কঠোর নানা চ্যালেঞ্জের মুখে ইরাক ও সিরিয়ায় তুর্কি সেনা অভিযান!

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাক ও সিরিয়ার ভেতরে তুরস্কের সম্ভাব্য নতুন কোনো সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে এই আরব দুই দেশের কঠোর প্রতিরোধের নানা লক্ষণ ফুটে উঠেছে।

সম্প্রতি ইরাকি কুর্দিস্তানের জাখো নামক এলাকায় পর্যটকদের ওপর তুর্কি হামলার ঘটনার পর মুসেল শহরে তুর্কি কনস্যুলেট ভবনের আশপাশে রকেট হামলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাগদাদে তুর্কি দূতাবাসের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ-মিছিল করেছে ইরাকিরা।

ইরাক সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জাখো এলাকায় হামলার বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করে। ইরাকের সংসদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও ওই হামলার ব্যাপারে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং তারাও উত্তর ইরাকে তুর্কি সামরিক হস্তক্ষেপের জবাবে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

অবশ্য তুর্কি সরকার জাখো এলাকায় কামানের গোলা বর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, তুর্কি সরকারের বিরোধী কুর্দি পি কে কে গেরিলা দলই ওই হামলার জন্য দায়ি। এই গেরিলা দলকে মোকাবেলা করতেই তুর্কি সরকার উত্তর ইরাকে সেনা মোতায়েন করেছে বলে দাবি করে আসছে।

কিন্তু ইরাকিরা বলছেন, তুরস্ক তার নিজ ভূমি ব্যবহার করেই কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারে! আসলে কুর্দি গেরিলা দমনের নামে আঙ্কারা ইরাকের গ্যাস-সমৃদ্ধ অঞ্চল সোলায়মানিয়া ও মুসেল-এর ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার বেশ প্রাচীন বা ঐতিহাসিক খাহেশ মেটাতে চায় পর্যায়ক্রমে! এ অঞ্চল থেকে তেল ও গ্যাস পাচারের ঘটনায়ও তুরস্ক ফায়দা লুটছে বলে ইরাকিরা মনে করেন।

উত্তর ইরাকে তুরস্কের ১০০টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং এর মধ্যে ৬০টি ঘাঁটি তুর্কি সরকার নির্মাণ করেছে গত এক বছরে!

এদিকে সিরিয়ার আসাদ সরকার এ পর্যন্ত দেশটিতে তুর্কি হামলা ও সেনা অভিযানের নানা ঘটনায় মোটামুটি নিরব থেকেছে এবং তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু এখন তাকফিরি দমনের কাজ শেষ হওয়ায় সিরিয়ার সরকারি সেনারা এখন পুনর্গঠন ও অবস্থান শক্তিশালী করার কাজ শুরু করেছে। এ অবস্থায় উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি সামরিক অভিযানের কঠোর জবাব দেয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে দামেস্ক।

রাশিয়াও এতকাল সিরিয় ও তুর্কি সরকারের মধ্যে এবং এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কেও ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে। আর তাই এতকাল রাশিয়া সিরিয়ার বাহিনীকে এস থ্রি হানড্রেড ও এস ফোর হানড্রেড বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু এখন ইসরাইল ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভের পক্ষ নেয়ায় মস্কো সিরিয়াকে এইসব সিস্টেম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়াও রাশিয়ায় ইহুদি এজেন্সি বন্ধ করার পদক্ষেপের ফলে মস্কো-তেলআবিব সম্পর্কে নজিরবিহীন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে ইউক্রেন তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর ব্যাপক আঘাত হানায় মস্কো উত্তর সিরিয়ায় সম্ভাব্য তুর্কি হামলায় তার শোধ নেয়ার চেষ্টা করবে বলেই মনে হচ্ছে। ফলে সিরিয়ায় তুর্কি সেনা অভিযানের জন্য তুরস্ককে বেশ মাশুল দিতে হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

মোট কথা আগামীতে ইরাক ও সিরিয়ায় যে কোনো তুর্কি সামরিক অভিযান অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের শিকার হবে দেশ দুটির কেন্দ্রীয় সরকার আগের তুলনায় বেশি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলার কারণে। ফলে তুর্কি সরকার হয়তো আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সংযত থাকতে বাধ্য হবে ইরাক ও সিরিয়ার বিষয়ে। #

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button