ইউক্রেন আক্রমণে ৫০ হাজার সৈন্য হারাতে পারে রাশিয়া: গোয়েন্দাদের নথি ফাঁস

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নথি সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। যেখানে জানা যাচ্ছে যে মস্কো ‘চিকিৎসার জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের পর ৫০ হাজার রুশ সৈন্যকে হয়তো হারাতে পারেন। গোয়েন্দা প্রধানরা বলেছেন যে রাশিয়াকে হয়তো ৫০ হাজার সৈন্যকে হারাতে হতে পারে, ইতিমধ্যেই সেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারে পৌঁছে গেছে। কিয়েভ বর্তমানে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এটা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পুতিন হয়তো সামরিক প্রধানদের ‘রাসায়নিক অস্ত্র’ ব্যবহার করতে এবং ‘হাসপাতাল আক্রমণ’ করার নির্দেশ দিতে পারেন।

অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন দ্য মিররকে বলেছেন: ‘রাশিয়া যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে আমি মোটেও অবাক হব না।’ রাশিয়ার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্লুটনিটস্কি চিকিৎসা সংস্থাগুলিকে মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে অবিলম্বে কার্যক্রমে জড়িত হতে বলেছেন । আইটিভি নিউজের প্রাপ্ত নথি অনুসারে, রাশিয়ান চিকিৎসা সংস্থাগুলিকে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের বিবরণ সম্বলিত একটি তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বেসামরিক কর্মীদেরও মোতায়েন করা যেতে পারে হাসপাতালে।

আইটিভির নিউজ এডিটর এমা বারোজ বলেছেন রাশিয়ার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক জরুরী অবস্থা আসতে চলেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে ট্রমা, ম্যাক্সিলোফেসিয়াল এবং হার্ট বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের পাশাপাশি নার্স, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেটিস্ট এবং রেডিওলজিস্টদের সন্ধান করছে। নথিতে বলা হয়েছে যে নিয়োজিত কর্মীদের ভ্রমণ এবং বাসস্থানের খরচ দেওয়া হবে। একজন সামরিক কর্মকর্তা আইটিভি নিউজকে বলেছেন যে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠিটি প্রমাণ করে যে রাশিয়ানরা ‘এরকম প্রতিরোধ এবং ক্ষতির মাত্রা আশা করেনি’।

কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় ২,৮০০ সেনা, ৮০টি ট্যাঙ্ক, ৫১৬টি সাঁজোয়া যান ১০টি বিমান এবং ৭টি হেলিকপ্টারের ক্ষতি করেছে৷ এস্তোনিয়ার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা প্রধান রিহো টেরাসের মতে, এই ক্ষতি এবং কিয়েভ দখলে ক্রমাগত ব্যর্থতা ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। টেরাস টুইটারে লিখেছেন: ‘পুতিন ক্ষুব্ধ, তিনি ভেবেছিলেন পুরো যুদ্ধটা খুব একটা কঠিন হবে না এবং ১-৪ দিনের মধ্যে সবকিছু হয়ে যাবে। ”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তার গতি কিছুটা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

‘A Reckless Gamble’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে, অধ্যাপক ফ্রিডম্যান এই তত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি লিখেছেন: ‘রাশিয়ান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও তারা যুদ্ধের প্রথম দিনে প্রত্যাশার চেয়ে কম অগ্রগতি হাসিল করেছিল। ইউক্রেনীয়রা একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রদর্শন করেছে এবং আক্রমণকারীদের ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।” এদিকে, ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন রাশিয়ার আক্রমণে ১৯৮ জন নিহত এবং ১০০০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় আহত হয়েছে। ভিক্টর লায়াশকো জানান, নিহতদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে।

হতাহতদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক লোক রয়েছে কিনা তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে ৩৩ শিশুসহ আরও ১,১১৫ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ শনিবার দাবি করেছেন যে মস্কোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের সেনাবাহিনী ৮২১টি ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, ৮৭টি ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। কোনাশেনকভ কতজন ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে তা বলেননি এবং রাশিয়ান পক্ষের কোনো হতাহতের কথা উল্লেখ করেননি।

ইউক্রেনে যুদ্ধের সময়, কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি ইউক্রেনীয় শহর রোববার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের কিছু পরে দুটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য কিভ ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে যে ভাসিলকিভ শহরে একটি তেল ডিপো উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত পূর্ব ইউক্রেনের শহর খারকিভেও একটি গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে গ্যাস পাইপ লাইনটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সাদা মেঘে শহরের আকাশ ভরে যায়।

ইউক্রেনীয় টিভি স্টেশন নেক্সটা তেল ডিপোতে আঘাত হানার মুহুর্তের একটি ক্লিপও শেয়ার করেছে, যেখানে দেখা গেছে জ্বালানীর লাইনটি জ্বলে ওঠার সাথে সাথে অন্ধকার রাতের আকাশকে একটি উজ্জ্বল সাদা আভায় ভরিয়ে দিয়েছিল। রাশিয়া মনে করেছিল যে তারা ইউক্রেনীয় অবকাঠামোর উপর আক্রমণ জোরদার করবে এবং স্থানীয়দের মাথা নত করার চেষ্টা করবে। ভ্যাসিলকিভ বিস্ফোরণ রাশিয়ান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা ট্রিগার করা হয়েছিল – রোববার ভোরে কিয়েভের আকাশকে একটি ভয়ঙ্কর কমলা আভায় পূর্ণ করেছিল।

বিস্ফোরণে কেউ আহত বা নিহত হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভাসিলকিভের মেয়র নাটালিয়া বালাসিনোভিচ ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছেন যে তার শহর এবং এর বিমানঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে। তিনি বলেন: ‘শত্রু চারপাশের সবকিছু ধ্বংস করতে চায়, কিন্তু সে সফল হবে না।’ ভোররাতে ভাসিলকিভ ভারী রুশ বোমা হামলার শিকার হয়েছিল, কারণ রাশিয়ান সৈন্যরা কিয়েভের রাস্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে লড়াই জারি রেখেছিল।

কিয়েভের ২.৯ মিলিয়ন নাগরিকরা আরো সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে পারে, কারণ রাশিয়া বোমাবর্ষণ বাড়াবে এবং ইউক্রেনের মনোবল ধ্বংস করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যবসাকে লক্ষ্যবস্তু করবে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ থাকার জন্য অনেকে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে গেছেন, যদিও পুরুষ এবং মহিলাদের একাংশ রাশিয়ার অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button