জন্মনিবন্ধন জটিলতায় থমকে ইউনিক আইডি প্রকল্প!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়ার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও কাজ হয়নি অর্ধেকও। জন্মনিবন্ধন সনদ জটিলতায় প্রকল্পের কাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় রাখার জন্য ইউনিক আইডি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হলে এই আইডি জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত হবে।
চট্টগ্রাম থেকে এসে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী গত জানুয়ারিতে ঢাকার একটি স্কুলে ভর্তি হয়। সে চট্টগ্রামের স্কুলে থাকাকালীন ইউনিক আইডির জন্য ফরম পূরণ করেছিল। এখন ঢাকার স্কুলও তাকে ইউনিক আইডির ফরম পূরণের জন্য তার অভিভাবককে ডেকেছে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী দুটি স্কুলে কেন ইউনিক আইডির জন্য ফরম পূরণ করবে? প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ঢাকার স্কুল কর্তৃপক্ষ। বরং অভিভাবককে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন দুদিনের মধ্যে ফরম পূরণ করে স্কুলে জমা দেন। ওই অভিভাবক চট্টগ্রামে গিয়ে আগের স্কুলে ইউনিক আইডির যে ফরম দিয়েছিলেন তার খোঁজ নেন। তবে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার আবেদন অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ জন্য কোনো টোকেন, নম্বর কিছুই নেই যে, একজন অভিভাবক বলতে পারবেন তার সন্তানের ইউনিক আইডির ফরম পূরণ করেছেন। এদিকে ঢাকার স্কুলও তাকে চাপ দিচ্ছে ফরম পূরণ করে দিতে। এর সমাধান হয় ইউনিক আইডি প্রকল্প অফিসে যোগাযোগের পর। কিন্তু এর মধ্যেই একজন অভিভাবককে ঢাকা-চট্টগ্রাম দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে।
ইউনিক আইডির তথ্য ফরমে শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে হয়। তার অভিভাবকের (মা, বাবা) জন্মনিবন্ধন সনদও লাগে। এই সনদ নিতেই যত বিপত্তি অভিভাবকদের। মা-বাবার জন্মসনদ অনলাইন ডেটা নেই অজুহাতে জন্মসনদ নতুন করে নিতে হচ্ছে। এর পর সন্তানের আবেদন সম্পন্ন করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়। এ নিয়ে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন অভিভাবকরা। দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করেও মিলছে না সোনার হরিণ জন্মনিবন্ধন সনদ। এই সনদ না হলে হচ্ছে না ইউনিক আইডির আবেদন পূরণ।
ইউনিক আইডি প্রকল্পের জন্য জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীর তথ্য শিক্ষকরা সুনির্দিষ্ট অনলাইনে পূরণ করেন। এ তথ্য যায় জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে। তারা এটি যাচাই-বাছাই করেন। আবার মা-বাবার তথ্য যাচাইয়ের জন্য এ তথ্য যায় নির্বাচন কমিশনে। অর্থাৎ প্রাথমিক তথ্যগুলো দুই দপ্তরের যাচাইয়ের পর একটি ইউনিক আইডি মিলবে। সেটি দেবে জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংসখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ইউনিক আইডি প্রদানের উদ্যোগ নেয় ২০১৮ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। শুরুর দিকে লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মার্চে (মুজিববর্ষে) মাধ্যমিকের ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি নম্বরসংবলিত কার্ড দেওয়া হবে। চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তথ্য পূরণের সময় ছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর তথ্যও অনলাইনে পূরণ করতে পারেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে উপপ্রকল্প পরিচালক ড. নাসির উদ্দিন গনি গত ১৯ মে জানান, মাত্র ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর আবেদন অনলাইনে পূরণ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও এই অবস্থা কেন? জবাবে তিনি বলেন, ইউনিক আইডির জন্য একজন শিক্ষার্থী ও তার মা-বাবারও জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন অনেককেই নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে হচ্ছে। এ জন্য বিলম্ব হচ্ছে।
এই প্রতিবেদক ওই কর্মকর্তার দপ্তরে থাকাকালেই বরিশাল বিভাগের একটি মাদ্রাসা থেকে ফোন আসে। উপপ্রকল্প পরিচালককে মোবাইল ফোনে বলা হয়, ওই মাদ্রাসা ২৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের তথ্য অনলইনে দিতে পেরেছে। বাকিদের জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে বিলম্ব হচ্ছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও ব্যানবেইসের ফরমে তথ্য দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক শামসুল আলম গত বৃহস্পতিবার কথা বলতে অসম্মতি জানান।
জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দিতে ৩৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেয় ব্যানবেইস। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুন মাসে। কিন্তু ইউনিক আইডি প্রদানের সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা বা দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই প্রকল্পের। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে ব্যানবেইস। আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, জন্মনিবন্ধন জটিলতার কারণে ইউনিক আইডি প্রদানের কাজে বিলম্ব হচ্ছে।
ইউনিক আইডির উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনো শিশু জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে তার লেখাপড়া, চাকরি, মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রের তথ্যাগারে সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ রাখা। এই আইডি নম্বর দিয়ে স্কুলে ভর্তি, পরীক্ষায় নিবন্ধন, চাকরির আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি, সরকারি সুযোগ-সুবিধায় নাম অন্তর্ভুক্তিসহ যাবতীয় নাগরিক কাজে ব্যবহৃত হবে ইউনিক আইডি।
সূত্র: আমাদের সময়