মেসির জোড়া গোলে উড়ে গেল ইউনাইটেড

গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : আগের ম্যাচে নিজেদের মাঠে বার্সেলোনাকে খোলসে আটকে রেখেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু নিজেদের মাঠে ফিরেই আসল রূপে ধরা দিল কাতালান জায়ান্টরা। প্রতিপক্ষকে নিয়ে সোজা বাংলায় রীতিমত ‘ছেলেখেলা’ করলো। আর এমন অবিস্মরণীয় ম্যাচের নায়ক কে হতে পারে? মেসি ছাড়া আর কে? অসাধারণ জোড়া গোল করে ইউনাইটেডকে ঘরে ফেরার পথ দেখিয়ে দিলেন বার্সার আর্জেন্টাইন জাদুকর।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিনগত রাতে ক্যাম্প ন্যুয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে মেসির একক জাদুর কাছেই হার মানতে বাধ্য হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচের ১৬ আর ২০তম মিনিটে গোল করে একাই ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছেন বার্সা অধিনায়ক। ম্যাচের তৃতীয় গোলটি আসে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফিলিপ্পে কৌতিনহোর পা থেকে। ৩-০ গোলের এই জয়ের পর দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে সেমিফাইনালে পা রেখেছে কাতালানরা।

খেলার ১০ম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। নিজেদের ডি-বক্সে বার্সা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচকে ফাউল করেছিলেন ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ফ্রেড। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন। কিন্তু ভিডিও রেফারির সহায়তা নিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

ইউনাইটেড হয়ত ভেবেছিল রাতটা তাদের হতে চলেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে যে বিশ্বসেরা ফুটবলারটি তখনও খোলস ছেড়ে বের হননি। ১৬তম মিনিটে বের হলেন। আর যে গোলটি করলেন তা চোখে লেগে থাকার মতো।

নিজেদের রক্ষণে খুব বাজে ডিফেন্স করে বল হারান ইউনাইটেড ডিফেন্ডার অ্যাশলে ইয়ং। বল চলে যায় মেসির দখলে আর বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে পুরো বোকা বানিয়ে ডি-বক্সের পথে এগিয়ে যান। পথে স্ম্যালিংয়ের বাধা অতিক্রম করে ডি-বক্সের ঠিক সামনে থেকে বাঁ পায়ের বুলেট গতির শটে ইউনাইটেড গোলরক্ষক দাভিদ দে গিয়াকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন বার্সা ফরোয়ার্ড। একদম নিখুঁত ফিনিশিং যাকে বলে।

দ্বিতীয় গোল পেতে মাত্র ৪ মিনিটের অপেক্ষা। তবে এবারের গোলে মেসির চেয়ে ম্যানইউ গোলরক্ষকের অবদানই বেশি। এবারও ডি-বক্সের ঠিক সামনে থেকে ডান পায়ে নিচু শট নিয়েছিলেন মেসি। শটে গতিও তেমন আহামরি ছিল না। স্প্যানিশ গোলরক্ষক দে গিয়া এমন সহজ শট ঠেকিয়েও ফেলেছিলেন, কিন্তু বল তার হাত ফসকে জালে আশ্রয় নেয়। বার্সার জন্য এটা পুরোই বোনাস। দুই গোলই মেসি ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে করেন। ২০১০ সালে স্টুটগার্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোড়া গোল করেছিলেন মেসি।

চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি আসরে এই নিয়ে ১০ গোল হলো মেসির। ফলে এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভান্ডোভস্কির গোল ৮টি।

প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে অবশ্য আগের ভুলের কিছুটা মাশুল দেন দে গিয়া। মেসির বানিয়ে দেওয়া বল নিয়ন্ত্রণে নেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাঁ পাশে থাকা বার্সা তারকা জর্ডি আলবা এবং সঙ্গে সঙ্গে কাট ব্যাক করে তিনি বল পাঠিয়ে দেন গোলবারের সামনে থাকা সার্জি রবার্তোর কাছে। রবার্তোর শট গোলপোস্টের একদম লাগোয়া অবস্থান থেকে ফিরিয়ে দেন দে গিয়া।

খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ম্যানইউ’র রক্ষণকে বারবার পরীক্ষায় ফেলে দেন মেসি-সুয়ারেজরা। এর ফল আসে ৬১তম মিনিটে। এবার গোলদাতা কৌতিনহো। তবে এই গোলের উৎসও মেসি। তবে ২৫ গজ দূরে থেকে নেওয়া কৌতিনহোর শটটি ছিল দেখার মতো। ইউনাইটেড ডিফেন্ডার স্ম্যালিং তাকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হলে কিছুটা ফাঁকা থেকে দূর পাল্লার শটেই দে গিয়াকে পরাস্ত করেন ব্রাজিলিয়ান। ম্যাচের তিন গোলই ডি-বক্সের বাইরে থেকে!

পুরোটা সময় ইউনাইটেড তারকাদের বড়ই অসহায় মনে হচ্ছিল। আগের ম্যাচে যে দলটি মেসিদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেয়নি, তারাই আজ স্বাভাবিক খেলা খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। রীতিমত অসহায় আত্মসমর্পণ যাকে বলে। কিংবদন্তী কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন গ্যালারিতে বসে দেখলেন তার অবর্তমানে কতটা পথ হারিয়েছে ইংলিশ জায়ান্টরা।

ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে একবার সুযোগ পেয়েছিল ওলে গানার সুলশারের শিষ্যরা। কিন্তু চিলিয়ান ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সিস সানচেজের ডাইভিং হেড দুর্দান্ত দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান।

২০১৫ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের গেরো ছুটালো বার্সা। সেটাই মেসির জাদুতে। আগের লেগে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচেও তার অবদান ছিল মুখ্য। যদিও গোলটি ছিল আত্মঘাতী। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে স্বরূপে ফিরে ইউইনাটেডকে বিদায়ই করে দিলেন বার্সা অধিনায়ক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button