এমপি-পুত্র হত্যা মামলা পূর্ণতদন্তের নির্দেশ: দায়িত্বে পিবিআই

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেআইনিভাবে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে কালীগঞ্জের সাবেক এমপি-পুত্র হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামির নাম বাদদিয়ে গোপনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ উঠার পর এবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ওই মামলা পূর্ণতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জালিয়াতির মাধ্যমে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ নারাজি’র আবেদন করলে আদালত তা আমলে নিয়ে গত মঙ্গলবার (০৯ এপ্রিল) শুনানি শেষে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -৩ এর বিচারক মো: শরিফুল ইসলাম এ নির্দেশ দিয়েছেন।
এ তথ্য জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজীপুর বার কাউন্সিলে সদস্য অ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান।
জালিয়াতির বিষয়ে গত ০৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এবং ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আবু বকর মিয়া এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদি মাসুমা সুলতানা (মুক্তা) নামে ওই ভুক্তভোগী।
{অভিযোগের রেফারেন্স: আইজিপি কমপ্লেইন্টস মনিটরিং সেল, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা (এস-৪২৩)}
২০১৭ সালের ৩০ জুলাই রাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামে বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকানে সাবেক এমপি প্রয়াত মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান ফয়সালকে (৩২) বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড়বোন মাসুমা সুলতানা মুক্তা বাদী হয়ে ১ আগস্ট রাতে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের সাইদুল ইসলাম উরফে মোসলে উদ্দিন মাস্টারের ছেলে মো. তৌহিদুল ইসলাম রিমন(২৭), ২। একই গ্রামের হানিফার ছেলে নওশাদ (৩২),৩। আহসান উদ্দিনের ছেলে মো. হুমায়ুন (৩৫) ও ৪। মুঞ্জুর (৪২), ৫। খঞ্জনা গ্রামের আঃ রহমানের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩২) এবং প্রধান আসামি রিমনের বাবা সাইদুল ইসলাম উরফে মোসলে উদ্দিন মাস্টার (৫৮)।
অপরদিকে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে অভিযোগপত্রে মামলার চার নাম্বার আসামী মুঞ্জুর হোসেন (৩৫) এবং প্রধান আসামি রিমনের বাবা ছয় নাম্বার আসামী সাইদুল ইসলাম উরফে মোসলে উদ্দিন মাস্টারকে (৬২) মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিল পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সৈয়দ আবুল হাশেম বলেছিলেন, আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রের সঙ্গে অবহিত করণ ফরমে যে স্বাক্ষর তা বাদীর নিজেরই। কিন্তু বাদীর স্বাক্ষরিত ফরমটি পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তার রেখে যাওয়া মামলার ডকেটে ছিল।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেছিলেন, বাদীকে একাধিকবার থানায় আসতে বললেও তিনি না আসায় তাকে অবহিত না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর মিয়ার ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোনে একাধীকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তখন তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মামলার বাদী এবং অভিযোগকারী মাসুমা সুলতানা (মুক্তা) বলেন, আমি মামলাটি পূর্ণতদন্ত সহ স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বেআইনিভাবে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহার পূর্বক সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কালীগঞ্জ থানার ওসি আবু বকর মিয়া এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এবং ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
উল্লেখ্য, নিহতের বাবা প্রয়াত মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া ১৯৭৩ সালে কালীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ১৯৭৯ সালে গাজীপুর সাবেক ৩ ও বর্তমান ৫ সংসদীয় কালীগঞ্জ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার ১৯৮৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং সেবারও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে……
এমপি-পুত্র হত্যায় জালিয়াতির অভিযোগ কালীগঞ্জের ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে!