বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নেমে এসেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আমদানি দায় পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
ঈদের ছুটির আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৯৯ কোটি ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছিল। তাতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৬ জুলাই রিজার্ভে ছিল ৪১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে গত বছরের ৬ জুলাই এই পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।২০২১ সালের অগাস্টে তা রেকর্ড ৪৮ দশমিক ০৬ ডলারে পৌঁছায়।
করোনাভাইরাসের দাপট কমে এলে অর্থনীতির চাকা গতি পেতে শুরু করে। তাতে আমদানির চাপ বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমদানি দায়ও বাড়তে থাকে।
কিন্তু আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় রপ্তানি ও রেমিটেন্স সেভাবে বাড়েনি। তাতে ডলারের মজুদে টান পড়ে, ভারসাম্য ঠিক রাখতে বাংলাদেশকে টাকার মান কমিয়ে আনতে হয়।
ইতোমধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার পার করেছে। ডলার বাঁচাতে গত এপ্রিল থেকে বিলাস পণ্য আমদানি কেঠিন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন আরোপ করা হয়েছে।
তাতে মে মাসে কিছুটা সুফল পাওয়া যায়। আগের মাসগুলোতে যেখানে ৭ থেকে সাড়ে ৭ বিলয়ন ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছিল, মে মাসে তা ৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়নে নেমে আসে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
বিভিন্ন দেশে থেকে পণ্য ও সেবা আমদানির বিপরীতে গত অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ আমদানি বিল পরিশোধ করেছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের। সেজন্য প্রতি মাসে গড়ে ৬.৮৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে রিজার্ভ থেকে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বৈদেশিক হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ প্রায় ৬ মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারবে।
মঙ্গলবার ব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আর নগদ ডলার কিনতে গ্রাহককে ব্যয় করতে হয়েছে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা। খোলা বাজারে ডলার এখন ৯৯ টাকায়।
রেমিটেন্স আনলে প্রবাসীরা এখন প্রতি ডলারে ৯৭ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন বিভিন্ন ব্যাংকে। এর সঙ্গে রয়েছে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ নগদ প্রনোদনা।