জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমছে অতিথি পাখির আগমন
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় খুলে দেয়া হয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গনের সবুজ আঙিনা। এরই মধ্যে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে শীতের আমেজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শীতের আবহটা একটু ব্যতিক্রম। সবুজ গাছপালা ও নয়নাভিরাম লেকসমৃদ্ধ এ ক্যাম্পাসে শীতের অন্যতম আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ অতিথি পাখি। প্রতিবারের মতো এবারো শীতের শুরুতেই জাবির লেকগুলোয় দেখা মিলেছে অতিথি পাখির। তবে এবার অতিথি পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কম। দর্শনার্থীর উৎপাত, লেকের পাশে খাবারের দোকানের আধিক্য ও লেকগুলোয় অতিরিক্ত কচুরিপানার কারণে পাখির স্বাভাবিক বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাখিবিশেষজ্ঞরা। ফলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আবহাওয়াগত কারণে প্রচণ্ড শীত আর খাদ্য সংকটের কবলে পড়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে অতিথি পাখি ছুটে আসে বাংলাদেশে। এছাড়াও সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, হিমালয় অঞ্চলে শীত ও ভারি তুষারপাতে টিকতে না পেরে পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। শীতের রেশ কেটে গেলেই বসন্তের সময়টিতে এসব পরিযায়ী পাখি আবারো তাদের চিরচেনা ভূমিতে ফিরে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মূলত দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা শুকনো স্থানে বা ডালে থাকে। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে। এদের বেশির ভাগই হাঁসজাতীয়। এরাই দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, কোম্বডাক, পাতারি হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কামপাখি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, বামুনিয়া হাঁস, নর্দার্নপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি পাখিও আসে এই ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৬টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, পরিবহন অফিস ও প্রকৌশল অফিসসংলগ্ন জলাশয়, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের জলাশয় এবং সুইমিংপুল এলাকার জলাশয়ে পরিযায়ী পাখির আধিক্য দেখা যায়। এই জলাশয়গুলো পরিযায়ী পাখির জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়।
ক্যাম্পাসের লেকগুলো ঘুরে দেখা যায়, পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকে হাতেগোনা কয়েকটি পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনের লেকের অবস্থাও একই রকম। সুইমিংসংলগ্ন লেক ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেকে কিছু পাখি দেখা গেছে। তবে এসব পাখি আগে যেসব লেকে গিয়ে বসত সেগুলোতে এখন বসছে না। ফলে দর্শনার্থীরা পাখি দেখতে এসে হতাশ হচ্ছেন।
রমজান আলী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি দেখতে আসি। পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকটাতে আগে প্রচুর পাখি দেখা যেত। কিন্তু এ বছর এখানে কোনো পাখি দেখতে পাচ্ছি না। পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেকেও এ বছর পাখি নেই। আবার ওয়াল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে সবার প্রবেশের অনুমতি নেই। ফলে সেখানে পাখি থাকলেও আমার মতো সাধারণ দর্শনার্থীরা পাখি দেখতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল হাসান বলেন, ওয়াল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেক ও সুইমিংপুলসংলগ্ন লেকটাতে এবার বেশি সংখ্যক পাখির উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে এ বছর তুলনামূলক পাখির সংখ্যা কিছুটা কম।
পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ বলতে গিয়ে তিনি জানান, সুইমিংপুলসংলগ্ন লেকটিতে কচুরিপানা অনেক বড় হয়ে যাওয়ার কারণে পাখিদের স্বতঃস্ফূর্ত বিচরণ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকের পাশে অনেক খাবারের দোকান তৈরি হয়েছে। এসব দোকান থেকে লেকের পানিতে থালাবাসন মাজা হচ্ছে, দর্শনার্থীরা লেকের চারপাশে কোলাহল করছে, গাড়ির হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। ফলে এসব লেকে পাখি যাচ্ছে না। খাবারের দোকান সরানো যায় কিনা সে বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পরিযায়ী পাখির আনাগোনা দেখা যায় ১৯৮৬ সালে। সে বছর শীতে পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেকে অতিথি পাখি এসে আশ্রয় নেয়। এরপর একটা সময় পর্যন্ত ক্রমেই ক্যাম্পাসে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। প্রতি বছরের মতো এবারও পাখিমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে এ মেলা বসবে বলে বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
সূত্র: বণিক বার্তা