া) মৌজার ভোট কেন্দ্রের দুরত্ব ১০০ গজ, ইউনিয়ন পরিষদের দুরত্ব ১ কিলোমিটার এবং থানার দূরত্ব ২ কিলোমিটার। যাহা উক্ত এলাকার ভোটারদের অতিরিক্ত অর্থের অপচয়, সময় নষ্ট এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশাল হয়রানির স্বীকার হতে হয়।”

দুই, “অন্যদিকে ৭নং ওয়ার্ডে মোট ৬ টি গ্রাম ছিল, যার মধ্যে ৫ টি গ্রাম অধিগ্রহণকৃত এলাকার আওতাভুক্ত হয়ে বর্তমানে পূর্বাচলে উপ-শহরে পরিণত হয়েছে। উক্ত অঞ্চলে বসবাসরত জনসাধারণ অধিগ্রহণকৃত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে বিধায় বর্তমানে ওই অঞ্চলটি জনমানবহীন এবং সে স্থানে পূর্বাচল উপ-শহর উন্নয়নের কাজ চলছে। ৭নং ওয়ার্ডের ৬ গ্রামে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩০ জন হলেও বর্তমানে ১ টি গ্রাম বিদ্যমান থাকায় ভোটার সংখ্যা ১৭৫ জন, যা উক্ত গ্রামে বসবাস করে। ছিটকে পড়া এই বিশাল ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচুর অর্থের খরচ করতে হয়। যা ভোটার এবং প্রার্থীদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত।”

তিন, “পক্ষান্তরে রথুরা (৪নং ওয়ার্ড) এর ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৩৮ জন এবং জনসংখ্যা ৪ হাজার ৭৭২ জন। কিন্তু পার্বতী ওয়ার্ড পানজোড়া (৫নং ওয়ার্ড) এর ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৩৬ জন এবং জনসংখ্যা ৯ হাজার ৪৭০ জন, যা কোন অবস্থাতেই আইন  সম্মত নয়। উপরোক্ত অবস্থায় নাগরী ইউনিয়নের সেবামূলক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়নের ওয়ার্ড সমূহ পূণবিবেচনা ও পুন:নির্ধারণ করা আবশ্যক।”

আবেদনে যা নিবেদন করেছে,

“উপরোক্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নাগরী ইউনিয়নের নলছাটা এলাকার জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আগামী নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বেই নাগরী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নাগরী ইউনিয়নকে সম্প্রসারণ করে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে ওয়ার্ড সমূহের সীমানা পুন নির্ধারণ পূণ বিনাস করে নাগরী ইউনিয়নের নাগরিকদের বিভিন্নমুখী সেবা নিশ্চিত করিতে আজ্ঞা হয়।”

আবেদনে বিরুয়া মৌজায় নলছাটা এলাকায় জনগণের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন মৃত নরেশ দাসের ছেলে রতন দাস, ৭ নং ওয়ার্ডের জনগণের পক্ষে নুর মোহাম্মদের ছেলে কবির মিয়া এবং ৪ নং ওয়ার্ডের পক্ষে এমরান নামে এক ব্যক্তি।

আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে যা দাখিল করেছে,

”এলাকার ভোটারদের স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ টি ওয়ার্ডের মানচিত্র, আবেদনকৃত ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা, প্রতি ওয়ার্ড ভিত্তিক  চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, জন্মনিবন্ধন অনুসারে ওয়ার্ড ভিত্তিক জনগণের সংখ্যা সম্বলিত তথ্য, নাগরী ইউনিয়নের ৩১ টি মৌজা বিশিষ্ট তালিকা এবং বিরুয়া মৌজার আরএস এবং এসএ নকশা।”

”স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯” অনুযায়ী সীমানা পুন:নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে কি বলা হয়েছে এবং এই আবেদনের অসংগতি নিয়ে থাকছে দ্বিতীয় পর্বে।

 

আরো জানতে….

নাগরী উপনির্বাচন: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অলি ১২ হাজার ৭৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী

নাগরী উপনির্বাচন: ‘রাতে সিল মারা ঠেকাতে’ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোরে, পাঁচ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ

নাগরী উপনির্বাচন: তিন দিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নাগরী উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার তিন নেতা

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আটজন

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ২০ অক্টোবর

নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়ার ইন্তেকাল

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button