মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের দাবী আদায়ে সহায়তার আশ্বাস দিলেন এমপি চুমকি
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জের মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের দাবীকৃত বকেয়া পাওনা ২’শ কোটি টাকা আদায়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মসলিন কটন মিলস লিঃ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সাথে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ আশ্বাস দেন তিনি।
শ্রমিকদের দাবীকৃত বকেয়া পাওনা আদায়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের জানায়, ”শ্রমিকদের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আছে। বর্তমান মন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, শ্রমিকদের নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বসবো এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবো।”
শনিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় মসলিন কটন মিলস লিঃ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ।
শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল আলম রতন ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ”মসলিন কটন মিলস লিঃ এর ২৮’শ শ্রমিক-কর্মচারীর ইন্স্যুরেন্স, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, বাৎসরিক উৎসব বোনাস, অদ্যাবধি বকেয়া বেতনের দাবীতে মসলিন কটন মিলস লিঃ এর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে গাজীপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি’র সাথে সাক্ষাৎ করেন। সংসদ সদস্যের ঢাকার বাস ভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল আলম রতনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন অরুন, মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন ও আউয়াল।”
”তাঁরা সংসদ সদস্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি শেখ রফিকুল আলম রতন মুসলিন কটন মিলস লিঃ-কে হাত বদল করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করায় সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি’কে ধন্যবাদ জানায়।”
”পরে রফিকুল আলম রতন সংসদ সদস্যের কাছে জানতে চায়, নামমাত্র কিছু সংখ্যক শ্রমিকদের পাওনা টাকার আংশিক টাকা পরিশোধ করা হলেও বাকী শ্রমিকদের পাওনা ২’শ কোটি টাকা ৮ বছর অতিক্রম হলেও এখনো কেন নায্য প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে না? উত্তরে সংসদ সদস্য বলেন ঐ সময়ে মন্ত্রীর সমস্যার কারণে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মন্ত্রীরা টাকা দিতে ভয় পাচ্ছে এবং শ্রমিকদের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যায়নি বিধায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আছে। বর্তমান মন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, আপনাদেরসহ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বসবো এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবো। তবে এই বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে সাক্ষাতের আগে কালীগঞ্জ থানা কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদককে নিয়ে বসেন। আমি মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের নিয়ে বসতে চাই। বসার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করেন।”
”এরপর সংসদ সদস্য কাছে সংগঠনের শ্রমিকদের আংশিক তালিকা দেন শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। এছাড়াও সংসদ সদস্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মসলিন কটন মিলস লিঃ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরা।”
”এ সময় মসলিন কটন মিলস লিঃ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলসহ সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সানাউল্লাহ, আমানউল্লাহ, মোতালেব, লোকমান, রুপক ইসলাম, ইউসুফ, হাজেরা বেগম, জেনি, শেখ আব্দুল মান্নান, জামিল, আনোয়ার হোসেন ও হানিফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।”
উল্লেখ্য: বাংলাদেশের শিল্প অগ্রসরতা তথা বস্ত্র শিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মসলিন কটন মিলস’। ১৯৫২ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার ভাদার্ত্তী গ্রামে স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নয়নাভিরাম স্থানে ১০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপড় কল ‘মসলিন কটন মিল’ পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (পিআইডিসি)।
১৯৫৪ সালে উৎপাদন শুরু হলে স্পিনিং বা সুতা বিভাগে টাকুর সংখ্যা ৪৮ হাজার, বয়ন বিভাগে লুম সংখ্যা ৪৯৬ এবং ডাইং ও ফিনিশিং বিভাগ ছিল। সে সময় ২ হাজার ৮ শ’জন শ্রমিক, ২৭০ জন কর্মচারী এবং ৩৫ জন কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টন পর্যমত্ম সুতা এবং সোয়ালক্ষ মিটার কাপড় উৎপাদিত হত ‘মসলিন কটন মিলে’।
এরপর কয়েক দফা মালিকানা পরিবর্তন হতে হতে সর্বশেষ ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায় মসলিন কটন মিলস। বন্ধের সময় শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা ছিলো প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
২০১৩ সালের ০৩ আগস্ট তৎকালীন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি’র চেষ্টায় ঐতিহ্যবাহী ‘মসলিন কটন মিলস’ ভিন্ন নামে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন মসলিন কটন মিলস উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানাটি ফের চালু করার ঘোষণা দেন তৎকালীন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
হা-মীম গ্রুপের পক্ষে রিফাত গার্মেন্টস ১৩৫ কোটি টাকায় মিলটি তখন কিনে নিয়েছে। বর্তমানে হা-মীম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রূপান্তরিত হয়ে রিফাত গার্মেন্টস পোশাক উৎপাদন করছে ঐতিহ্যবাহী ‘মসলিন কটন মিলসে’।
আরো জানতে……
মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের পাওনা ২০০ কোটি টাকা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন
বস্ত্র শিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মসলিন কটন মিল’