‘জয়যাত্রা টেলিভিশন’র মাধ্যমে প্রতারণা: হেলেনার ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের যে দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও ‘জয়যাত্রা টেলিভিশন’র মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, জয়যাত্রা টেলিভিশনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারা কী কী অপকর্ম করেছেন।

মঙ্গলবার (৩ জুলাই) দুপুরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানা যায়।

এর আগে সকালে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে হেলেনার অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন এবং সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হেলেনাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার প্রতারণা কার্যক্রমের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্যও দেন হেলেনা। এরই ধারাবাহিকতায় তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হাজেরা খাতুন (৪০) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এতবার পুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী। আর সানাউল্ল্যাহ নূরী (৪৭) গাজীপুরের সামন্তপুর এলাকার মৃত শেখ মঈন উদ্দিনের ছেলে। তাদের কাছ থেকে দুইটি ল্যাপটপ ও দুইটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।

হাজেরা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি হেলেনার মালিকানাধীন একটি গার্মেন্টসে অ্যাডমিন হিসেবে চাকরি নেন। এর সুবাধে তিনি হেলেনার আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। পরে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। এরই ধারাবাহকতায় তিনি জয়যাত্রা টেলিভিশনের শুরু থেকেই জিএম হিসেবে দায়িত্ব পান। এক্ষেত্রে হাজেরাই মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনার আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন।

হাজেরা আরও জানান, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। যার ফ্রিকুয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। এর জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হত। এই টাকা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে সরবরাহ করা হত।

এ টিভি বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচারিত হয়ে আসছিল। রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে একে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যাতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রতিনিধি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় দেওয়া হত। এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হত।

হাজেরা এও জানিয়েছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে তিনি নিজ প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতেন হেলেনা।

জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে হাজেরা জানান, এ ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফটাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছেন। যাদের কাছ থেকে সদস্য পদ বাবদ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যার খুব সামান্য মানবিক কাজে ব্যবহার হয়েছে। বাকি অর্থ জয়যাত্রা টিভির মাধ্যমে অপপ্রচার চালাতে ব্যবহার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনার নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় করতেন। প্রতিনিধিদের কেই মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। এছাড়া এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশ জয়যাত্রা টিভিকেও দিতেন। এছাড়া তিনি গাজীপুর ও তদসংলগ্ন এলাকায় অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন। তারা দুইজনের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button