বহিষ্কারে পর এখন ‘মামলা আতঙ্কে’ মেয়র জাহাঙ্গীর আলম!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে ভর করছে মামলা আতঙ্ক। দুদক অভিযান চালাবে, পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ কবে—এমন অজানা আতঙ্ক বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে মেয়র জাহাঙ্গীরের মধ্যেও।

অপরদিকে রোববার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব রটেছে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আটক হয়েছেন বলে। তবে তিনি আটক হননি বলে রাতে নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বাসাতেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন- ‘আমি আটক হইনি, এটা গুজব। গুজবই আমারে খাইলো। আমি বাসাতেই অবস্থান করছি।’

এর আগে সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ আসতে থাকে মেয়র জাহাঙ্গীর আটক হয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই আবার সেই ব্রেকিং নিউজ সরিয়ে নেওয়া হয়।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের হারানো পদ ফিরে পাওয়ার চেয়ে জাহাঙ্গীরের সব চেষ্টা এখন মামলা থেকে রেহাই পাওয়া। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মেয়রের পদ রক্ষায়ও তেমন মনোযোগ নেই তার। জাহাঙ্গীর মনে করছেন, এই পর্যায়ে তার নামে মামলাও দেওয়া হতে পারে। তাই বেশি চেষ্টা করছেন—যাতে মামলা ঠেকানো যায়।

রোববার (২১ নভেম্বর) সারা দিন নিজের আয়কর ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি ও আইনজীবীদের সঙ্গে শলাপরামর্শেই কেটেছে জাহাঙ্গীরের। সম্ভাব্য কোন জায়গাগুলোতে আটকাতে পারে সেই ফাঁকফোকর বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন জাহাঙ্গীর। বাড়ির ভেতরে এসব করেই সময় পার করছেন এই বিতর্কিত মেয়র। সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গেও শলাপরামর্শ করেছেন ঘণ্টা দুয়েক ধরে।

বাড়ির বাউন্ডারির ভেতরে থাকা সিটি করপোরেশনের গাড়ি ও সব মালামাল সিটি করপোরেশন ভবনে স্থানান্তর করতে দেখা গেছে দিনভর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের এক ঠিকাদার বলেন, আশপাশে কাজ চলতো বিধায় সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি ও যন্ত্রাদি মেয়রের বাসার বাউন্ডারিতে রাখা হতো। দুর্নীতি দমন কমিশনের কেউ হঠাৎ বাড়িতে অভিযান চালাতে পারে সন্দেহে মালামালগুলো সিটি করপোরেশনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরের বাড়ির ভেতরে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের খামার দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, মেয়র গত দুই দিন বাড়ি থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বের হননি। তিনি জানান, আমরা সবাই মামলা আতঙ্কে আছি। লোকজনের মুখে শুনি মেয়র স্যারের নামে মামলা হবে। সারা দিন শত শত লোকের ভিড়ে এই বাড়ি গমগম করতো। এখন কারও দেখা নেই।

গত ১৯ নভেম্বরের আগে জাহাঙ্গীর অনুসারীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকতো গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোডের পাশে মেয়র হাউজে। লোকের ভিড়ে গমগম থাকা মেয়রের বাড়িটিতে ২০ নভেম্বর সকাল থেকে চলছে সুনসান নীরবতা।

রোববার (২১ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা মেলেনি এক ডজন মানুষেরও।

বাড়ির মূল ফটকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীও এখন আর নেই। মেয়র হিসেবে পাওয়া প্রটোকলও দেখা যায়নি বাড়ির ভেতরে। যে বাড়িতে প্রায় ৩ বছর ধরে মানুষের ভিড় সামলাতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হতো, বহিষ্কার হওয়ার দুই দিনের মাথায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ও মানুষের ভিড়, কিছুরই অস্তিত্ব মেলেনি। ক্ষমতাধর জাহাঙ্গীরের ওই বাড়িটি এখন সাধারণ একটি বাড়ির মতোই রূপ নিয়েছে।

বাড়ির সামনে দেখা হয় আরিফ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি নিজেকে জাহাঙ্গীরের পরিচিত বলে দাবি করেন। আরিফ বলেন, ৮ বছরের সম্পর্ক মেয়রের সঙ্গে। এমন কোনও দিন ছিল না যেদিন হাজার খানেক মানুষের ভিড় না দেখেছি। গতকাল থেকে লোক কমতে শুরু করেছে, আজকে তো কেনও মানুষই নাই এ বাড়িতে। তিনি বলেন, মেয়র বেকায়দায় পড়েছে তাই লোকেরাও ভুলে গেছে। আরিফের দাবি, এর আগে বাড়িতে ঢুকতে বেগ পেতে হতো। মানুষ আর মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি এখানে।

আরিফ বলেন, সাধারণ মানুষ ও জাহাঙ্গীর অনুসারীরা মনে করছেন, এখানে এলে রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাদেরও মামলা খেতে হতে পারে। সেই আতঙ্কে জাহাঙ্গীর অনুসারীরাও রয়েছেন।

 

আরো জানতে…..

‘জাদুর কাঠির স্পর্শে’ জাহাঙ্গীরের ফুলেফেঁপে ওঠার গল্প!

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button